মাসুম রেজা। ছবি : শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম।

‘গল্প করতে বসলে বোঝাই যেত না, সেলিম ভাই কত সুপিরিয়র’

সেলিম আল দীনের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে প্রিয়.কম-এর কথা হয় নাট্যচার্যের অন্যতম স্নেহভাজন নাট্য নির্দেশক মাসুম রেজার সঙ্গে।

সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৪৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০৫:০০
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৪৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০৫:০০


মাসুম রেজা। ছবি : শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম।

(প্রিয়.কম) বাংলাদেশের নাট্য ভাবনার প্রবাদ পুরুষ সেলিম আল দীন। হাজার বছরের বাঙালি নাট্য সংস্কৃতির তিনি নিঃসন্দেহে একজন অনুসন্ধানকারী। বাংলাদেশের নাট্যধারায় সেলিম আল দীন তাই এক স্বতন্ত্র নাম। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানে তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার ওপর চালিয়েছেন হাজারও নিরীক্ষা, করেছেন গবেষণা। নাট্যাঙ্গনে তিনি নাট্যাচার্য হিসাবে অধিক পরিচিত।

আগামী ১৪ জানুয়ারি গুণী এ নাট্যকার ও নাট্য গবেষকের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী। তার মৃত্যুদিবস উপলক্ষে আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার আয়োজন করেছে তিন দিনব্যাপী সেলিম আল দীন স্মরণোৎসব। স্মরণোৎসবের প্রথম দিন জাতীয় নাট্যশালা মূল মিলনায়তনে সেলিম আল দীনের ওপর প্রবন্ধ পাঠ করবেন বিশিষ্ট নাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও নাট্য নির্দেশক মাসুম রেজা। সেলিম আল দীনের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে প্রিয়.কম-এর কথা হয় নাট্যচার্যের অন্যতম এ স্নেহভাজন শিষ্যের সঙ্গে।

১২ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া স্মরণোৎসবে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ওপর প্রবন্ধ নিয়ে ব্যস্ত আছেন মাসুম রেজা। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রবন্ধে সেলিম আল দীনের কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাসুম রেজা বলেন, ‘আমার প্রবন্ধের নাম-ই ‘সেলিম আল দীন: আপন নাট্যভূমে প্রায় নিঃসঙ্গ একজন’। সেলিম আল দীন তার নাটক রচনার বাইরেও নাটকের আঙ্গিক, নাটকের ইতিহাস, সংজ্ঞা, রচনা, গবেষণা এবং প্রবর্তন প্রত্যেকটার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। এ বিষয়টা আমি প্রবন্ধে দেখাতে চেয়েছি। যেমন ধরেন তার ‘দ্বৈতাদ্বৈত’ শিল্পতত্ত্ব অথবা ধরা যাক ‘মধ্যযুগীয় বাংলা নাট্য’ এগুলো তো তার গবেষণা বা তার দেওয়া প্রণীত তত্ত্ব। এগুলো যেন বই এর একটা অংশ হয়ে পড়ে আছে, বাইরে এর কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না। অথচ তিনি এগুলো তার বিভিন্ন নাটকে প্রয়োগ করেছেন। সে জায়গা থেকেই আমার এই প্রবন্ধ যে আমরা কতটা সেলিম আল দীনকে ধারণ করতে পারছি।’

সেলিম আল দীনকে নিজের শিল্পগুরু মানেন গুণী এই নাট্যকার। একসঙ্গে অনেক স্মৃতির সুতোয় গেঁথে আছেন তারা। এমন কোনো স্মৃতি আছে যা বারবার তাড়িত করে তাকে? উত্তরে মাসুম রেজা বলেন, এটা বলা বেশ মুশকিল। আমার অনেক অনেক স্মৃতি সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে জুড়ে আছে। তবে তিনি প্রায়ই আমাকে বিভিন্ন ধরনের নাম জিজ্ঞেস করে তাদের ভিজ্যুয়ালাইজ করতে বলতেন। যেমন তিনি একদিন বললেন, নঈমউদ্দিন নামটা শুনলে আমার কী মনে হয়। আমি বললাম, গ্রামের মধ্যবয়সী কোনো কৃষকের ছবি ভেসে ওঠে। তারপর উনি আমাকে বললেন, রাসেল নামটা শুনলে আমার কী মনে হয়। আমি জানালাম, শহুরে কোনো বিশ-বাইশ বছরের তরুণ, যার বাবার হয়তো টাকা-পয়সা আছে। তারপর তিনি আমাকে বললেন, এই যে এক একটা নাম, এগুলো শুনলেই কত কিছু ধারণা করা যায় মানুষ সম্পর্কে। এ রকম অসংখ্য ব্যাপার ছিল তার সঙ্গে।’

