পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস কখনোই ত্যাগ করা যাবে না। ছবি: নূর।

সুস্থ রাখুন কিডনি, সুস্থ থাকুন আপনি

ভীষণ জরুরি এই অঙ্গতে যদি সমস্যা দেখা দেয় তবে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। কেননা কিডনির কার্যকারিতা পুরো শরীরকে সুস্থ রাখার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৪:১৮ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৩২
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৪:১৮ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৩২


পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস কখনোই ত্যাগ করা যাবে না। ছবি: নূর।

(প্রিয়.কম) শরীরের অন্যান্য সকল অঙ্গের মাঝে কিডনিকে বলা হয়ে থাকে ‘সাইলেন্ট হিরো’। কারণ, এই কিডনির কার্যকারিতার মাধ্যমে প্রতিদিন শরীর থেকে সকল বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায় খুব স্বাভাবিকভাবে। শুধু তাই নয়। কিডনি লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে, হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে। ভীষণ জরুরি এই অঙ্গতে যদি সমস্যা দেখা দেয় তবে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। কারণ, কিডনির কার্যকারিতা পুরো শরীরকে সুস্থ রাখার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেনে নিন কীভাবে শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি সুস্থ রাখতে পারবেন।   

হাইড্রেটেড থাকার চেষ্টা করুন

পানি শরীরের বর্জ্র পদার্থের সাথে মিশে গিয়ে তৈরি করে মূত্র। যা কিডনিকে সচল রাখতে সাহায্য করে। যে কারণে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন। গড়ে একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর প্রতিদিন ২.১ লিটার এবং পুরুষের ২.৬ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত গরম অথবা কাজের জন্যে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। মূত্রের রং পরিবর্তিত হবার মাধ্যমে বোঝা যায় পানি সঠিক পরিমাণে পান করা হচ্ছে কিনা।

উচ্চরক্ত চাপ, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন

উপরোক্ত তিনটি সমস্যাই কিডনিতে স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। বিশেষ করে উচ্চরক্ত চাপ বেশি ক্ষতিকর। যেহেতু, উচ্চরক্ত চাপ দেখা দেবার কোন নির্দিষ্ট লক্ষণ নেই, তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া, আপনার যদি কোলেস্টেরল এবং ব্লাড সুগার জনিত সমস্যা থাকে তবে খাদ্যাভ্যাসকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণের মাঝে রাখতে হবে এবং সেইরূপ ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা কমান

প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস থেকে সোডিয়াম অথবা লবণ গ্রহণের মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণের ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। যা রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে সরাসরি কিডনির উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনকি উচ্চরক্ত চাপ হলো কিডনির সমস্যা তৈরির দ্বিতীয় প্রধান কারণ।

যে কারণে, প্রতিদিন ২,৩০০ মিলিগ্রাম অথবা এক চা চামচ পরিমাণ লবণ গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও, প্রায় ৭৫ শতাংশ সোডিয়াম পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের ফাস্টযুড থেকে। এই সকল খাবার যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে।

অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন 

প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিন নিশ্চয়ই থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ যে কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে সেটা কি জানেন? প্রোটিন গ্রহণে তৈরি হয় অ্যামোনিয়া নামক একটি বাইপ্রোডাক্ট যা কিডনির জন্যে ক্ষতিকর। অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে তৈরি হবে অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া। যার ফলে কিডনির কাজ করতে হবে অতিরিক্ত বেশী। যে কারণে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য একেবারেই গ্রহণ করা উচিৎ হবে না।

ধূমপান

ধূমপান হতে বিরত থাকুন 

আমরা সকলেই জানি ধূমপানের ফলে হৃদযন্ত্রের এবং ফুসফুসের ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। একইসাথে কিডনিও ধূমপান একেবারেই সহ্য করতে পারে না। ধূমপানের ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। তাই, অস্বাস্থ্যকর এই অভ্যাস শারীরিকভাবে ক্ষতি করতে পারে বেশ অনেকগুলো দিক থেকেই। পুরোপুরিভাবে ধূমপান ছেড়ে দিতে চাইলে কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সেইরূপ কাজ করতে হবে।

প্রসেসড খাবার থেকে দূরে থাকুন

চিপস, আলু ভাজা, মটর ভাজা, ম্যাংগো বার ইত্যাদি খাবারের মাঝে একটি বিষয়ে মিল রয়েছে। সে সকল খাবার খেতে বেশ সুস্বাদু এবং সকল খাবারেই রয়েছে অনেক বেশী মাত্রায় সোডিয়াম এবং ফসফরাস। উভয় উপাদানই কিডনির জন্যে ক্ষতিকর। চেষ্টা করতে হবে এমন প্রসেসড খাবার এড়িয়ে ফ্রেশ ও প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের জন্য।    

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন 

বডি মাস ইনডেক্স (BMI) অনুযায়ী ২৫ এর উর্ধ্বে থাকলেই সেটা বাড়তি ওজন এবং কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বাড়তি ওজন মানেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেওয়া। যা থেকে কিডনির সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে অচিরেই। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে এবং বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলতে চাইলে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল, সবজী ও লো-ফ্যাট মিল্ক গ্রহণ করতে হবে।

সয়াবিন এবং সবুজ শাক গ্রহণ করুন 

পূর্বেই বলা হয়ে অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তবে এই প্রোটিন মাংস জাতীয় খাদ্য থেকে আসলে ক্ষতিকর। সয়াবিনের প্রোটিনে সেই ক্ষতিকর প্রভাব নেই। এছাড়া, সবুজ শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমূহ। যে কোন শারীরিক প্রদাহ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে বলে তাজা সবুজ শাক গ্রহণ করতে হবে নিয়মিত।

সূত্র: Curejoy

প্রিয় লাইফ/ আর বি 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...