রিভারাইন পিপল’-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব শেখ রোকন। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম।

বছরের একটা দিন অন্তত আপনার প্রিয় নদীটার কাছে যান: শেখ রোকন

২০১০ সাল থেকে নদী বিষয়ক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘রিভারাইন পিপল’ নামের একটি সংস্থা এ দিবস পালন করে আসছে। এই দিবস উপলক্ষে প্রিয়.কমের মুখোমুখি হোন শেখ রোকন।

সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৩৬ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৬:১৬
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৩৬ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৬:১৬


রিভারাইন পিপল’-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব শেখ রোকন। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম।

(প্রিয়.কম) আজ (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব নদী দিবস। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কানাডিয়ান নাগরিক মার্ক এঞ্জেলোর হাত  ধরে এই দিবসের সূচনা হয়। ২০০৫ সাল থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে নদী বিষয়ক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রিভারাইন পিপল নামের একটি সংস্থা এ দিবস পালন করে আসছে। এই দিবস উপলক্ষে প্রিয়.কমের মুখোমুখি হোন শেখ রোকন। তিনি রিভারাইন পিপল-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। নদ-নদী বিষয়ে লেখালেখি ও গবেষণায় তিনি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশীয় পর্যায়ে পরিচিত মুখ। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ও সিকিম বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে পরিচালিত বাংলাদেশ-ভারত পানি সম্পর্ক বিষয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ ও সম্পাদকীয় নীতি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন।

প্রিয়.কম: আপনি তো অনেক দিন ধরেই নদী নিয়ে কাজ করছেন, আমাদের দেশের নদীর কোন কোন সমস্যাগুলো প্রকট বলে মনে হয় আপনার কাছে?

শেখ রোকন: বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নদীগুলোর চারটা মোটা দাগের সংকট রয়েছে প্রথমত প্রবাহ স্বল্পতা; উজানে নানা ব্যারেজ বা পানি প্রত্যাহার, এইসব কারণে নদীগুলোতে প্রবাহ স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে এর কারণ হচ্ছে, ভারতের সাথে আমাদের স্বীকৃত ৫৪টা নদী আছে; এর বাইরেও অনেক নদী আছে, কিন্তু এই ৫৪টা হচ্ছে স্বীকৃত ৭২এ যখন আমাদের জয়েন্ট রিভার কমিশন করা হয়, সেখানে আমরা এই ৫৪টা নদীকে কমন নদী হিসেবে ধরতে সম্মত হয়েছি বাংলাদেশ এরপরে আরো ১৬টা নদী প্রস্তাব করেছে, এর বাইরেও আমাদের হিসাবে ৫০টা নদী আছে যেগুলো অভিন্ন নদী হতে পারে। বাংলাদেশের সবগুলো নদী কোনো না কোনোভাবে এগুলোর সাথে যুক্ত, তার মানে পানিগুলো সব কোনো না কোনোভাবে উজান থেকে আসছে। অপরিকল্পিত স্থাপনার নজির তো সব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়, নদীর আশেপাশের এলাকাও এর বাইরে নয়। ধরেন যদি যমুনা সেতুর কথাই বলি, আপনি দেখবেন দুই পাশে চর পড়ে গেছে, এটাও একটা সংকট। আরেকটা হচ্ছে দখল। আপনি দেখবেন যমুনা কিন্তু কেউ দখল করতে যায় না, কিন্তু যখন নদীটা মরে যায়, তখন সেটাকে দখল করতে যায়। প্রবাহ স্বল্পতার সঙ্গে দখলটাও সম্পৃক্ত। দূষণও একটি বড় সংকট। পানি যখন কমে যায় তখন কেমিক্যাল দূষণ অনেক বেশি তীব্র হয়ে দেখা দেয়। আমাদের শহরাঞ্চলের নদী বা শিল্পাঞ্চলের নদীগুলো সবচেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে। চার নাম্বার সংকট হচ্ছে ভাঙন। এই চারটা সংকট কিংবা সমস্যার কথা কিন্তু সবাই জানে, আমরা রিভারাইন থেকে বলি, পঞ্চম একটা সংকট আছে।

প্রিয়.কম: কী সেই সংকট?

