অপর পাশে আরেকটি উইকেটের পতন, তাকিয়ে আছেন মুশফিক। ছবি: এএফপি

হারই হয়ে উঠেছে অমোঘ নিয়তি

তবে কি টস জয়ই এই সফরের একমাত্র ‘সফলতা’? দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের একমাত্র জয় এই টসেই।

শান্ত মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ২২:০৯ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৩২
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ২২:০৯ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৩২


অপর পাশে আরেকটি উইকেটের পতন, তাকিয়ে আছেন মুশফিক। ছবি: এএফপি

(প্রিয়.কম) ব্যাটিংয়ের শুরুই বলে দিচ্ছিল প্রতিপক্ষের গড়া রান পাহাড় মাথায় নিয়েই নেমেছিলেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। শুরু থেকেই দ্রুত ব্যাট চালাতে চাইলেন তারা। কিছুটা সময়ের জন্য মনে হল ঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ। কিন্তু সাত ওভার পেরতেই বেসামাল মাশরাফিবাহিনী। মাঝে মাঝে প্রতিরোধ এলো। কিন্তু লক্ষ্য সেই দূরের পথই থেকে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ।  

বুধবার পার্লে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ১০৪ রানের এই হারে সিরিজ থেকে ছিটকে যেতে হল বাংলাদেশকে। ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারের পর এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ওয়ানডে সিরিজ খোয়ালেন মাশরাফিরা। ম্যাচটি যে হাতের নাগালে নেই প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ের পরই সেটা পরিস্কার হয়ে যায়। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এবি ডি ভিলিয়ার্সের ১৭৬ ও হাশিম আমলার ৮৫ রানের সুবাদে ছয় উইকেটে ৩৫৩ রান তোলে স্বাগতিকরা। জবাবে ২৪৯ রান তুলতেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

তবে কি টস জয়ই এই সফরের একমাত্র ‘সফলতা’? দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের একমাত্র জয় এই টসেই। টেস্ট সিরিজের মতো দুই ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের টসভাগ্য হেসেছে। কিন্তু যে টস জয় অনেক সময় প্রতিপক্ষের সঙ্গে পার্থক্য গড়ে দেয় সেই টস জিতে বাংলাদেশ নিজেদের হাসির পাত্রে পরিণত করেছে। টেস্ট সিরিজে এ নিয়ে কম আলোচনো-সমালোচনা হয়নি। ওয়ানডেতে তেমন আলোচনা না থাকলেও টস জয়ের কোনও সুবিধা এখন পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারেনি মাশরাফির দল। হারই হয়ে উঠেছে অমোঘ নিয়তি।

চোট কাটিয়ে দলে ফেরা তামিম ইকবালের দিকে তাকিয়ে ছিল সবাই। ৩৫৪ রানের মতো বিশাল লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে তামিমের ব্যাট না হাসলে কাজটা করা কঠিন হবে, তা জানা ছিল দলেরও। বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়া বোলারদের শাসন করে খেলতে চাইলেন তামিম। ইমরুল কায়েসকে সঙ্গে নিয়ে হাত খুলেই খেলতে শুরু করেন ইনজুরির কারণে দ্বিতীয় টেস্ট ও প্রথম ওয়ানডেতে দলের বাইরে থাকা তামিম।

ব্যাটে-বলেও হচ্ছিল। কিন্তু পথটা দীর্ঘ করতে পারলেন না বাংলাদেশ ওপেনার। ২৩ রান করেই সাজঘরে তামিম। ভরসা হয়ে উঠতে পারলেন না লিটন কুমার দাসও। ১৪ রান করে হাঁটা দিলেন ড্রেসিংরুমের পথে। এরপর কিছুটা সময় ভাল কেটেছে বাংলাদেশের। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে কিছুটা সময় লড়াই করেন আগের ম্যাচে ১১০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিম।

এই জুটিতেই স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এই জুটি ১০০ পেরতে পারেনি। ৭৭ বলে ছয় চার ও এক ছয়ে ৬৮ রান করা ইমরুলের বিদায়ে ভাঙে ৯৩ রানের এই জুটি। এখান থেকে আবারও পতনের শুরু। দলকে মাঝ দরিয়ায় রেখে বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। মুশফিকও আর খেই ধরে রাখতে পারেননি। ৭০ বলে চার চার ও এক ছয়ে ৬০ রান করে থামেন ডানহাতি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। 

