দেবাশীষ বিশ্বাস। ছবি: তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সংগৃহীত।

প্রতিদিনই দুর্গা মায়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়, কথাও হয়: দেবাশীষ বিশ্বাস

‘কোনোবার এমন হয়নি যে ৬০ থেকে ৭০ টি পূজা মণ্ডপ না ঘুরে আমার পূজা শেষ হয়েছে’।

শিবলী আহমেদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:২৮ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ২০:০০
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:২৮ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ২০:০০


দেবাশীষ বিশ্বাস। ছবি: তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সংগৃহীত।

(প্রিয়.কম) আসছে দুর্গাপূজা। আসছেন মা, দুর্গতিনাশিনী মা। এবার মা আসবেন নৌকা চড়ে আর যাবেন ঘোটকে চড়ে। পূজা উপলক্ষে 'প্রিয়.কম' এর সঙ্গে দূরালাপনি আড্ডা হলো চলচ্চিত্র নির্মাতা ও জনপ্রিয় উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাসের। সর্বপ্রথম পূজামণ্ডপে যাওয়া, তার জীবনের স্মৃতিময় পূজা, পূজার কেনাকাটা, দুর্গা মায়ের বিসর্জনের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা, পূজার আড্ডা, দুর্গা মায়ের কাছে তার এবারের চাওয়া এবং দুর্গা মাকে তিনি কতটা মনে ও প্রাণে ধারণ করেন-সে সব বিষয়ে কথা হলো তার সঙ্গে।  

পূজা মণ্ডপে প্রথম যাওয়া...

দেবাশীষ বিশ্বাস: আমার যতদূর মনে পড়ে, ঢাকেশ্বরী থেকেই আমার সর্বপ্রথম পূজা মণ্ডপে যাওয়া আরকি। মানে পূজা মণ্ডপে যাওয়ার জীবন শুরু। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে পূজা মণ্ডপে যেতাম। অনুমানিক চার বছর বয়স থেকে যাওয়া শুরু হয়েছিল।

স্মৃতিময় পূজা...

দেবাশীষ বিশ্বাস: স্মৃতিময় পূজা বলতে, যখন আমি নিজেই ছোট ছিলাম, তখন পূজা মণ্ডপে যাওয়ার এক রকমের স্মৃতি। আবার- আরেকটি স্মৃতি হচ্ছে  জীবনে প্রথমবার যখন আমি আমার নিজের যে সন্তান, তাকে নিয়ে যখন বেরিয়েছিলাম- সেই স্মৃতি। মানে একটা হচ্ছে যখন আমি আমার বাবা মায়ের সঙ্গে বেরিয়েছিলাম, আরেকটা হচ্ছে আমি নিজেই যখন বাবা হয়ে আমার সন্তানকে হাতে ধরে পূজা মণ্ডপ ঘুরিয়েছি, দেখিয়েছি- উভয়ই আনন্দের স্মৃতি।

পূজার কেনাকাটা...

দেবাশীষ বিশ্বাস: কেনাকাটা কখনোই আমি করি না। করি না বলতে- আমার কেনাকাটা আমার মা-ই করেন সব সময়। সব কেনাকাটা সারাজীবন মা-ই করে দিয়েছেন, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে কিছু তো অবশ্যই উপহার পাই। সিংহভাগ উপহার মা-ই দেন। কেনাকাটা মানে এই বিষয়টি মায়ের উপরেই। মা-ই আমার সব কিছু কিনে দেন, জামা কাপড়সহ সবকিছুই।

দুর্গা মায়ের বিসর্জন...

দেবাশীষ বিশ্বাস: বিসর্জনের দিন অবশ্যই খুব খারাপ লাগে। আসলে বিসর্জন বিষয়টা হচ্ছে, আমি যদি বিসর্জন না দিই, তাহলে দুর্গা মা কিন্তু পরের বার আর আসবেন না। ঐ জন্যই বিসর্জন একপ্রকার দায়িত্ব, বিসর্জন এক প্রকার দুঃখবোধ। আবার একই সঙ্গে- সবার কাছে না হলেও বিসর্জন আমার কাছে এক প্রকার সুখবোধ। দুর্গা মা চলে যাচ্ছেন, কিন্তু চলে যাওয়া মানেই তো আর প্রস্থান নয়। চলে যাওয়া মানে হচ্ছে পরের বার আসা, পরের বার আসার সম্ভাবনা থাকা, তাই না?

বিসর্জনের অভিজ্ঞতা...

দেবাশীষ বিশ্বাস: বিসর্জনের অভিজ্ঞতা আছে আমার। আমি নিজেও বিসর্জন দিয়েছি। আমাদের আত্মিয়ের অনুষ্ঠানের জায়গা থেকে। আমার একটি বিসর্জনের স্মৃতি খুব মনে পড়ে, যেটি খুবই ইন্টারেস্টিং। সেটি হচ্ছে সিলেটে। সিলেটে আমি একবার পূজায় গিয়েছিলাম, সেটি আমার খুব স্মরণীয় একটি পূজা ছিল। আমার মাসী বাড়িতে। সিলেটে খুব সুন্দর পূজা হয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে- সিলেটবাসীদের শৃঙ্খলা বোধের জায়গাটি। যখন বিসর্জন হচ্ছিল, লাইনে লাইনে, এক সারিতে, সুরমা নদীর পাড়ে বিসর্জন হচ্ছিল। বিষয়টি এত সুন্দর ছিল যে, সেই স্মৃতিটি আমার খুব মনে আছে। আমার খুব ভালো লেগেছিল। অনেক মাকে একসঙ্গে দেখা। কেন না, প্রতিটি বিসর্জনের সময় তো দুর্গা মা-ই আসছেন একে একে, ক্রমে ক্রমে। শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বিসর্জন হচ্ছে, খুব সুন্দর লেগেছিল দেখতে। এছাড়াও আরও স্মৃতি বলতে- যেহেতু আমি বিনোদন জগতের মানুষ, টিভিতে অনুষ্ঠান করা, উপস্থাপনা করা, এগুলোও একেকটি সুখের স্মৃতি।

পূজার আড্ডা...

