মুন সিনেমা হলের জমি ও তার ওপর গড়ে তোলা স্থাপনার নির্ধারিত মূল্য ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

মুন সিনেমা হলের মালিককে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ

পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ের মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয় এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:৫৭ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১১:০০
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:৫৭ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১১:০০


মুন সিনেমা হলের জমি ও তার ওপর গড়ে তোলা স্থাপনার নির্ধারিত মূল্য ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

(প্রিয়.কম) পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে মামলার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় এসেছিল। সেই জমি ও তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার নির্ধারিত মূল্য ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেন আদালত।

১৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

প্রথম কিস্তিতে ২৫ কোটি, দ্বিতীয় কিস্তিতে ২৫ কোটি এবং বাদ বাকী টাকা তৃতীয় কিস্তিতে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ করতে বলেন আদালত। ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড কোম্পানিকে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। 

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ।

এর আগে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের জমি এবং তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান মালিকের হাতে মুন সিনেমা হল ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দিলেও বর্তমান বাস্তবতায় তা সম্ভব নয়। তখন আদালত একজন অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ প্রকৌশলীকে দিয়ে হলের সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।

আদালতের আদেশের পর অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া একটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত মূল্য পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে বৃহস্পতিবার আদেশ দিলেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ের মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয় এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে। ইতালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও বিষয়টি আটকে যায়।

এরপর ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান একটি সামরিক ফরমান ঘোষণা করেন, যাতে বলা হয়, সরকার কোনও সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে যায়।

কিন্তু ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস এরপর ২০০০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যেখানে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দেয়। রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেয়।

এরপর দীর্ঘ দিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইতালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ তখনকার ভূমিসচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে। সেই অভিযোগের শুনানি করেই আপিল বিভাগ সিনেমা হলের জমি, স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেয়।

প্রিয় সংবাদ/আরএ

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...