শেখ রোকন: পঞ্চম সংকটটা হচ্ছে সাংস্কৃতিক সংকট। সাংস্কৃতিকভাবে আমরা নদী বিমুখ হয়ে যাচ্ছি। বুড়িগঙ্গা যদি খেয়াল করেন, আহসান মঞ্জিল হচ্ছে বুড়িগঙ্গার দিকে মুখ করে, কিন্তু আর বাদ বাকি যা বাড়ি-ঘর এর পরে হয়েছে সব নদী থেকে উল্টো দিকে মুখ করে বানানো। গোটা দুনিয়ায় নদীর দিকে মুখ স্থাপনা তৈরি করা হয়।

প্রিয়.কম: লেকের দিকে মুখ করে মানুষ বাড়ি বানাতে চায়, সেদিক থেকে নদী তো আরো বৃহৎ জিনিস।

শেখ রোকন: একদম ঠিক। ঢাকা-শহর তো বুড়িগঙ্গার দুই পাড় জুড়ে প্রসারিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমরা চলে গেছি উত্তরার দিকে। ওইদিকে গিয়ে আবার তুরাগ মেরে ফেলছি। ফলে আমাদের কাছে মনে হয় আমাদের দেশের জন্য সাংস্কৃতিক সংকটটা অনেক বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ সংকট। আপনি যখন সাংস্কৃতিকভাবে নদীকে ভুলে যান, তখন অন্যান্যভাবে নদীকে ভুলে যাওয়া তরান্বিত হয়।

প্রিয়.কম: নদী দূষণের কথা বলছিলেন, অনেক নদীর পাশেই বড় বড় শিল্প স্থাপনা রয়েছে, নানা ধরনের কেমিক্যাল সেখান থেকে নদীতে এসে মিশে নদীর পানিকে দূষিত করছে, এই সংকট মোকাবেলায় সরকারিভাবে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বা করছে? কিংবা আদৌ কী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কী না?

শেখ রোকন: এটা আমার কাছে প্যারাডক্সিক্যাল লাগে। সরকারিভাবে আমাদের একটা আইন আছে পানি আইন নামে, এখানে দখল-দূষণ বিরোধী নানা রকম আইন আছে। দ্বিতীয়ত দেখবেন যে, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আছে- পরিবেশ মন্ত্রণালয়,পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়, এই রকম নদীর সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো কর্তৃপক্ষ আছে আমরা দেখি। ২০১৪ সালে আমরা দেখেছি পানি আইন এবং নদী কমিশন আইন হয়েছে। ২০১৫ তে এসে নদী কমিশন গঠিত হয়েছে। ফলে আইন আছে, প্রতিষ্ঠান আছে, প্রয়োগের ক্ষেত্রে ঝামেলা হচ্ছে। সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ হচ্ছে না। প্রত্যেকটা কারখানায় ইটিপি বা এফুলয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর কথা যাতে বর্জ্যটা সরাসরি নদীতে না পড়ে, এটা শোধন হয়ে তারপর যেতে পারে। এটা অনেকেই মানছে না, এই যে মানছে না সেটা দেখার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর আছে, তারা এগুলো খোঁজ-খবর করবে, এটার জন্য জনবলও নিয়োগ দেওয়া আছে, কিন্তু কতখানি আসলে ইন্সপেকশন হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বা ইন্সপেকশন যখন হয়, তখন হয়তো কারখানাগুলোতে ইটিপি খোলা রাখে। কিন্তু সেইসব কারখানা বের করতে হবে যেগুলোতে ইটিপি একেবারেই নেই। ফলে ওই কথাই আবার পুনরাবৃত্তি করতে হবে- আইন আছে; প্রতিষ্ঠান আছে, জনবল আছে, প্রয়োগ নেই।

প্রিয়.কম: আপনার কথার সূত্র ধরেই আসি, আইন আছে; প্রতিষ্ঠান আছে, জনবল আছে, প্রয়োগ নেই- সরকারিভাবে যে এই আইন প্রয়োগ হচ্ছে না, বেসরকারিভাবে আপনারা যারা নদী নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন যাবত, নদী বাঁচাতে বিভিন্ন সংগঠনও আছে, আপনারা কী সরকারকে এই বিষয়ে সঠিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারছেন?

