‘শরবতে বাজিমাত’ বইটির লেখক মুনির হাসান ও বইয়ে প্রচ্ছদপট। ছবি: সংগৃহীত

শরবতে বাজিমাত: উদ্যোক্তার সোপান

বইটি পড়ার সময় যিনি উদ্যোক্তা নন, তার মধ্যেও জেগে উঠবে নতুন কোনো ব্যবসার আইডিয়া।

মেহেদি রাসেল
সাংবাদিক, কবি ও কলাম লেখক
প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০১৮, ১৭:৫৫ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৪৮
প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০১৮, ১৭:৫৫ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৪৮


‘শরবতে বাজিমাত’ বইটির লেখক মুনির হাসান ও বইয়ে প্রচ্ছদপট। ছবি: সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) সাফল্যের গল্প শুনতে আমাদের সবারই ভালো লাগে। আমরা অনুপ্রাণিত হই। তিন বন্ধুর দারুণ এক উদ্যোগের গল্প হলো ‘শরবতে বাজিমাত’। তবে সেই শরবত কিন্তু আমাদের দেশের শরবতের মতো এতটা ‘জলো’ নয়, জলের পরিমাণ অনেক কম থাকে। জিনিসটার নাম আসলে ‘স্মুদি’। আমাদের দেশে এ রকম জিনিস নেই বলে আর ‘স্মুদি’ অতটা কমিউনিকেটিভ নয় বলে লেখক বইতে ‘শরবত’ নামটিই রেখেছেন। তো, দৈনিক তিন লাখ বোতল শরবত বিক্রি করা চাট্টিখানি কথা নয়। চালচুলোহীনভাবে শুরু করা তিন বন্ধুর ওই কোম্পানির পক্ষে এটি তো দারুণ সাফল্য।

১৯৯৮ সালে ক্যামব্রিজ থেকে পাস করা তিন বন্ধু ‘ইনোসেন্ট’ নামে শরবতের কোম্পানি খোলেন। তখন তাদের হাতে সম্বল মাত্র ৫০০ পাউন্ড। সেখান থেকে শুরু করে তাদের সাফল্যের কথা নিয়ে তিন বন্ধুর বই ‘অ্যা বুক অ্যাবাউট ইনোসেন্ট’। সরাসরি অনুবাদ নয়, মুনির হাসান ‘শরবতে বাজিমাত’ বইটি লিখেছেন তার নিজের মতো করেই। লেখক বলছেন, ‘ইনোসেন্টের তিন উদ্যোক্তার লেখা “অ্যা বুক অ্যাবাউট ইনোসেন্ট” অনুবাদ করার কথা ভাবি। শুরুও করি। তারপরই আবিষ্কার করি, বইটির মূল যে বিষয়টায় জোর দিতে চাই, অনুবাদে তা ধরা সম্ভব হবে না। তখন আমি অনুবাদ করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসি। ঠিক করি, মূল বিষয়টা নিজের মতো করেই লিখে নেব।’

যারা উদ্যোক্তা হতে চান, যাদের মাথায় নানা পরিকল্পনা রাতদিন ঘুরপাক খাচ্ছে, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ বই। কীভাবে শুরু করতে হয়, কাদের নিয়ে দল বানাতে হয় কিংবা আপনার পণ্য লোকে কেন গ্রহণ করবে এসব কথার উত্তর পাওয়া যাবে এখানে। ইনোসেন্ট কোম্পানির তিন বন্ধুর প্রথম পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তারা তাদের পরস্পরের মধ্যে উদ্যোক্তাসুলভ দিক খুঁজে পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ‘প্লিজ’ নামে একটি পাক্ষিক নাচের আসর জমিয়ে ফেলেন। সেটি দারুণ সাড়া জাগালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এরপর তারা মেয়েদের জন্য একটি ডিজে লেসন কোর্স খোলেন, যদিও সেটি খুব বেশি সাড়া জাগায়নি। এ দুটো উদ্যোগ থেকে তারা কিছু অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা লাভ করেন, যেটা তাদের পরবর্তী জীবনে সহায়তা করেছে। বইটিতে উদ্যোক্তা হতে হলে কী কী ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হতে পারে, তার কিছু চমৎকার বর্ণনা রয়েছে। খুব ছোট ছোট বিষয়ও যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, এর উদাহরণও দিয়েছেন লেখক।

ইনোসেন্টের গল্প হলো লেগে থাকার গল্প, চলতে চলতে শেখার গল্প। একাগ্র লক্ষ্য এবং নিজের কাজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা যেকোনো উদ্যোক্তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। লেখক বলছেন, বিশাল বড় বড় কোম্পানির বেশিরভাগের শুরুই আসলে ইনোসেন্টের মতো। বইটি পড়ার সময় যিনি উদ্যোক্তা নন, তার মধ্যেও জেগে উঠবে নতুন কোনো ব্যবসার আইডিয়া। ইচ্ছে হবে দারুণ কিছু করে দেখানোর। কেননা বইটি বলে, সাধারণভাবেই বিশাল লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। সততা, নিজের লক্ষ্যের প্রতি একাগ্র থাকা, সঠিক ব্যবস্থাপনা, সুন্দর পরিকল্পনা-এসব ঠিক থাকলে ছোট কোম্পানির পক্ষেও বাজার দখল করা সম্ভব। মুনির হাসান বইটি সরাসরি অনুবাদ না করে নিজের মতো করে লিখেছেন, সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানানো যায়। কেননা সম্ভবত এ কারণে লেখাটি প্রাঞ্জল ও সুখপাঠ হয়ে উঠেছে।

বইটি প্রকাশ করেছে আদর্শ প্রকাশনী, প্রচ্ছদ করেছেন মুস্তাফিজ কারিগর। মূল্য ১৫০ টাকা।

প্রিয় সাহিত্য/আজাদ চৌধুরী

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...