রংপুর রাইডার্সের জার্সি গায়ে সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। ছবি: প্রিয়.কম

‘মাশরাফি আমার বন্ধু ও ভাই’

মাশরাফি বিন মুর্তজা একটা ‘মিথ’। যা একজন সহযোদ্ধা, একজন নেতা, একজন অভিভাবক, একজন ভাইয়ের মতো অনেক অনুকরণীয় রুপের সন্নিবেশ। রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলতে আসা আফগানিস্তানের ক্রিকেটার সামিউল্লাহ শেনওয়ারিও মাশরাফির মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন।

শান্ত মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:১৪ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১৬
প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:১৪ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১৬


রংপুর রাইডার্সের জার্সি গায়ে সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। ছবি: প্রিয়.কম

(প্রিয়.কম) মাশরাফি বিন মুর্তজা একটা ‘মিথ’। যা একজন সহযোদ্ধা, একজন নেতা, একজন অভিভাবক, একজন ভাইয়ের মতো অনেক অনুকরণীয় রুপের সন্নিবেশ। বলা বাহুল্য শুধু এ ব-দ্বীপ নয়, এর প্রতিরুপ এখন ছড়িয়েছে গোটা ক্রিকেট বিশ্বে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলতে আসা আফগানিস্তানের ক্রিকেটার সামিউল্লাহ শেনওয়ারিও মাশরাফির মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন। প্রিয়.কমের সঙ্গে একান্ত আলাপে সেই আবেশের রেশই পাওয়া গেল আফগান অলরাউন্ডারের কন্ঠে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শান্ত মাহমুদ- 

- তারকা সমৃদ্ধ দলের হয়ে খেলছেন। বিপিএল কতটা উপভোগ্য মনে হচ্ছে?

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: এরআগেও বিপিএল খেলেছি। দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে এসেছি। খুব ভাল লাগছে। বলা যায় আমি খুব রোমাঞ্চিত! আমাদের দল রংপুর রাইডার্স বেশ শক্তিশালী। এখানে বড় বড় তারকা ক্রিকেটার আছে। মালিকপক্ষও খুব আন্তরিক। সব মিলিয়ে বিপিএলটা দারুণ উপভোগ করছি। 

- আপনাদের দলে গেইল-ম্যাককালামদের মতো তারকা ক্রিকেটার আছে। এদের সাথে একই দলে খেলতে পারাটা কেমন?

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: এবারই প্রথম আমি ম্যাককালাম-গেইলদের মতো বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলছি। এছাড়া বাংলাদেশের কয়েকজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারও আছে আমাদের দলে। এটা আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা। এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারছি। তাদের দেখে শিখছি, কীভাবে আমার ব্যাটিং-ফিল্ডিং ও বোলিং উন্নত করা যায়। রংপুরে খেলে আরও ভাল করে ক্রিকেট বোঝার সুযোগ হয়েছে আমার।  

- ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে ক্রিকেটের তুমুল জনপ্রিয়তা। আফগানিস্তানে ব্যাপারটি কেমন? ওখানকার মানুষ কি বিপিএল ফলো করে?

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: আমি বিপিএলে খেলছি বলে আমাদের দেশের মানুষরা খেয়াল রাখছে, কবে কখন আমার ম্যাচ! সবাই খুব সমর্থন করে যাচ্ছে। পরিবার-বন্ধু বান্ধবও আমার জন্য খুব চিন্তা করছে। আসলে যেখানেই আমার খেলা থাকুক না কেন, সবাই খুব সমর্থন করে। সাহস জোগায়। সবাই বলে আমি যেন আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করি। আসলে রংপুরের হয়ে খেলা বা আফগানিস্তানের হয়ে খেলা; আমার কাছে একই কথা। আমি সব জায়গায়ই আমার শতভাগ দিয়ে খেলি। 

- কিছুদিন আগেই আপনাদের দেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। আপনাকে সেই দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভাবা হয়। এ ব্যাপারটি কীভাবে দেখেন?