শেখ রোকন: নানা ধরনের প্রেশার তো আসলে তৈরি হয়। একটা পজেটিভ দিক দেখবেন আপনি যে, আগে নদী নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বা জন পরিসরে এত আলোচনা ছিল না, গত এক দশক যদি আপনি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন যে আলোচনা বেড়েছে। মিডিয়ার রোলের ছোট্ট একটা উদাহরণ দিতে চাই, বিখ্যাত চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন তার বই আছে পথে পথে বা তার আরো বই এ দেখবেন যে উনি শুকনো নদী পার হয়ে যেই গ্রামগুলোয় যাচ্ছেন, সেই গ্রাম নিয়ে রিপোর্ট করেছেন, কিন্তু নদী নিয়ে রিপোর্ট করেননি। ওনার বর্ণনায় আছে, যে নদী পার হলাম কিন্তু নদী নিয়ে রিপোর্ট নেই। এখন কিন্তু নদী নিয়ে বেশ রিপোর্ট দেখা যায় কাগজে কিংবা চ্যানেলগুলোতে, ফলে এটা বলাই যায় যে, আগের তুলনায় নদী নিয়ে প্রচারণা বেড়েছে। সরকারের মধ্যেও কিন্তু প্রেশার বেড়েছে, প্রধানমন্ত্রী এখন বারবার নদীর কথা বলেন। নদী কমিশন ইট সেলফ পরিবেশবাদীদের দীর্ঘদিনের দাবির ফসল। আরেকটা পজেটিভ দিক হচ্ছে আমাদের আদালত, উচ্চ আদালত নদীর ব্যাপারে যত নির্দেশনা বা রায় দিয়েছেন, এটা খুবই বিরল। নদী নিয়ে এত রায় এবং ইতিবাচক রায়, এটা আর কোনো দেশের উচ্চ আদালত দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বরং বলেছে রিভার লিঙ্কিং প্রজেক্ট করতে হবে, অন্যরা বলেছে এটা পরিবেশের জন্য বিপদজনক হয়ে যাবে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এটা বুঝেনি, সেখান থেকে নির্দেশনা এসেছে এটা ইন্টারলিঙ্ক করতে হবে দ্রুত। ফলে সেদিক থেকে তুলনা করলে আমাদের আদালত নদীর ক্ষেত্রে অনেক বেশি পজেটিভ। এটা কিন্তু জন পরিসরে প্রচার-প্রচারণার ফসল।

প্রিয়.কম: ধাকায় যে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে, এটা তো ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত...এটা দূর করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন?

শেখ রোকন: ঢাকার চারপাশের নদী যদি ধরি, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ এবং বালু এই চারটা নদী। এর মধ্যে বালুতে এখনো দখল চলছে, আর বাকি তিনটার প্রধান সমস্যা এখন দূষণ। শীতলক্ষ্যায় কিছু দখল আছে, সেগুলো স্থাপনা না, বালি রাখার কারণে হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনার ফলে, চারপাশে ওয়াকওয়ে করে দেওয়ার কারণে দখলটা আপাতত বন্ধ হয়েছে। আদালত থেকে বলেছে নদীগুলো সীমানা নির্ধারণ করতে হবে, সেগুলো যদিও ঠিকমতো করা হয়নি। দূষণটাকেই তাই প্রধান সমস্যা হিসেবে কাউন্ট করবো আর এটার একটাই সমাধান, ওয়াসাকে তার তরল বর্জ্য শোধন করতে হবে। আনট্রিটেড বর্জ্য নদীতে দেওয়া যাবে না। দ্বিতীয় হচ্ছে সমস্ত ইন্ডাস্ট্রিতে ইটিপি বসাতে হবে।

প্রিয়.কম: তিস্তা নিয়ে তো অনেকদিন ধরেই ভারত-বাংলাদেশের এক ধরনের শীতল সম্পর্ক চলছে, আপনার কী মনে হয়, এ বিষয়ে কী দ্রুতই কোনো সমাধানে আসা সম্ভব?

