(প্রিয়.কম) মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে এএফপি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর একটার কিছু পরে এই কম্পন অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে।
নিহতদের বেশিরভাগই মোরেলস প্রদেশের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ভূমিকম্পের পর পর কাজ শুরু করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। এই বিপর্যয়ে দেশবাসীকে শান্ত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, মেক্সিকো শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে পুয়েবলা রাজ্যের আতেনসিঙ্গো এলাকায় এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল এবং প্রায় ৫১ কিলামিটার জুড়ে এর ভূ-কম্পন হয়েছে।
দেশটির সিভিল প্রটেকশনের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর বিবিসিকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৫০-এর কাছাকাছি। এর মধ্যে মোরেলস রাজ্যে ৭১ জন, পুয়েবলা রাজ্যে ৪৩ জন, মেক্সিকো সিটিতে ৮৬ জন, মেক্সিকো রাজ্যে ১২ জন এবং অন্যরা অন্যান্য রাজ্যের।
প্রেসিডেন্ট পেনা নিয়েতো জানিয়েছেন, মেক্সিকো শহরের দক্ষিণ কোয়েপা জেলার একটি স্কুল ধসে পড়ার পর সেখান থেকে ২০ জনেরও বেশি শিশু ও দুইজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ৩০ জন শিশু ও আটজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি হচ্ছে মেক্সিকো শহর, এর মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রায় ২ কোটিরও বেশি লোকের বসবাস।
মেক্সিকোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতা। ছবি: এএফপি
মেক্সিকো শহরের মেয়র মিগুয়েল অ্যাঙ্গেল টেলেভিসা জানিয়েছেন, ৪৪টি স্থানে ভবন ধস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং উদ্ধার কাজ চলছে। ২০টিরও বেশি ভবন পুরোপুরি ধসে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনে আগুন ধরে গেছে। তার ভেতরেই অনেকে আটকে পড়েছেন।
রাজধানীর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে এবং ফোন লাইন বিকল হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় রাজধানীর প্রায় ২০ লাখ মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। বাসিন্দাদের অফিসিয়ালি রাস্তায় ধূমপানে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ গ্যাসের লাইন ছিদ্র হয়ে থাকতে পারে।
ভূম্পিকম্পে ধসে পড়েছে একটি ভবন। ছবি: এএফপি
দেশটির প্রেসিডেন্ট দুর্গত এলাকায় জরুরি সেবা কার্যক্রম চালাতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
একটি ধসে যাওয়া ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে জুয়ান জিসাস গার্সিয়া বলেন, ‘আমার স্ত্রী ভবনটির ভেতরে রয়েছে কিন্তু আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।’
মেক্সিকো শহরের ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একজন শিক্ষক জেনিফার সোয়াডল বিবিসিকে বলেন, ভূমিকম্পের আঘাতে স্কুলের ক্লাসরুমের একাংশ ধসে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার ক্লাসরুমের বাইরের একটি দেয়াল ধসে পড়ায় আমরা দ্রুত বাইরে বের হয়ে আসি। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের কেউ হতাহত হয়নি। না হলে এটি ভয়ঙ্কর হতে পারত।’
মেক্সিকো রাজ্যের গভর্নর আলফ্রেদো ডেল মাজো মাজা বুধবারের জন্য স্কুলগুলোর ছুটি ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি গণপরিবহনগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
ধসে পড়া ভবনে চলছে উদ্ধার তৎপরতা। ছবি: এএফপি
এ ঘটনায় বিশ্বনেতাদের অনেকেই সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘মেক্সিকো শহরের মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তা সদয় হোন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি ও থাকব।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক টুইটবার্তায় ‘বিধ্বংসী সংবাদ’ বলে শোক প্রকাশ করেছেন।
কোস্টারিকার প্রধানমন্ত্রী লুইস গুইলারমো জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে মেক্সিকোর জনগণের প্রতি ‘সংহতি’ প্রকাশ করেন।
পুরোপুরি ধসে পড়েছে একটি ভবন। ছবি: এএফপি
মেক্সিকোতে এক মাসের মধ্যে এটি দ্বিতীয় ভূমিকম্প। এ মাসের শুরুতে ৮.১ মাত্রার আর একটি ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৯০ জন নিহত হন।
এর আগে ১৯৮৫ সালে এক ভূমিকম্পে দশ হাজারের মতো মানুষ নিহত এবং ৩০ হাজারও বেশি আহত হয়েছিল। ওই সময় প্রায় চারশ’র বেশি ভবন ধসে যায় এবং হাজারেরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ঘটনার স্মৃতিকে মাথায় রেখেই মেক্সিকো সিটি জুড়ে বহু মানুষ মঙ্গলবারই এক ভূমিকম্প মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। এরই মধ্যে এই ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হলো।
ভিডিও
ইন্টারঅ্যাকটিভ মানচিত্রে দেখুন ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চিত্র।
প্রিয় সংবাদ/আশরাফ/রিমন
পাঠকের মন্তব্য(০)
মন্তব্য করতে লগইন করুন