অরিন্দম শীল/ ছবি : রিপন/ প্রিয়.কম।

যৌথ উদ্যোগের নামে সেটাকে একটা প্রহসন করতে পারি না : অরিন্দম শীল

কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা অরিন্দম শীল। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় এবার তিনি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন চলচ্চিত্র 'বালিঘর'।

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:২৮ আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৯:৩২
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:২৮ আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৯:৩২


অরিন্দম শীল/ ছবি : রিপন/ প্রিয়.কম।

(প্রিয়.কম) কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা অরিন্দম শীল। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় এবার তিনি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন চলচ্চিত্র 'বালিঘর'। বাংলাদেশের বেঙ্গল ক্রিয়েশন্স-এর সঙ্গে থাকছে ভারতের নাথিং বিয়ন্ড সিনেমা। ছবিতে কলকাতার তারকাদের পাশাপাশি থাকবেন বাংলাদেশের প্রথম সারির তারকারাও। আগামী মার্চ মাস থেকে ছবিটির কাজ শুরু হবে। ২০ জানুয়ারি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দুটি। এরপর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এ নির্মাতা। তারই কিছু অংশ প্রিয়.কমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রিয়.কম: যতদূর জানি প্রায় বছর খানেক ধরেই ‘বালিঘর’ সিনেমাটি নির্মাণের কথা আপনি ভাবছিলেন...

অরিন্দম শীল: ছবিটি নিয়ে প্রায় ১ বছর ধরে ভাবনা কিংবা কথাবার্তার চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিক রূপ পেল এখন। বছর খানেক আগে আমরা যখন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য রচিত ‘ঢেউ আসে ঢেউ যায়’ উপন্যাসটি পড়লাম। তখন মনে হলো কাহিনিটি নিয়ে দুই দেশের জন্য সব থেকে যোগ্য একটা ছবি হতে পারে। অনেক শিল্পীকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। সেখান থেকেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন একটু একটু করে শুরু করি। আরেকটা বিষয় আমার চলচ্চিত্রে কনটেন্টকে আমি গুরুত্ব দিই, এবং সেটার সঙ্গে লোকেশনটাও। সব মিলিয়ে বেঙ্গলের মতো প্রতিষ্ঠান যখন চলচ্চিত্রটি নির্মাণে এগিয়ে এলো তখনই আমি স্থির হলাম।

প্রিয়.কম: বাংলাদেশে সিনেমায় এখন এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। এরইমধ্যে আপনি যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি নির্মাণ করার সিদ্বান্ত গ্রহণ করেছেন?

অরিন্দম শীল: ছবিটি যৌথ উদ্যোগের হলেও ৯৫ ভাগ শুটিং হবে বাংলাদেশে। সেটা একটা বিরাট কথা। আমার মনে হয় যখন দুটি দেশ মিলে কাজ হয় তখন সেটির মধ্যে যদি সুস্থ ভাবনা থাকে, সততা থাকে তখন সেটি আরেক ধাপ অনায়াসেই এগিয়ে যেতে পারে। তা না হলে হয় না। আমি যৌথ উদ্যোগের নামে সেটাকে একটা প্রহসন করতে পারি না। আজকে আমার দেশে দাঁড়িয়ে আমার মতো করে একটি চলচ্চিত্র করতে পারি। কিন্তু দুটো দেশ মিলিয়ে যখন একটি চলচ্চিত্র হচ্ছে, সেটি তো একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র হবে। আর কাজের ক্ষেত্রেও আমাদের সে মান বজায় রাখতে হবে।

আমাদের এ যৌথ উদ্যোগের ভাষা এক। আর একটা উদ্যোগের ভাষা যখন এক হয়, তখন তার পরিধি বিশাল আকার ধারণ করে। এই পরিধি যখন এ দেশ ভাগ হয়নি তখনও ছিল। এরপর যখন ভাগ হয়েছে, তারপরও আছে। কিন্তু এই পরিধির ব্যাপ্তি আমরা স্বীকার করতে অস্বীকার করেছি। আমার বারবার মনে হয়েছে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এই সময়টা আসা প্রয়োজন। যে কারণে আমরা স্বীকার করে নিতে পারি। সে কারণে বেঙ্গল ক্রিয়েশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের দরকার। যে জোর এ ধরনের কাজ করতে পারে। দুই দেশের ভালোটাকে নিয়ে আরও ভাল কিছু করার স্বপ্ন দেখেতে পারেন তারা।

প্রিয়.কম: এটি তো আপনার নবম ছবি। যৌথ প্রযোজনায় 'বালিঘর' নির্মাণের ক্ষেত্রে আপনার আগ্রহবোধের কারণটা কী?