শেখ রোকন: তিস্তাটা খুব জটিল নদী, জটিল এই কারণে যে এই নদী নিয়ে পাঁচ দশক ধরে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে দুইটা ব্যারেজও হয়েছে। শুধু কিন্তু ভারতীয় ব্যারেজ না, বাংলাদেশেও আমরা ডালিয়া পয়েন্টে ব্যারেজ করেছি। এটা একটা জটিলতা। দ্বিতীয় জটিলতা হচ্ছে- এটা একটা পাহাড়ি নদী; শুকনা মৌসুমে অল্প পানি, আবার বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পানি হয়। তিস্তার ক্ষেত্রে আমার যেটা মনে হয়, এটার আসলে পানি ভাগাভাগির সুযোগ খুব কম, কারণ দুইটা ব্যারেজই এই পানি দিয়ে চলবে না। সেক্ষেত্রে এটার সুফলটা ভাগাভাগি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে বৃটিশরা যখন এখানে একটা ব্যারেজের প্ল্যান করেছিল সেটা ছিল কুচবিহার এবং রংপুর দুই অঞ্চলই সেচের জন্য, কিন্তু সেই একটা ব্যারেজকে আমরা দুইটা ব্যারেজ করে ফেলেছি। দুইটা ব্যারেজ চালানোর জন্য পঁচিশ হাজার কিউসেক পানির দরকার হয়, কিন্তু শুকনা মৌসুমে আমাদের এখানে থাকে মাত্র পাঁচ হাজার কিউসেক পানি। আমাদের দাবি হচ্ছে দুইটা ব্যারেজই তুলে ফেলতে হবে, এবং তিস্তাকে কিভাবে সেচে, নৌ যোগাযোগে, মৎস্য সম্পদে ব্যবহার করা যায় সেটা ভাবতে হবে। ফলে আমাদের মনে হয়, পানি ভাগাভাগি করে হবে না, সুফলটা দুদেশকেই ভাগ করে নিতে হবে। আমরা যেমন ভারতের ব্যারেজের বিরোধীতা করি, একইভাবে রিভারাইন থেকে আমরা বাংলাদেশের ব্যারেজেরও বিরোধীতা করি। এই ব্যারেজের কারণে নদীর কিছু অংশ মরে যাচ্ছে, আমরা চাই নদীর প্রতিটা অংশ জীবিত থাকবে।

প্রিয়.কম: এবারের বিশ্ব নদী দিবসে আপনাদের কী পরিকল্পনা? 

শেখ রোকন: ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন সংগঠন একত্রিত হয়ে নদীর জন্য পদযাত্রা বা মার্চ ফর রিভার কার্যক্রম শুরু করি। প্রতি বছরই নদী দিবসের একদিন আগে আমরা বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বুড়িগঙ্গার দিকে হেঁটে যাই। এবার আমরা ৫৩টা সংগঠন ২৩ সেপ্টেম্বর এক সঙ্গে হেঁটেছি। এটা একটা কমন প্রোগ্রাম থাকে, আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কিছু কর্মসূচি আমরা নিয়ে থাকি, সেগুলো হবে। এর বাইরে আসলে আমরা মানুষকে আহবান করি- আপনারা বছরের একটা দিন অন্তত আপনার প্রিয় নদীটার কাছে যান।

প্রিয়.কম: এই আহবানটা কেন? বছরের একটা দিন প্রিয় নদীর কাছে যাওয়ার মোটিভ কী?