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: টেস্ট স্টাটাস পাওয়াটা ছিল আমাদের জন্য একটা বিশাল প্রাপ্তি। আমিও হয়তো টেস্ট খেলব। আগামী বছরই আমাদের টেস্ট অভিষেক হতে পারে। যে দলটা খেলবে, আশা করি আমি সেই দলে থাকতে পারব। টেস্ট খেলার ব্যাপারটা আমাদের জন্য অনেক বড় কিছু। এটা নিয়ে আমরা গর্বিত।

- তরুণ রশিদ খান বল হাতে দারুণ করছে। আফগানিস্তানের অন্যতম সেরা সম্পদ ভাবা হয় তাকে। এছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলা মুজিব জাদরানকে নিয়েও অনেক প্রত্যাশা আফগানিস্তানের। এ দুজনকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?  

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: রশিদ খান খুব ভাল বোলার। সারাবিশ্ব এখন তাকে চেনে যে, সে সেরা একজন বোলার। আর মুজিব অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এশিয়া কাপে পাঁচ ম্যাচে ২১টি উইকেট নিয়েছে। এতেই বোঝা যায় সে উঠে আসছে। সে আমাদের খুব ভাল ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবে প্রস্তুত হয়ে উঠছে। আমাদের আসলে ভবিষ্যতের জন্য চিন্তিত হতে হবে না, কারণ এ রকম তরুণরা উঠে আসছে। 

- মুজিবকে জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করতে বলা হলে আপনি কী বলবেন?

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: আমি মনে করি মুজিব জাতীয় দলে খেলবে। অবশ্যই সে ডাক পাবে। আশা করি দ্রুতই আপনারা তাকে আফগানিস্তান জাতীয় দলে দেখতে পারবেন। 

- আপনার দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে কেমন দেখছেন। অধিনায়ক ও মানুষ হিসেবে মাশরাফিকে কেমন মনেহয়?

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: মাশরাফি মানুষ হিসেবে অনেক বড় মাপের। সে খুবই রসিক, বন্ধুত্বপূর্ণ। আসলে মাশরাফি আমার কাছে ভাইয়ের মতো। আমার কাছে তাকে সতীর্থ মনে হয় না। মনে হয় সে আমার বন্ধু ও ভাই। সব সময় খুব অনুপ্রেরণা দেন। দলের প্রতিটি খেলোয়াড় তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। আশা করি তার সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও খেলতে পারব। 

- ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করার আগে আফগানিস্তানে আপনার জীবনযাত্রা কেমন ছিল? আর এখন ব্যাপারটি কেমন?

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: ১০ বছর আগে আফগানিস্তানে ক্রিকেটের কিছুই ছিলো না। না ছিলো ক্রিকেটার, না ছিলো মাঠ এবং না ছিলো কোনও ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা। কিন্তু এখন তিনটা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম আছে। বেশ কিছু একাডেমি আছে। এর মধ্যে কয়েকটা বেসরকারি। ক্রিকেট বোর্ড পরিচালিত সরকারি একাডেমিও আছে। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের ক্রিকেট এখন দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা খুবই আশাবাদী। 

- ক্রিকেট নিয়ে আফগানিস্তানের মানুষের স্বপ্ন কী? 

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: আফগানিস্তানে ক্রিকেটই এখন এক নম্বর খেলা। দেশের সাধারণ মানুষও ক্রিকেট নিয়ে খুব আশাবাদী। কারণ ক্রিকেটের কারণে তাদের মুখে হাসি ফোটে। তারা চায় ক্রিকেট দল যেন দেশকে আরও বেশি আনন্দ দিতে পারে। আসলে আন্তর্জাতিক ম্যাচে যখন দেশের পতাকাটা ওড়ে, সেটা দেখতে পাওয়ার চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। আফগানিস্তানের মানুষ ক্রিকেটকে ভালবেসে ফেলেছে।

- কাকে দেখে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিংবা কাকে দেখে সবচেয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: শেন ওয়ার্ন আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলার। তাকে অনেক খেলতে দেখেছি। একজন বোলার হিসেবে আমি তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। আর ব্যাটিংয়ে আমার অনুপ্রেরণা কেভিন পিটারসেন। তার ব্যাটিংয়ের ধরন আমার খুব পছন্দ।

- শেন ওয়ার্নের সাথে কখনও দেখা হয়েছে?

সামিউল্লাহ শেনওয়ারি: তাকে কখনও দেখিনি, তবে আশা করি ভবিষ্যতে দেখব। 

 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...