স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স। ছবি শামসুল হক রিপন।

হ্যান্ডস অন রিভিউ: স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স

বাংলাদেশে এই হ্যান্ডসেটটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৯০০ টাকা। আর আপনি যেকোনো স্যামসাং আউটলেট থেকে এই ফোনটি কিনতে পারবেন।

ফারজানা মাহাবুবা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৪১ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ২১:৩২
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৪১ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ২১:৩২


স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স। ছবি শামসুল হক রিপন।

(প্রিয়.কম) দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং চলতি বছরের জুন মাসে স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স ফোনটি উন্মুক্ত করে। বাজেট সাশ্রয়ী ডিভাইস হিসেবে ফোনটি যথেষ্ট মানসম্মত বলা যায়। বাংলাদেশে এই হ্যান্ডসেটটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৯০০ টাকা। আর আপনি যেকোনো স্যামসাং আউটলেট থেকে এই ফোনটি কিনতে পারবেন। 

প্রথমেই এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই ফোনের স্পেসিফিকেশন

  • ১০৮০X১৯২০ পিক্সেলের ৫.৭ ইঞ্চি ডিসপ্লে
  • ১.৬৯ গিগাহার্টজ অক্টাকোর প্রসেসর
  • ৪ জিবি র‍্যাম এবং ৩২ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ
  • ১৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা এবং ১৩ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা
  • অ্যান্ড্রয়েড ৭.০ অপারেটিং সিস্টেম
  • ৩৩০০ এমএএইচ ব্যাটারি
  • ডুয়েল সিম সুবিধা

ডিজাইন

স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্সের ৫.৭ ইঞ্চি ফুল এইচডি ডিসপ্লে এবং পুরোটাই ফোনটাই মেটাল ইউনিবডি ডিজাইনের কারণে দেখতে চমৎকার লাগে। আপনি এই ফোনের রিয়ার অথবা এজে দৃশ্যমান অ্যান্টিনা লাইন দেখতে পাবেন না। ফোনটির ডান পাশে রয়েছে পাওয়ার বাটন এবং বাম পাশে ভলিউম রকার। এছাড়াও হাইব্রিড সিম ট্রে ছাড়াও মেমোরি কার্ডের জন্য রয়েছে আলাদা স্লট। 

স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স। ছবি: শামসুল হক রিপন। 

স্যামসাং ফোনের ট্র্যাডিশনাল ডিজাইন হিসেবে ফোনের হোম বাটনে রয়েছে এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। আর এই সেন্সরের ফিডব্যাক যথেষ্ট ভালো বলা যায়। ফোনের পেছনের দিকে আপনি পাবেন এলইডি ভিত্তিক স্মার্ট গ্লো বৃত্তাকারের মধ্যে প্রাইমারি ক্যামেরা এবং সিঙ্গেল টোন এলইডি ফ্ল্যাশ। ফ্রন্ট ক্যামেরায়ও রয়েছে সিঙ্গেল টোন ফ্ল্যাশ। 

স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্সের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর রয়েছে হোম বাটনে। ছবি: শামসুল হক রিপন। 

চমৎকার ডিজাইনের এই ফোনের ডিসপ্লেতে ব্যবহার করা হয়নি গরিলা গ্লাস। তাই আপনাকে ডিসপ্লে গ্লাসকে বাহিরের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে অবশ্যই টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করতে হবে। 

স্যামসাং গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্সের এর ফ্রন্ট ক্যামেরা এবং সেন্সর। ছবি: শামসুল হক রিপন।

ডিসপ্লে 

স্যামসাং জে ৭ ম্যাক্স ফোনটিতে প্রতিষ্ঠানের বিখ্যাত অ্যামোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়নি, তার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ৫.৭ ইঞ্চি ফুল এইচডি টিএফটি ডিসপ্লে। তারপরও এই ডিসপ্লেতে ভিডিও উপভোগ অনেক শার্প এবং প্রানবন্ত। আর অ্যামোলেড ডিসপ্লের সাথে জে ৭ ডিসপ্লের পার্থক্য উজ্জ্বলতায়। তবে সূর্যের আলোর নিচে পুরো ব্রাইটনেস থাকলে ফোন নেভিগেট করাটা কষ্টকর হয়ে যায়। 

স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ স্মার্টফোনের ৫.৭  ইঞ্চি ডিসপ্লে। ছবি: শামসুল হক রিপন   

হার্ডওয়্যার এবং পারফরম্যান্স

স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স ফোনের হার্ডওয়্যারে আছে ১.৬ গিগাহার্টজ মিডিয়াটেক অক্টা কোর প্রসেসর। সাথে ৪ জিবি র‍্যাম এবং ৩২ জিবি ইনবিল্ট স্টোরেজ। তবে মাইক্রো এসডি কার্ডের মাধ্যমে এই মেমোরি ২৫৬ গিগাবাইট পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্সের আনতুতু বেঞ্চমার্ক টুলে স্কোর ছিল ৪৪১০৩ যা প্রায় রেডমি ৪ এর স্কোরের কাছাকাছি।  