এরপর কেউ আর সেভাবে স্বপ্ন দেখাতে পারেননি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেন ডুয়াইন প্রিটোরিয়াস, আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো, ইমরান তাহিররা। এর মাঝেও হারের ব্যবধান কমাতে ব্যাট চালিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ডানহাতি এই অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। সাব্বির রহমান করেন ১৭ রান। অলআউট হওয়ার লজ্জা থেকে দলকে বাঁচানোর মিশনে নাম লেখিয়েও সেটা করতে পারেননি তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন। বাংলাদেশ থামে ২৪৯ রানে। 

এরআগে বল হাতে বাংলাদেশের শুরু দেখে প্রথমবারের মতো আশা জেগে উঠেছিল। উইকেট না নিতে পারলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তাসকিন আহমেদ মিলে দলকে ভাল সূচনা এনে দেন। মনে হচ্ছিল লড়াকু বাংলাদেশকেই যাবে। উইকেটেরও দেখা মেলে। ছয়টি উইকেট তুলে নেন রুবেল-সাকিবরা।

কিন্তু এই ছয় উইকেট হারানোর আগেই রান পাহাড় গড়ে ফেলে প্রোটিয়ারা। ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দেন সাড়ে চার মাস পর ক্রিকেটে ফেরা এবি ডি ভিলিয়ার্স। বাংলাদেশের বোলারদের সীমানা ছাড়া করে দানবীয় ইনিংস খেলেছেন মি. ৩৬০ খ্যাত ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকার তোলা ৩৫৪ রানের মধ্যে ১৭৬ রানই করেন ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক ভিলিয়ার্স।

এদিন উইকেটের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে হাহাকার করতে হয়নি বাংলাদেশের বোলারদের। ১৮তম ওভারে গিয়ে আগের ম্যাচের অপরাজিত সেঞ্চুরিয়ান কুইন্টন ডি কককে ফেরান সাকিব আল হাসান। ৪৬ রান করে বিদায় নেন বাঁ-হাতি এই প্রোটিয়া ওপেনার। এতেই থামেননি সাকিব। ১৮তম ওভারের শেষ বলে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিকেও সাজঘর দেখিয়ে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

কিছুটা চাপেই পড়ে যায় স্বাগতিকরা। কিন্তু কীসের কি চাপ! হাশিম আমলার সাথে যোগ দিয়ে নিমেষেই আবহাওয়া বদলে দেন ডি ভিলিয়ার্স। তৃতীয় উইকেটে ১৩৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন এ দু’জন। তবে এই জুটিতে ভিলিয়ার্সের অবদানই বেশি। ১৩৬ রানের মধ্যে ভিলিয়ার্সই করেন ৮৬ রান। আমলার ব্যাট থেকে আসে ৪৭ রান। দুই জনই সেঞ্চুরির পথে ছিলেন।

যদিও বাংলাদেশ পেসার রুবেল হোসেনের বাধায় টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিতে পারেননি আগের ম্যাচে ১১০ রানে অপরাজিত থাকা আমলা। ৮৫ রান করে বিদায় নেন ডানহাতি এই প্রোটিয়া ওপেনার। আমলা ফিরলেও ৬৮ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৫তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ভিলিয়ার্স। সেঞ্চুরির পরই মূলত তান্ডব চালান এই ব্যাটিং দানব। সাকিব, মাশরাফি, তাসকিনদের বল আছড়ে ফেলতে থাকেন সীমানার ওপাশে। 

শেষপর্যন্ত ১০৪ বলে ১৫ চার ও সাত ছয়ে ১৭৬ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেন ম্যাচসেরা ভিলিয়ার্স। এটাই তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। ভিলিয়ার্সের ব্যাটেই ছয় উইকেটে ৩৫৩ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। জেপি ডুমিনি করেন ৩০ রান। বাংলাদেশের রুবেল চারটি ও সাকিব দুটি উইকেট নেন। তবে এই উইকেটগুলো কাজে আসেনি। উইকেট নেওয়ার আগেই আসল কাজ করে নিয়েছেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা।

 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...