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিটা মানুষের আলাদা জীবন দর্শন থাকে; নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনকে ব্যক্তি মানুষ হিসেবে কীভাবে দেখেন মাসুম রেজা? কিংবা ব্যক্তি সেলিম আল দীনকে তিনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন? এর উত্তরে মাসুম রেজা জানান, ব্যক্তি সেলিম আল দীনকে তিনি কখনও দেখার চেষ্টা করেননি। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি সেলিম আল দীনকে অনেকেই অনেকভাবে দেখেন হয়তো। কিন্তু আমার কাছে সেলিম ভাই একজন শিল্পগুরু, আমি তাকে গুরু হিসেবেই দেখেছি। শিল্পের যা কিছু, শুধু তাই-ই আমি তার কাছ থেকে ধারণ করার চেষ্টা করেছি। মানুষ হিসেবে তিনি অত্যন্ত বন্ধুবৎসল ছিলেন। জ্ঞানে-শিক্ষায় তিনি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উঁচু স্থানের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু গল্প করতে বসলে বোঝাই যেত না- সেলিম ভাই কত সুপিরিয়র, কত বড় উচ্চতার মানুষ। তার আরেকটা গুণ ছিল, তিনি যাকে পছন্দ করতেন না, সেটা তিনি তাকে সরাসরি বলে দিতে পারতেন। নাটককে যারা ভালোবাসতেন, নাটক সম্পর্কিত জ্ঞান যারা চর্চা করতেন, তাদেরকে তিনি খুবই পছন্দ করতেন।’

যে কোনো গুণী ব্যক্তির মৃত্যুর পর, তার জন্ম বা মৃত্যুদিবস ছাড়া মিডিয়াগুলোতে আর কোনো খবর থাকে না। মাসুম রেজার কাছে প্রশ্ন ছিল, সেলিম আল দীন নিয়ে কতটুকু চর্চা হচ্ছে বা কতটুকু চর্চা হওয়া উচিত? ১২ জানুয়ারি তার (মাসুম রেজা) প্রবন্ধে এটাই মূল আলোচ্য বিষয় বলে জানান মাসুম রেজা।

মাসুম রেজার কাছে জানতে চাওয়া হয় তার বর্তমান কাজকর্ম সম্পর্কে। বাংলা লোকসাহিত্যের অন্যতম ধারক কাঙাল হরিনাথ নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। এবারের অমর একুশে বইমেলায় এ গবেষণাটি বই আকারে আসতে পারে বলে জানান তিনি। নতুন বছরে ‘চান্নিপশর’ নামে নতুন একটি মঞ্চনাটক নিয়ে মঞ্চে ফিরছেন মাসুম রেজা, নাটকটি লিখলেও নির্দেশনা কে দিচ্ছেন তা এখনও নিশ্চিত না। এ ছাড়া নতুন বছরে চলচ্চিত্রের দুটি নতুন চিত্রনাট্য লিখছেন তিনি। ‘উইপোকা’ নামের চলচ্চিত্র পরিচালনা করবেন ‘ভুবন মাঝি’খ্যাত চলচ্চিত্রকার ফাখরুল আরেফীন খান, অন্য চিত্রনাট্যকে চলচ্চিত্রে রূপ দিবেন নির্মাতা রিয়াজুল রিজু।

প্রিয় বিনোদন/গোরা/টিআর

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...