দেবাশীষ বিশ্বাস: পূজা বেসিক্যালি কিন্তু আড্ডারই সময়। কেন না, এ সময়টায় সবাই আমাদের বাড়িতে আসে, আমরাও অন্যদের বাড়িতে যাই, ঘুরি ফিরি, পূজা মণ্ডপগুলোতে যাই। আর একেবারে আমজনতা হিসেবে, নট অ্যাজ এ সেলিব্রিটি, আমাকে কিন্তু সব পূজা মণ্ডপেই আপনি পাবেন। মানে, শাঁখারিবাজার, তাঁতিবাজার, যেহেতু ওটা আমার মামা বাড়ি, আমার দাদু বাড়ি, নানু বাড়ি, এছাড়াও পুরনো ঢাকাকেও আমি বিলং করি। কারণ, আমার মায়ের বাড়ি তো পুরনো ঢাকায়, তো ঐ পুরনো ঢাকাতেই কিন্তু পূজা সবচেয়ে বেশি হয়। আনন্দটাও ওখানে সবচেয়ে বেশি হয়। ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে দলে দলে সবাই মিলে, পাড়া-পড়শি মিলে ঘুরতে যাওয়ার যে স্মৃতি, সেটি এখনো রয়েছে। এখনো আমরা ওভাবেই সবাই মিলে পূজা মণ্ডপগুলোতে যাই। শাঁখারিবাজার, তাঁতিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, গোয়ালনগর, এগুলো হচ্ছে পুরনো ঢাকার গল্প বলছি আরকি। জমিদার বাড়ি, তারপর এদিক থেকে জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী, রমনা কালী বাড়ি, আর ঢাকেশ্বরী বাড়ি- যেখান থেকে আমার পূজা শুরু হয়। কখনো কখনো এমনও হয় যে আমরা ঢাকার বাইরেও যাই। আমার আরেকটি দাদু বাড়ি রয়েছে নরসিংদীতে। সেখানকার পূজাও কিন্তু খুব বিখ্যাত। অসাধারণ অসাধারণ সব প্রতিমা হয় ওখানে। ওখানে আপনি যদি যান, আপনার মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাবে দুর্গা মায়ের প্রতিমা দেখে। আর যেহেতু আমি বনানী এবং কলাবাগান- এ দুটি পূজা কমিটির সঙ্গে কমবেশি জড়িত আছি, ওখানেও আমার ডাক পড়ে, ওখানেও আমাকে অনুষ্ঠান করতে হয়। ওখানে যাই। ওখানে তো যেতেই হয়। সেটি হচ্ছে নাগরিক পূজা। মডার্ন পূজা। ওখানেও যাই। বানানিতেও যাই, কলাবাগানেও যাই। সব জায়গাতেই আমি যাই। কোনদিন কোনোবার এমন হয়নি যে ৬০ থেকে ৭০ টি পূজা মণ্ডপ না ঘুরে আমার পূজা শেষ হয়েছে। পূজায় আমি সবখানেই যাই। কাউকে না পেলেও আমাকে পাবেন।

দুর্গা মায়ের কাছে এবারের চাওয়া...

দেবাশীষ বিশ্বাস: আমার মায়ের কাছে একটাই চাওয়া। দেশে এই যে অভাব অনটন চলছে, বিশেষ করে ক্লাইমেট সিচুয়েশন যে পরিমাণ খারাপ, মানে রাস্তায় বের হলেই মানুষের চেহারায় দেখতে পাবনে- মন ভালো নেই, মন খারাপ, দুঃখী দুঃখী ভাব। সবার মুখে হাসি ফোটানো তো সম্ভব নয়, তবে হাসির একটা কারণ যেন সবার মনে আসে- এটুকুই চাওয়া। মা আসুক, মা এসে সবার মনে একটু আনন্দ দিয়ে যাক। সেই আনন্দ যেন চিরস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী হয়।

দুর্গা মাকে কী শুধু পূজার সময়ই মনে পড়ে, নাকি সব সময়...

দেবাশীষ বিশ্বাস: আমার মা ছোটবেলা থেকেই আমাকে একটি পরিবেশ দিয়ে এসেছেন। আমার পারিবারিক পরিমণ্ডলটাই এমন যে পূজা পার্বণের সঙ্গে সব সময় জড়িত থাকা হয়। তো ঐ ফ্লেভারটি যেহেতু আছে তাই প্রতিদিনই দুর্গা মায়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়, দুর্গা মায়ের সঙ্গে আমার কথাও হয়, আমি নমস্কারও করি প্রতিদিন। এমন নয় যে এই সময়টায়ই শুধু আমি দুর্গা মাকে নিয়ে মেতে থাকি। তা নয়।

প্রিয় বিনোদন/গোরা 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...