নিঃসঙ্গতা তৈরি হতে পারে নিজের নেতিবাচক মনোভাবের কারণেও। মডেল: মারিয়া, ছবি: নূর।

কী কারণে একজন মানুষ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন?

ঘরভর্তি মানুষের মাঝে থেকেও কেউ অনেকখানি নিঃসঙ্গতা অনুভব করতে পারেন।তাঁর মনে হতে পারে যে জগতে আপন কেউ-ই নেই!

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:১৭ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৯:০০
প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:১৭ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৯:০০


নিঃসঙ্গতা তৈরি হতে পারে নিজের নেতিবাচক মনোভাবের কারণেও। মডেল: মারিয়া, ছবি: নূর।

(প্রিয়.কম) জাপানের বিখ্যাত লেখক হারুকি মুরাকামি লিখেছেন, "মানুষ কেন নিঃসঙ্গ হবে? এর কারনটা কী? এই পৃথিবীতে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ রয়েছে। সকলের মাঝেই রয়েছে আকাঙ্ক্ষা। সকলেই অন্যের কাছ থেকে নিজের জন্য সন্তুষ্টি খোঁজে, অথচ তারা নিজেদেরকে সকলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, নিজেদের বন্দী করে রাখে। এই পৃথিবী কি তৈরি হয়েছিল মানুষদের মাঝে নিঃসঙ্গতা তৈরি করার জন্যে?" মুরাকামি একদম সঠিক কথা ব্যক্ত করেছেন তাঁর লেখার মাধ্যমে। একজন মানুষের জীবন যদি শুধু নিঃসঙ্গতা দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে, তবে তার জন্যে ভবিষ্যৎ দিনগুলো পার করা খুব কষ্টকর হয়ে যায়। এমনকি, জীবনের মানে খুঁজে পাওয়াও তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে।

কেউ যখন অনেক বেশি একাকী হয়ে পড়েন, নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তখন তার জন্য স্বাভাবিকভাবে দিনাতিপাত করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। গবেষকেরা জানায়, সামাজিকভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ার ফলে অপরিণত বয়সে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যায়। একজন মানুষ যখন সামাজিকভাবে সকলের সাথে সংযুক্ত হতে পারে, মিশতে পারেন তখনই সে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করেন। নিঃসঙ্গতা কি নিজের সাথেই নিজের লড়াই? হ্যাঁ, নিঃসঙ্গতা তৈরি হয়ে থাকে অনেকাংশে নিজের ভেতর থেকেই। নিজের কিছু ঘটনা, দূর্ঘটনা ও ভুল ধারণা থেকে। কী সেই কারণগুলো? এখানে তুলে ধরা হলও এমন কিছু কারণ যা একজন মানুষের মাঝে তৈরি করে দেয় নিঃসঙ্গতা।

নিজেদের ধারণার সাথে বাস্তবতা যখন খাপ খায় না

নিঃসঙ্গতা একাকী থাকার কোন লক্ষণ নয়। ঘরভর্তি মানুষের মাঝে থেকেও কেউ অনেকখানি নিঃসঙ্গতা অনুভব করতে পারেন, যতোটা নিঃসঙ্গতা হয়তো একাকী ছাদে বসেও সে অনুভব করেন না। এর মূল কারণ হলো, আমরা নিজেদের জন্য এমন কিছু মানুষকে মনে মনে খুঁজি, যাদেরকে বাস্তবে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। এছাড়াও অন্য আরেকটি কারণ সম্পর্ক ও যোগাযোগ তৈরির ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। আমরা একটা ভ্রান্ত ধারণা বহন করি নিজেদের মাঝে। আমরা ভাবি, অন্যান্য মানুষদের মাঝে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারব না। নিজেদেরকে সকলের মাঝে বড় বেমানান মনে হতে থাকে। এর ফলে যখনই মানুষের সাথে নিজের ধারণা ও ভাবনার অমিল দেখা দেয়, তখনই নিঃসঙ্গতা তৈরি হয়।