শেখ রোকন: নদীর কাছে গেলে যে কোনো মানুষেরই নদীর প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মে, নৈকট্য তৈরি হয়। মানুষ যখন কোথাও যায় তখন এটার গুরুত্ব তৈরি হয়। নদী দিবসে ব্যক্তিগত পর্যায়ে একটা মিনিমাম কর্মসূচি হতে পারে- নদী বিষয়ক যে কোনো কিছু আপনি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিতে পারেন, সেটা গান, ছবি, স্মৃতিকথন, যে কোনো কিছুই হতে পারে।

প্রিয়.কম: আপনাদের হাত ধরেই তো বাংলাদেশে বিশ্ব নদী দিবস এর সূচনা হয়, আপনাদের মানে রিভারাইন পিপল এর কথা বলছি। শুরুটা সম্পর্কে একটু জানতে চাই, শুরুটা কীভাবে কখন করেছিলেন?

শেখ রোকন: ২০১১-১২ সালে আরব বসন্ত নামে একটা অনলাইন সংগঠন ছিল, আমরা তারও  আগে ২০০৮ সালে রিভারাইন পিপল নামে ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলি, সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন মানুষ যুক্ত হচ্ছিল। আমরা সেখানে সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম যে আমরা শুধু নদী নিয়ে কাজ করবো। ওইখানেই আমরা পরিকল্পনা করছিলাম কীভাবে এটাকে অনলাইন থেকে অফলাইনে নেওয়া যায়, এবং কোনো একটা দিন যেন আমরা গ্রুপের সবাই অফলাইনে দেখা করতে পারি। দ্বিতীয় আরেকটা মনে হচ্ছিল যে নানা কিছু নিয়ে দিবস আছে, কিন্তু নদী নিয়ে কোনো দিবস নাই। গুগল সার্চ করতে করতে এক জায়গায় দেখলাম নদী নিয়ে একটা দিবস পালিত হয়। মার্ক এঞ্জেলো বলে এক ভদ্রলোক, উনি এটার সূচনা করেন এবং জাতিসংঘ ২০০৫ সালে এর স্বীকৃতি দেয়। এবং তার মাত্র ৫ বছর পরে, ২০১০ সালে আমরা বাংলাদেশে এই দিবস পালন করি। আমরা মার্ক এঞ্জেলোকে মেইল করি যে আমরাও এই দিবস বাংলাদেশে পালন করতে চাই, তো উনি প্রথমে বেশ অবাক হলেন যে- বাংলাদেশ! তারপর উনি বেশ উৎসাহী হলেন যে আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা এটা করো, আমার বিশেষ নজর থাকবে তোমাদের প্রতি। এখন প্রতি দিবসে তো একটা প্রতিপাদ্য থাকে, দেখলাম যে নদী দিবসে কোনো প্রতিপাদ্য নাই। আমরা আবার তাকে মেইল পাঠালাম প্রতিপাদ্য চেয়ে, উনি বললেন এটার কোনো প্রতিপাদ্য নেই; এটা অঞ্চল ভেদে, দেশ ভেদে আলাদা আলাদা হয়। তখন উনি বললেন তোমরা তোমাদের প্রতিপাদ্য ঠিক করো, আমি অনুমতি দিয়ে দিচ্ছি। তিনি একটা চিঠি দিয়ে আমাদের অনুমতি দিলেন।

প্রিয়.কম: প্রথম প্রতিপাদ্য কী ছিল, মনে আছে?

শেখ রোকন: হ্যাঁ, আমার এখনো মনে আছে। প্রথম প্রতিপাদ্য ছিল- ‘নদীরা ডাকছে, আমাদের সাড়া দিতে হবে’।

প্রিয়.কম: এবারের প্রতিপাদ্য কী?

শেখ রোকন: দখল-দূষণমুক্ত প্রবহমান নদী; বাঁচবে প্রাণ ও প্রকৃতি

প্রিয়.কম: 'রিভারাইন পিপল' এর শুরুরটা...

শেখ রোকন: এটা সৃষ্টি হয়েছে তরুণদের হাত ধরে। নদী দিবসের প্রচলনও করেছে বাংলাদেশের তরুণরা। আমরা নানা সময় বলি, ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এমন কী গণজাগরণ- সবকিছুই তরুণদের হাত ধরেই এসেছে, নদীর ক্ষেত্রেও এটাই হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যেমেই জন্ম।

প্রিয় সাক্ষাৎকার/গোরা 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...