ভাইবারে ভাবের আদান-প্রদান। ছবি : সংগৃহীত

'পার্পল ড্রিম'-ভাইবারের ওয়েদার (পর্ব ৪৪)

যদিও ভাইবারের আবহাওয়া সেই সিমলা থেকেই বেশ খারাপ ছিল। একটু-একটু মেঘলা, হালকা বৃষ্টি, সাথে একটু দমকা বাতাস। অবাধ্য ভ্রমণকারীদের এসব সামান্য মেঘলা আকাশ, হালকা বৃষ্টি আর দমকা বাতাসে থেমে গেলে হয় না। এসবকে উপেক্ষা করেই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যেতে হয়। তাই পাহাড়ে চড়া শুরু করেছিলাম।

সজল জাহিদ
লেখক
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:৫৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০২:৩২
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:৫৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০২:৩২


ভাইবারে ভাবের আদান-প্রদান। ছবি : সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) আমি যখনই কোনো ভ্রমণে বের হই তখনই আমার ভাইবারের আকাশ বেশ ভারী হয়ে থাকে। জার্নির শুরু থেকেই ভাইবারের আকাশের নীল থেকে মেঘে ঢেকে গিয়ে একটা থমথমে ভাব বিরাজ করে! কখনো কখনো আবহাওয়ার পূর্বাভাস বড় বড় বিপদ সংকেত দেয়! কিন্তু বড় কোনো ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, হ্যারিকেন ওঠার আগেই ফিরে আসি! যদিও ফিরে আসার পরেও বেশ কিছুদিন নিম্নচাপের দুই বা তিন নাম্বার সংকেত বহাল থাকে, তবুও সাজানো বাগানের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে এমন ঝড় কখনো উঠতে পারে না! কিন্তু এবার...

লাদাখ থেকে শ্রীনগর পৌঁছেছি সন্ধ্যায়। ঝামেলা এড়াতে আর সময় বাঁচাতে আগের বার যে হোটেলে উঠেছিলাম সেখানেই উঠে পড়লাম সবাই। ১০০০ টাকা করে তিন রুম নিয়ে। পরদিন পাগল করা পেহেলগাম যাব। আর তারপর আমার অসহ্য সুখের আরু ভ্যালিতে গিয়ে দুটি দিন চুপচাপ বসে থাকব। তারপর পেহেলগাম থেকে জম্মু গিয়ে, ট্রেনের টিকিট কাটাই আছে, উঠে পড়ব কলকাতার উদ্দেশে-এমনই পরিকল্পনা ছিল।

রুমে পৌঁছে ওয়াইফাই পেতেই, বাসায় যোগাযোগ করার জন্য কানেক্ট হলাম ইন্টারনেটে। দেখলাম ভাইবারে বেশ একটা ঝড়ো হাওয়ার মতো মেসেজ। সেটাতে বাতাস দিয়ে ঝড় কমাবার চেষ্টা করতেই, বুঝতে পারলাম এই ঝড় থামার নয়, সময়ের সাথে সাথে সেটা ঘূর্ণিঝড় থেকে হ্যারিকেন হয়ে নিশ্চিত টর্নেডোতে রূপ নেবে! ভাইবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাস তেমনই! বেশ বড় বিপদ সংকেত! বিপদ সংকেত ৭/৮ থেকে ৯-এ উঠেছে! ১০-এ উঠলহ্যারিকেন বা টর্নেডো উঠলেই সর্বনাশ!

এতদিনের সাজানো বাগান ১০ নাম্বার মহা বিপদ সংকেতে, নিজের কারণে তৈরি হওয়া টর্নেডোতে উড়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তখন দুগুণ কেন, তিনগুণ, চারগুণ, পাঁচগুণ টাকা খরচ করেও সেই আগের মতো বাগান তৈরি করা যাবে না। একই বাগানও আগের মতো করতে গেলে, কোথাও না কোথাও ঠিক খুঁত রয়ে যাবে। হয় ঠিক মতো বীজতলা তৈরি হবে না, নয়তো সঠিক নিড়ানি পড়বে না। অথবা এসব ঠিক থাকলেও ফুলের গাছগুলো আর আগের মতো সেজে উঠবে না বা ফুলগুলো ঠিক আগের মতো ফুটবে না! আর ফুল ফুটলেও, সেই মোহময় গন্ধ পাওয়া নাও যেতে পারে! মোট কথা, সাজানো বাগান আর ঠিক আগের মতো সেজে উঠতে পারে না বা হয়ে ওঠে না।

