ছবি: IFLScience

বিরল রোগে ঘামের সাথে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত

আপাতদৃষ্টিতে কোনো রকমের রোগ বা ক্ষত না থাকা সত্ত্বেও ২১ বছর বয়সী এক নারীর মুখমন্ডল এবং হাতের তালু থেকে ঘামের সাথে বের হয়ে আসছে রক্ত।

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:০১ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৫:০০
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:০১ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৫:০০


ছবি: IFLScience

(প্রিয়.কম) মাঝে মাঝেই এমন কিছু আকস্মিক ঘটনা ঘটে, যার কারণ আমাদের এত আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমেও ব্যাখ্যা করা যায় না। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ২১ বছর বয়সী এক নারীর ক্ষেত্রে। আপাতদৃষ্টিতে কোনো রকমের রোগ বা ক্ষত না থাকা সত্ত্বেও তার মুখমন্ডল এবং হাতের তালু থেকে ঘামের সাথে বের হয়ে আসছে রক্ত। 

ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরেন্সের দুই ডাক্তারের কেস স্টাডি অনুযায়ী, রক্তপাতের ফলে লজ্জায় সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এই রোগী। 

কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত এই লেখায় বলা হয়, সেই নারীর রোগটি হলো হেমাটোহাইড্রোসিস। অদ্ভুত হলেও সত্যি, ইতিহাসে এই প্রথম নয় এমন ব্যাপার। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির বর্ণনায় পাওয়া যায় এমন এক সৈনিকের কথা, যুদ্ধে যাবার আগে যার ঘামের সাথে এমন রক্তপাত হচ্ছিল। 

অতীতে এই ধরণের লক্ষণ পাওয়া গেছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। যেমন, মুখের ত্বক ঘামের সাথে রক্তপাত, নখের ভেতর থেকে এবং নাভি থেকে রক্তপাত। নাক দিয়ে প্রচুর রক্ত পড়া এমনকি কান্নার সাথে রক্তপাতের কথাও জানা যায়। কান্নার সাথে রক্ত পড়ার এই অবস্থাকে বলা হয় হিমোল্যাক্রিয়া- যা অনেক সময়েই ক্ষত বা ইনফেকশন থেকে ঘটে। 

রক্তপাত

বামের ছবিতে সেই ইতালীয় নারীর মুখমন্ডল, এবং ডানের ছবিতে দেখা যাচ্ছে মাইক্রোস্কোপের নিচে তার ত্বক, কোনো সমস্যাই নেই তাতে। ছবি: IFLScience

কিন্তু এই ক্ষেত্রে, সেই ইতালীয় নারীর রক্তপাতের পেছনে নেই কোনো ইনফেকশন। তার লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা- সবগুলোই স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। 

এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা কী? সম্ভবত ঘামগ্রন্থির আশেপাশের মিহি রক্তনালিকাগুলো ভেঙ্গে গিয়ে এমন হচ্ছে। ফলে এসব গ্রন্থি থেকে রক্তপাত হচ্ছে। কিন্তু হেমাটোহাইড্রোসিসের এই রক্তপাতের পেছনে যে কোনো একটি কারণকে দায়ী করা যায় না বলে জানান লেখকেরা। অনেক হাইপোথিসিস আছে বটে, কিন্তু তার কোনোটিই এখনো প্রমাণিত হয়নি। 

ধরে নেওয়া হয় যে, এমন একটি জটিলতার পেছনে মূলত প্রচন্ড মানসিক চাপ কাজ করে। এ কারণে এমন রোগীদের সাধারণত স্ট্রেস কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। নতুন এই রোগী, যার লক্ষণগুলো মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার এবং প্যানিক ডিজঅর্ডারের সাথে জড়িত। তাকে অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ দেওয়ার পরেও তার ঘামের সাথে রক্তপাত হতে থাকে। রক্তচাপ কমানোর ওষুধ দেওয়ার পরে কিছুটা কমে, কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয় না। 

দি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কিছু কিছু ধর্মগ্রন্থে এমন ঘটনার কথা জানা যায়। এত ভয়াবহ লক্ষণ হওয়া সত্ত্বেও হেমাটোহাইড্রোসিসে কারো মৃত্যু হয়েছে এমনটা জানা যায়নি। তবে এই জটিলতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করাটা একরকম অসম্ভবই বটে। 

সূত্র: IFLscience, The Guardian

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...