আনতুতু বেঞ্চমার্কে গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স। 

আর ফোনের হোম বাটনে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি খুব ভালো সাড়া দেয় বলা যায়। ফোনের অন্যান্য কাজ করার সময় এই ফোনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়নি। আর গেমিং রিভিউর কথা বললে বলা যায়, গেমিংয়ের সময় ফোনটি কোন অস্বাভাবিক গরম হয়না বা হঠাৎ করেই থেমে যায়না। 

সফটওয়্যার

স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স ফোনে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েডের সর্বশেষ সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড ন্যুগাট অপারেটিং সিস্টেম।

আর এই ফোনে রয়েছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় ফিচার। যেমন- স্যামসাং সিকিউর ফোল্ডার, ডুয়েল মেসেঞ্জার অ্যাপ। উল্লেখযোগ্য ভাবে বলা যায় এই ফোনের নিরাপত্তার কথা। জে ৭ ম্যাক্স ফোনটিতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নক্স যার ফলে ফোনটি চিপ লেভেল এনক্রিপশন সমর্থণ করে। এছাড়া ফোনটি সর্বশেষ উন্মুক্ত করা সিকিউরিটি প্যাচ সমর্থন করে।

ক্যামেরা

গ্যালাক্সি জে ৭ এর ক্যামেরাকে প্রতিষ্ঠানের প্রথম এআর প্রযুক্তির ক্যামেরা বলা হয়। ফোনের প্রাইমারি ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেল সাথে এফ/১.৭ অ্যাপারচার। আর সেলফি ক্যামেরাও ১৩ মেগাপিক্সেল সাথে এফ/১.৯ অ্যাপারচার। বাজেট সাশ্রয়ী দামের ফোন হিসেবে আপনি এতে অত্যন্ত ভালো ক্যামেরা পাচ্ছেন বলা যায়। আর সিঙ্গেল টোন ফ্ল্যাশের কারণে সেলফি প্রেমীদের বলা যায়, কোন সেলফি অন্ধকারে হবেনা।  

এছাড়া ছবির যেকোনো ছোট অবজেক্টকেও ফোকাস করা যাবে এই ডিভাইসের ক্যামেরায়। আর এতে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার হয়ে ছবিকে আরও নান্দনিক করে তুলবে। 

উদাহরণ হিসেবে গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স ফোনে তোলা কিছু ছবি

গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স ফোনে তোলা ছবি।

গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স ফোনে তোলা ছবি।

গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স ফোনে তোলা ছবি।

গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স ফোনে তোলা ছবি।

এবার আসা যাক ভিডিও নিয়ে। জে ৭ ম্যাক্স ফোনে ৩০এফপিএস এ ফুল এইচডি ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। তবে ইআইএস এবং ওআইএস উভয়ের  স্থিরতার অভাবে ভিডিওগুলি সামান্য স্যাকি বা ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। আর এজন্য আপনি ট্রাইপড ব্যবহার করলে দারুন ভিডিও পেতে পারেন। 

স্যামসাং গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স ফোনের ভিডিও কোয়ালিটি

 

ব্যাটারি 

যেকোন স্মার্টফোনের মূল চালিকা শক্তি এর ব্যাটারি। অনেক ভালো ফিচারও খারাপ ব্যাটারির কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর গ্যালাক্সি জে ৭ ম্যাক্স ফোনের ৩৩০০ এমএএইচ নন রিমুভ্যাবল ব্যাটারি ম্যাক্সিমাম বা ক্যাজুয়াল ব্যবহারে পুরো একদিন চালানো যাবে। আর এই ফোনের ব্যাটারি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। 

স্যামসাং গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্সের একনজরে ভালো এবং খারাপ দিক 

ভালো দিক

  • উন্নত ব্যাটারি লাইফ। যা আপনাকে সারাদিন ব্যবহারে চিন্তামুক্ত রাখবে।
  • ভালো প্রসেসর। ফলে ফোন অধিক ব্যবহারে গরম হয়ে যায়না এবং গেমিং এ ভালো অভিজ্ঞতা দেয়। 
  • হালনাগাদ সফটওয়্যার। অ্যান্ড্রয়েডে ন্যুগাট অপারেটিং সিস্টেম
  • সোশ্যাল ক্যামেরা অর্থাৎ এই ছবি খুব সহজেই এক ক্লিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারবেন আপনি। 

খারাপ দিক

  • চলতি বছরে বেশিরভাগ ফোনে আসা ইউএসবি টাইপ সি নেই এই ফোনে। মাইক্রো ইউএসবি ক্যাবলই এই ফোনের ভরসা। 
  • উল্লেখযোগ্য ফিচার এনএফস (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) নেই। 
  • ফাস্ট চার্জ বা কুইক চার্জ প্রযুক্তি অনুপস্থিত। 
  • ক্যাপাসিটিভ ব্যাকলিট বাটন অনুপস্থিত। ২৫ হাজার ৯০০ টাকার ফোনে এটি না থাকা বড় ধরণের অসুবিধা।
  • কোন রকম গ্লাস প্রোটেকশন নেই। আলাদা টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করতে হবে আপনাকে। 
  • পরিশেষে বাজেট সাশ্রয়ী ফোন হিসেবে স্যামসাং গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স ফোনটি আপনি নিঃসন্দেহে নির্বাচন করতে পারেন। 

প্রিয় টেক/মিজান

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...