আবার এই বাগান বাদ দিয়ে নতুন বাগান বানাবেন। তাতে হ্যাপা আরও বেশি। একদম নতুন জমি কেনা। আগাছা পরিষ্কার করা, চারপাশে গাছ লাগিয়ে ছায়া তৈরি করা, জমি তৈরি করা, বীজতলা বানানো, সেচ দেয়া, পরিখা খনন করে পানি জমিয়ে রাখা, ফুলের চারা রোপণ করা, গাছ গজানো, যত্ন করা, নিয়মিত নিড়ানি দেয়া, পানি দিয়ে তাজা রাখা, গাছে কলি আসা, ফুল ফোটানো, তার গন্ধ নেয়া আর মৌমাছির চাক বানিয়ে মধু খাওয়া! সেই অনেক অনেক আর অনেক সময়, সাধনা আর আরাধনার ব্যাপার। ঠিক আগের মতো নাও হতে পারে।

যদিও ভাইবারের আবহাওয়া সেই সিমলা থেকেই বেশ খারাপ ছিল। একটু-একটু মেঘলা, হালকা বৃষ্টি, সাথে একটু দমকা বাতাস। অবাধ্য ভ্রমণকারীদের এসব সামান্য মেঘলা আকাশ, হালকা বৃষ্টি আর দমকা বাতাসে থেমে গেলে হয় না। এসবকে উপেক্ষা করেই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যেতে হয়। তাই পাহাড়ে চড়া শুরু করেছিলাম। লেহ পৌঁছে দেখি ভাইবারের আবহাওয়া বেশ গরম। টানা মেঘলা আবহাওয়া, দমকা বাতাস আর ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে ভাইবারের মেসেজ বক্সজুড়ে! তবে সংকেত তখনো দেয়নি। কিন্তু খারদুংলা, তুরতুক আর নুব্রাভ্যালি হয়ে লেহ ফিরে আবারও নেটে ঢুকেই দেখি ভাইবারে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, বিপদ সংকেত চার-পাঁচে ওঠা-নামা করছে! যেটা কোরবানির দিন রাতেই দুই-তিন ছাড়িয়েছে! নেট ছিল না বলে পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি।

তাই ১০ নম্বরের মহা বিপদ সংকেতে সংসার নামক সাধনার বাগান উড়ে যাবার আগেই ট্রেনের টিকিট অন্য একজনকে দিয়ে কলকাতার বন্ধুকে দিলে পরদিন দুপুরের প্লেনের টিকিট কাটালাম দিগুণের চেয়েও বেশি দামে...! সেটা জানাতেই দেখি বিপদ সংকেত নিচের দিকে নামতে শুরু করল! ভাইবারে পরদিনের প্লেনের টিকিটের কপি পাঠাতেই এক লাফে দেখি বিপদ সংকেত চারে চলে এসেছে! যেটা সকাল হতে হতে ঝড় থেমে গিয়ে সব রকম সিগন্যাল উঠে যাবার সংকেত দিল! কিন্তু আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এও জানা গেল, ঝড় থেমে গেলেও আকাশ বেশ কিছুদিন মেঘলা থাকবে, সাথে হালকা বা মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে!

কিন্তু পরদিন সকালে ঘুম ভেঙে ভাইবার অন করে দেখি ভাইবারের আকাশের মেঘও কেটে গেছে! আকাশ প্রায় নীল! সাদা-সাদা মেঘেদের এদিক-ওদিক উড়ে বেড়ানো! হুট করেই ঝড়-বৃষ্টির আকাশ থেকে একেবারে শরতের ঝরঝরে আর ঝকঝকে ভাইবারের আকাশ! কোনোরকম সংকেতহীন-ভাইবারের আবহাওয়া...!    

 

পার্পল ড্রিমের অন্যান্য পর্ব পড়ুন এখানে। 

 'পার্পল ড্রিম' - পূর্বকথা (পর্ব ১)

 'পার্পল ড্রিম'- দুশ্চিন্তা নিয়ে যাত্রা শুরু (পর্ব ২)

 'পার্পল ড্রিম'- তিস্তা একপ্রেস ও দুধ কুমারীর হাড়ি ভাঙা (পর্ব ৩)

 'পার্পল ড্রিম'- কলকাতার আলুসেদ্ধ গরম ও এক পশলা বৃস্টি (পর্ব ৪)

'পার্পেল ড্রিম'- কালকা মেইলের দিন-রাত্রি (পর্ব ৫)

'পার্পল ড্রিম'- কেন কালকা মেইলে? (পর্ব ৬)

'পার্পল ড্রিম'- স্বপ্নের টয় ট্রেনে (পর্ব ৭)

'পার্পল ড্রিম'-একটি মানবিক গল্প (পর্ব ৮)

