ছবি: প্রিয়.কম

দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো || সামাজিক মাধ্যম কীভাবে সাংবাদিকতাকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে

বর্তমানে সাংবাদিকরা এবং সংবাদমাধ্যমগুলো বড় ঘটনার আাপডেট, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও পাঠকদের কাছ থেকে এ সম্পর্কিত আরও খবর জানতে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে।

মিজানুর রহমান
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০১৭, ১৯:২৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০২:১৬
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০১৭, ১৯:২৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০২:১৬


ছবি: প্রিয়.কম

নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক সি. ডব্লিউ. অ্যান্ডারসন, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক লিওনার্ড ডাউনি জুনিয়র এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জার্নালিজমের অধ্যাপক মাইকেল শাডসন দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো নামের একটি বই লিখেছেন। ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশ করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। বইটিতে লেখকরা সাংবাদিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন। সেই বই অনুসারে ধারাবাহিকভাবে অনুলিখন করছেন মিজানুর রহমান

আজকের বিষয়: সামাজিক মাধ্যম কীভাবে সাংবাদিকতাকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে

(প্রিয়.কম) ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, লিংকড-ইন, ফটোশেয়ারিং সাইট ইনস্টাগ্রাম, ওয়োন-টু-ওয়ান যোগাযোগের চ্যাটিং প্ল্যাঠফর্ম হোয়াটস অ্যাপে প্রতিনিয়ত ব্লগ, নিউজ লিংক, নিউজ কিংবা নিউজ সংশ্লিষ্ট ছবি শেয়ারের পরিমাণ বাড়ছে। কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন এসব সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছে এবং ইচ্ছাকৃত হোক কিংবা অনিচ্ছকৃত হোক, অন্য ব্যবহারকারীরা ও সংবাদ মাধ্যমগুলো তাদের মাধ্যমে কী কী শেয়ার করছে, তা দেখছে। ২০১৪ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অর্ধেকই তাদের ফিডে নিউজ বা সংশ্লিষ্ট ছবি বা ভিডিও শেয়ার করেছে। 

২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের এক বিশেষ অভিযানে তালেবান নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হন। সংবাদমাধ্যমে এ খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারিত হওয়ার ২০ মিনিট আগে থেকেই এ খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ খবর আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানানোর এক ঘণ্টা আগেই তার বক্তব্য এবং হোয়াইট হাউজ থেকে অভিযান প্রত্যক্ষ করার ছবি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার জন্য সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করেন। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের ১৪ শতাংশ নিজেদের সরাসরি অভিজ্ঞতা এবং সে সংশ্লিষ্ট নিজেদের তোলা ছবি পোস্ট করেন, ১২ শতাংশ ব্যবহারকারী ঘটনার নিজস্ব ধারণকৃত ভিডিও পোস্ট করেন। ২০১৪ সালে এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্গুসন ও  মিজৌরি শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের বেশ কয়েকটি ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও নিজেদের তোলা ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন, যেগুলো পুরো যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাপী মিডিয়াগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিল। 

সাংবাদিকরা এবং সংবাদমাধ্যমগুলো বড় ঘটনার আাপডেট, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও পাঠকদের কাছ থেকে এ সম্পর্কিত আরও খবর জানতে সামাজিক মাধ্যম ব্যাহার করে থাকে। যেমন সড়ক দুর্ঘটনা, বিমান দুর্ঘটনা কিংবা সংঘর্ষ-অগ্নিসংযোগের বড় কোনো ঘটনা ঘটলে বিবিসি প্রাথমিকভাবে একটু তথ্য দিয়ে তার নিচে সংশ্লিষ্ট এলাকার পাঠকদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো নিউজ থাকলে তা বিবিসির কাছে সরবরাহ করার আহবান জানায়। এ জন্য বিবিসি একটি বিশেষ ফোন, ফ্যাক্স ও ইমেইল আইডিও সংযুক্ত করে দেয়। 