অরিন্দম শীল: দুই দেশের মাঝে যৌথ উদ্যোগ এবং সেই উদ্যোগ চলচ্চিত্রের, এবং শিল্পের। এবং সে কাজটি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশের বেঙ্গল ক্রিয়েশনস। একমাত্র এ প্রতিষ্ঠানটি এ ছবির সঙ্গে সামিল হয়েছে বলেই এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণে রাজি হয়েছি। প্রায় বছর খানেক আগে আমার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু ভাই যোগাযোগ করেন। এরপর কাজের বিষয় নিয়ে কথা হয়। এখন সেই সময়টা এলো।

আমি এ গল্পটি নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি এ কারণে যে, আমাদের শুধু যে ভাষা এক, তা নয়। আমাদের সংস্কৃতি এক। আমাদের আচার ব্যাবহার অনেক কিছু এক। সব থেকে বড় ব্যাপার আমাদের ইমোশন এক। আমরা এক ভাষায় কাঁদতে পারি, এক ভাষায় হাসতে পারি। এই রকম একটা ইমোশন নিয়ে যদি চলচ্চিত্র করা যায়, হয়তো মন্দ হয় না। এই চলচ্চিত্র সম্পূর্ণভাবে একটি রিলেশনশিপ ভিত্তিক কাজ হবে।

প্রিয়.কম: অনেক তারকা শিল্পী তো আপনার এ ছবিতে অভিনয় করবেন...

অরিন্দম শীল: আমার চলচ্চিত্রে চরিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণ যে ধারা, সেটিকে ভেঙে কাজ করতে ভালোবাসি। আরিফিন শুভ মূলত বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র কাজ করে। কিন্তু আমি দু-রকম চলচ্চিত্রে বিশ্বাস করি, একটি ভালো চলচ্চিত্র অন্যটি খারাপ। তার বাইরে কোন চলচ্চিত্র হয় বলে আমি মনে করি না। একটা ভাল চলচ্চিত্র করতে গেলে তো ভালো শিল্পী দরকার। শুভর মধ্যে সে জায়গাটা আছে। অনেক উঁচু মানের শিল্পী সে। তিশাও অনেক বড় মাপের শিল্পী। আমরা কলকাতা থেকে যাদের নির্বাচন করেছি তারা প্রত্যেকেই আদতে শিল্পী। সেই জায়গাটাতেই বেশ জোড় দিই সব সময়।

প্রিয়.কম: বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে যে এ সিনেমাটি নির্মাণ করবেন, সেটি কী শুরুর দিকে আপনার ভাবনায় ছিল?

অরিন্দম শীল: বাংলাদেশ থেকে কোন শিল্পীকে নিয়ে যে কাজ করব, সেটি সত্যি কথা বলতে গেলে প্রথমে ভাবিনি। সবার প্রতি সম্মান নিয়েই কথাটি বলছি। কিন্তু এরইমধ্যে আমি শুভর কাজ দেখলাম। তখন আমি দুবাইতে ছিলাম। কি অদ্ভূত যোগাযোগ! আমি একজনের মাধ্যমে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। এরপর আমরা মিলিত হই। আমরা ঘণ্টা দু-তিনেকের সময় পেয়েছিলাম। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আমি মনস্থির করে ফেলেছি মধুময় চরিত্রে শুভ ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। ওর মধ্যে এক অসম্ভব সম্ভাবনা আছে। আমি একজন পরিচালক হিসেবে, আমার যতটুকু বিদ্যা-বুদ্ধি আছে, আমি কিন্তু ওকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’র স্টার হিসেবে নিইনি। আমি ওকে নিয়েছি একজন অসম্ভব ভালো অভিনেতা হিসেবে।

প্রিয়.কম: বাংলাদেশের সিনেমায় যতগুলো সংকট রয়েছে, তারমধ্যে একটি হলো প্রেক্ষাগৃহ সংকট। এতো এতো তারকা শিল্পী অভিনয় করছেন এ ছবিতে সে জায়গা তো বাণিজ্যের একটা প্রসঙ্গ কিন্তু চলেই আসে...

অরিন্দম শীল: একটা বিষয় দেখুন, বাংলাদেশে সিনেমার হলের সংখ্যার পরিমাণ অনেক কম। সে দিকটায় একটা সমস্যা আছে। তবে আরেকটা বিরাট অ্যাডভানটেজ রয়েছে, সেটা হচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে এতো বাঙালি! দুই বাংলার বাঙালিদের একত্রিত করলে পৃথিবীতে পঞ্চম জাতি হিসেবে আমরা রয়েছি। তো সেই জায়গা থেকে সেই সমস্ত বাঙালিদের কাছে আমরা পৌঁছতে পারি। তাহলে তো বিশাল একটা মার্কেট রয়েছে। 

প্রিয়.কম: আপনার প্রথম ছবি ‘আবর্ত’তে সর্ম্পেকের বেশ টানাপোড়েন দেখিয়েছেন, এরপর আপনি আরও বেশিকিছু ছবি নির্মাণ করেছেন, গল্পের ভিন্নতা ছিল, সে দিক থেকে এ ছবিটি ঠিক কেমন হবে?

অরিন্দম শীল: যে সম্পর্ক আমাদের দৈনন্দিন, যে সম্পর্ক আমাদের প্রতিদিনের বাস্তব জীবনে, যেমন-স্বামী, স্ত্রী, বন্ধু, তার বাইরেও অনেক সম্পর্ক রয়েছে। সে সমস্ত ধরনের সম্পর্ক নিয়ে এ ছবিটি। সেখানে সন্তানের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক যেমন, সেটিও রয়েছে। পুরো পৃথিবী এখন অস্থির একটা সময় অতিক্রম করছে। সে কারণে আমার বারবার মনে হয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য, কোন পৃথিবী রেখে যাচ্ছি। আমার সন্তানদের জন্য সুন্দর একটা পৃথিবী রেখে যেতে পারলে মনে হয়, ভালো হয়। সেটা কী আমরা রেখে যেতে পারছি?

প্রিয় বিনোদন/গোরা 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...