মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক অগ্নিকাণ্ড। ফাইল ছবি

আবারও রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র জোসেফ সূর্য ত্রিপুরা জানান, নতুন করে যেসব মানুষ আসছে, তারা অন্তত ছয় দিন পাহাড়-জঙ্গল পাড়ি দিয়ে তারা বাংলাদেশে এসেছে।

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৫৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ২২:৪৮
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৫৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ২২:৪৮


মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক অগ্নিকাণ্ড। ফাইল ছবি

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে নতুন করে আবারও অগ্নিসংযোগ করছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। নতুন করে এই নির্যাতন শুরু হওয়ার পর থেকেই গত ১৫ অক্টোবর রোববার নতুন করে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল নেমেছে। 

ইউএনএইচসিআর-এর ওই বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দিতে সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করছে অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনী ও স্থানীয় লোকজন (বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা)। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রাণ বাঁচাতে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৫ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর শুধু গত ১৫ অক্টোবর রোবারই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ১৫ হাজার নতুন শরণার্থী। এ নিয়ে ইউএনএইচসিআর একটি ড্রোন ভিডিও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। 

ইউএনএইচসিআরের ড্রোন ভিডিওতে রোহিঙ্গাদের ঢল। 

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র জোসেফ সূর্য ত্রিপুরা জানান, নতুন করে যেসব মানুষ আসছে, তারা অন্তত ছয় দিন পাহাড়-জঙ্গল পাড়ি দিয়ে তারা বাংলাদেশে এসেছে। এদের প্রায় সবাই এসেছে রাখাইনের বুথিডং থেকে। নিপীড়ন শুরু হওয়ার পরও কেন এসব রোহিঙ্গা সেখানে রয়ে গিয়েছিল, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, পালিয়ে আসা মানুষদের সাথে কথা বলে জেনেছি, তারা ভেবেছিল হয়ত পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে। তাই জীবনের হুমকি ও নানা রকম নিপীড়ন সহ্য করেও সেখানে রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী নতুন করে গ্রাম পুড়িয়ে দিতে শুরু করলে জীবন বাঁচাতেই তারা পালিয়ে আসে।

নতুন করে নেমেছে রোহিঙ্গা ঢল। ছবিটি ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার কক্সবাজারের পালংখালী থেকে তোলা। ছবি: ফোকাস বাংলা

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা। ছবি: ফোকাস বাংলা

এদিকে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার ঘটনায় আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউএনএইচসিআর। 

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ লাখ ৮২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এদিকে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, ১৫ অক্টোবর থেকে তা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে কিছু এরিয়াল ফুটেজ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে উখিয়ার পালংখালির কাছে নাফ নদী পার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে।

এর আগেই জাতিসংঘ জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ ভাগই হলো নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এর মধ্যে ১১শ’র বেশি রোহিঙ্গা শিশু পরিবার ছাড়া অচেনাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর এসব শিশুর চোখের সামনেই তাদের বাবা-মাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা, মা-বোনদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।

অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২৮৮টি রোহিঙ্গা অধুষ্যিত গ্রাম। সংস্থাটি আরো জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। 

প্রিয় সংবাদ/শান্ত  

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...