সামাজিক মাধ্যমের তীব্র উত্থানের ফলে অনেক সময় ডিজিটাল ওয়েবসাইটগুলোর ট্রাফিকেও টান দেখা দেয়। ওয়াশিংটন পোস্ট’র ডিজিটাল নিউজ বিভাগের সিনিয়র সম্পাদক কোরি হাইক এটিকে ‘অন্যতম অগোছালো সাংবাদিকতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ডিজিটাল নিউজের ভোক্তারা, বিশেষ করে তরুণরা অধিকাংশ সময়েই সরাসরি সংবাদমাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইটে না গিয়ে তাদের সামাজিম মাধ্যমে পাওয়া নিউজের লিংকে ক্লিক করে সেখানে যায়। তরুণরা সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটের চেয়ে সামাজিক মাধ্যমেই অনেক বেশি সময় কাটায়।  

কোরি হাইক বলেন, ২০১৪ সালের শেষ অবদি ওয়াশিংটন পোস্টের যত ডিজিটাল পাঠক ছিল, তার তিন ভাগের এক ভাগ সরাসরি ওয়েবসাইটে এসেছে, একভাগ সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে পাওয়া সংবাদের লিংকে ক্লিক করে ওয়েবসাইটে এসেছে।  আর বাকী একভাগ এসেছে সামাজিক মাধ্যৗমে পাওয়া লিংকে ক্লিক করে। আর মোবাইল ডিভাইস থেকে ওয়েবসাইটটির যত ভিজিটর ছিল, তার প্রায় সবাই সার্চ ইঞ্জিন এবং সামাজিক মাধ্যম থেকে পাওয়া লিংকে ক্লিক করে তাদের ওয়েসাইটে এসেছে। এসব পরিসংখ্যান দেখে হাইক একটি আলাদা দল গঠন করেন যাদের কাজই হচ্ছে শুধু ডিজিটাল পাঠকদের রুচি ও মনমানসিকতা যাচাই-বাছাই করা এবং ওয়াশিংটন পোস্টের কন্টেন্ট দিয়ে কীভাবে তাদের আরও বেশি আকর্ষণ করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করা। 

খবরের প্রাথমিক সোর্স হিসেবেও সামাজিক মাধ্যম এখন অনেক দূর এগিয়েছে। বহু বছর ধরে ‘গুগল অপটিমাইজেশনান’ ছিল সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরের অন্যতম উৎস। এখন সামাজিক মাধ্যমও সেই একই স্থান দখল করেছে কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের চেয়েও বেশি। অর্থাৎ গুগল সার্চ রেজাল্টের ওপরের দিকে যদি শুধু সংবাদমাধ্যমগুলোর নিউজ ও হেডলাইন দেখায়, তাহলে সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমগুলো সংবাদের ওপর এমনভাবে কাজ করে যাতে একই অবস্থা হয় সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও। ইন্টারনেটে ও সামাজিক মাধ্যমে নিউজ ভাইরাল করাতে এটিও একটি কৌশল। আর সার্চ ইঞ্জিন থেকে সামাজিক মাধ্যমে পরিবর্তন, সিলিকন ভ্যালিতেও এটি এখন এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। 

তবে কিছু কিছু ব্লগ, ওয়েবসাইটের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমগুলোও মিথ্যা তথ্য, গুজব, উসকানি দেওয়ার একটি বড় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এটি ভুলে গেলে চলবে না। ২০১৪ সালে ফার্গুসনে ও মিজৌরিতে যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, তখনও অনেকে সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ও ছবি পোস্ট করেছেন, যেগুলো অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। ২০১১ সালে টাকসন শপিং মলে গোলাগুলির ঘটনায় কংগ্রেসম্যান গ্যাবি গিফোর্ডস নিহত হয়েছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু আসলে ওই গোলাগুলিতে ‍তিনি শুধু আহত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে বোস্ট ম্যারাথনে বোমা হামলার সঙ্গে সঙ্গে রেডিট ওই হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে এক নিরপরাধ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে দিয়েছিল। স্টোরিফুল নামের একটি ডিজিটাল স্টার্টআপ ওয়েবসাইট আছে, যেটি এখন মিডিয়া মোঘল রুপার্ট মারডকের মালিকানাধীন। এ ওয়েবসাইটটি সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য, ছবি এবং ভিডিও’র যথার্থতা যাচাই করে। বিভিন্ন সময় এ ওয়েবসাইটটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বহু সংবাদ, ছবি এবং ভিডিও সম্পূর্ণ কিংবা অনেকাংশে ভুয়া।

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...