অতীতের কোন বাজে অভিজ্ঞতার ফলে নিজেদের মাঝে গড়ে ওঠা অভ্যাস

সকলের জীবন খুব সাধারণ, ছিমছাম হয় না। বেড়ে ওঠার সময়টা সকলের জন্য খুব একটা আনন্দদায়ক হয় না। ছেলেবেলায় ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনার ফলে অনেকের আচরণ ও অভ্যাসে পরিবর্তন চলে আসে। এছাড়াও খুব কড়া শাসনে বড় হওয়া, ভেঙে যাওয়া পরিবারে বড় হওয়া সন্তানেরাও পরিণত বয়সে সহজে কারোর সাথে মিশতে পারেন না। তারা নিজেদের চারপাশে একটি অদৃশ্য দেয়াল তুলে রাখেন, অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে এবং দূরে সরিয়ে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যার মূল কারণ, তারা তাদের আশেপাশের কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেন না। তাদের মাঝে একটি ধারণা ছোটবেলা থেকেই গড়ে ওঠে- অনুভূতি, আবেগ, বিশ্বাস জীবনে শুধুমাত্র কষ্টই বয়ে আনে। যে কারণে তারা এমন কিছু আচরণ রপ্ত করে ফেলেন ছোটবেলা থেকেই, যা তাদেরকে অন্যদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। মুরাকামি তার লেখায় খুব চমৎকার একটি কথা বলেছেন, "মানুষ যখন তার হৃদয়কে উন্মুক্ত করে দেয় তখন কী ঘটে? তারা আগের চাইতে আরও উন্নত ও ভালো হয়ে ওঠে।" মুরাকামি এই কথাটি কেন বলেছেন জানেন কি? কারণ, অন্যের সাথে মেশার ফলে নিজের মনের ক্ষত সারিয়ে ফেলা সম্ভব হয়।

নিঃসঙ্গতা

নিজের সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক ধারণা রাখা

জানেন, সবসময় কোন ব্যাপারটি জিতে যায়? আমাদের নিজেদের মাঝে তৈরি হওয়া নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা। আর হেরে যাই আমরা, নিজের কাছেই। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমরা নিজেরা নিজেকে খুব ছোট মনে করি। নিজের সম্পর্কে নিজের ধারণা এতোটাই অসম্মানজনক হয়ে ওঠে যে আমরা ভেবেই নেই আমরা অন্যান্য সকলের সাথে মেশার যোগ্যতা রাখি না! যার ফলে, নিজেদের আমরা সকলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখি। কারোর সাথে সম্পর্ক তৈরি করার ব্যাপারে ভীত হয়ে পড়ি। নিজেদের চারপাশে থাকে অদৃশ্য দেয়ালের উচ্চতা আরও খানিকটা বাড়িয়ে ফেলি নিজেদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনার কারণে।

জীবনের নেতিবাচক দিকের প্রতি বেশী লক্ষ্য করা

অনেকেই তার জীবনে শুধুমাত্র নেতিবাচক সকল কিছুর প্রতি বেশী আলোকপাত করে থাকেন। অথচ খুঁজলে দেখা যাবে, তার জীবনে নেতিবাচক ঘটনার পাশাপাশি রয়েছে অফুরান ইতিবাচক ঘটনা ও দিক। কেউ কী দেখতে চাইবেন, সেটা নির্ভর করে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির উপর। আপনি যদি চান শুধুমাত্র ইতিবাচক ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব দিতে, তবে খেয়াল করবেন কঠিন কোন মুহুর্তের মাঝে থেকেও আপনি ইতিবাচক দিক তুলে আনতে পারবেন। কিন্তু যদি কেউ সকল কিছুর মাঝে থেকে শুধুমাত্র নেতিবাচক দিকগুলোকেই খেয়াল করেন, তবে সে নিজের অজান্তেই নিজেকে নিঃসঙ্গ করে তুলছেন।

নিজেদের ‘কম্ফোর্ট জোন’ এর বাইরে না আসা

এই সমস্যাটি অনেকের মাঝেই দেখা যায়। নিজের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন, ভালোলাগাগুলোকে বাস্তবায়িত করার জন্য চেষ্টা ও পরিশ্রম না করে, শুধুমাত্র সেগুলো নিয়েই দিবাস্বপ্ন দেখা। নিজের কাঙ্ক্ষিত কোন কিছু পাওয়ার জন্য নিজের পরিচিত গণ্ডির বাইরে নিয়ে আসার প্রয়োজন হয়। আপনি যদি মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে চান, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চান তবে আপনাকে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করতে হবে, তাদেরকে জানার চেষ্টা করতে হবে। তবেই নিজের ইচ্ছার সাথে বাস্তবতার মেলবন্ধন তৈরি করা সম্ভব হবে। কিন্তু, নিজেকে নিজের তৈরিকৃত ‘কম্ফোর্ট জোন’ এর মাঝে আবদ্ধ করে রাখলে সেটা কখনোই সম্ভব হবে না এবং এভাবেই নিঃসঙ্গতা তৈরি হয়ে থাকে।

সূত্রpsych2go

প্রিয় লাইফ/ আর বি   

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...