 'পার্পল ড্রিম'- সুখের শহর সিমলা (পর্ব ৯)

'পার্পল ড্রিম'- সিমলা-একহাতে সুখ যার অন্য হাতে দুঃখ! (পর্ব ১০)

'পার্পল ড্রিম'- অলস শহর মানালিতে (পর্ব ১১)

 'পার্পল ড্রিম'- হোটেল ও আপেল বিভ্রাট (পর্ব ১২)

'পার্পল ড্রিম'- একটু বৃষ্টি, আর একটু মাতলামির গল্প (পর্ব ১৩)

'পার্পল ড্রিম'- বিয়াসের তীরে আলসেমিতে (পর্ব ১৪)

'পার্পল ড্রিম'-সেদিনও বৃষ্টি (পর্ব ১৫)

'পার্পল ড্রিম'- স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু (পর্ব ১৬)

'পার্পল ড্রিমবিয়াসের উৎপত্তি স্থল ও রোথাং পাসের রোমাঞ্চ (পর্ব ১৭)

'পার্পল ড্রিম'-কেলং-জিসপা না সারচু? (পর্ব ১৮)

 'পার্পল ড্রিম'-সারচুর সোনা পাহাড় ও নির্ঘুম রাত (পর্ব ১৯)

'পার্পল ড্রিম'-পাঙএকটি জনপদের গল্প (পর্ব ২০)

'পার্পল ড্রিম'- রুক্ষ ভালোবাসার শহর লেহ (পর্ব ২১)

'পার্পল ড্রিম'- পার্পল ড্রিম এর মামা বাড়ি (পর্ব ২২) 

'পার্পল ড্রিম'- পার্পল ড্রিম এর শ্বশুরবাড়ি (পর্ব ২৩)

'পার্পল ড্রিম'- ভ্রমণে নদীর আকর্ষণ! (পর্ব ২৪) 

'পার্পল ড্রিম'- ম্যাজিক্যাল ম্যাগনেটিক হিল! (পর্ব ২৫)

'পার্পল ড্রিম' সঙ্গম-ইন্দাস ও জান্সকারের! (পর্ব ২৬)

'পার্পল ড্রিম' স্বর্গের বিছানা থেকে শুভ সকাল (পর্ব ২৭)

'পার্পল ড্রিম'- পাহাড় থেকে লাফ! একটি স্বপ্ন পূরণ (পর্ব ২৮)

'পার্পল ড্রিম'- গার্লফ্রেন্ড না রয়েল এনফিল্ড! (পর্ব ২৯)

'পার্পল ড্রিম'- খারদুংলা টপ! ১৮,৩৮০ ফুট! (পর্ব ৩০)

'পার্পল ড্রিম’ - খারদুংলা চূড়ায় প্রথম বাংলাদেশী! (পর্ব ৩১)

'পার্পল ড্রিম' নুব্রাভ্যালী থেকে তুরতুক (পর্ব ৩২)

'পার্পল ড্রিম' তুরতুক-বিধাতার বিশেষ আশীর্বাদ (পর্ব ৩৩)

'পার্পল ড্রিম'- নুব্রাভ্যালী ও ক্যামেল সাফারির গল্প (পর্ব ৩৪)

'পার্পল ড্রিম'- ফুল কুমারীর গল্প (পর্ব ৩৫)

'পার্পল ড্রিম' -একটি কলা কাহিনী (পর্ব ৩৬)

'পার্পল ড্রিম' -নিশা, তুম বাড়ি মিঠি হো (পর্ব ৩৭)

'পার্পল ড্রিম' -নুব্রা থেকে প্যাংগং (পর্ব ৩৮)

'পার্পল ড্রিম'- প্যাংগং লেক (পর্ব ৩৯)

'পার্পল ড্রিম' - তিন আহাম্মকের গল্প (পর্ব ৪০) 

'পার্পল ড্রিম' -তুষার পাতের আশীর্বাদ (পর্ব ৪১)

'পার্পল ড্রিম'- কার্গিল-একটি যুদ্ধক্ষেত্র ভ্রমণের গল্প (পর্ব ৪২)

'পার্পল ড্রিম'-পতাকা ও একটি আক্ষেপ অনুভূতি (পর্ব ৪৩)

 

প্রিয় ট্রাভেল/জিনিয়া/আজাদ চৌধুরী

প্রিয় ট্রাভেল সম্পর্কে আমাদের লেখা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে। যেকোনো তথ্য জানতে মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। ভ্রমণবিষয়ক আপনার যেকোনো লেখা পাঠাতে ক্লিক করুন এই লিংকে - https://www.priyo.com/post।     

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...