ইট নেওয়ার কাজ করছে দুটি শিশু। ছবি: এএফপি

বিশ্বে দাসত্বের শিকার ৪ কোটির বেশি মানুষ, এক চতুর্থাংশ শিশু

প্রথমবাবরের মতো বাধ্যতামূলক বিয়েকে হিসাবে এনেছে এই পরিসংখ্যান। ডেভিড বলেন, ‘আধুনিক দাসত্ব থেকে এত দিন বিষয়টি কীভাবে বাইরে ছিল তা পরিষ্কার নয়। বিয়ের বিনিময়ে ফ্রি গৃহস্থালি শ্রম এবং যৌন স্বাধীনতা হরণ করে নেওয়ার বিষয়টি দাসত্বের চেয়ে কম নয়। বিষয়টিতে নতুন করে আলো ফেলতেই এই হিসাব সামনে আনা হয়েছে।’

জাহিদুল ইসলাম জন
জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, নিউজ এন্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:০৫ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০১:৪৮
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:০৫ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০১:৪৮


ইট নেওয়ার কাজ করছে দুটি শিশু। ছবি: এএফপি

(প্রিয়.কম) বিশ্বজুড়ে আধুনিক দাসত্বের শিকার প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে এক চতুর্থাংশই শিশু। ‘বাধ্যতামূলক বিয়ে’কে প্রথমবারের মতো দাসত্বের আওতায় এনে ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে আড়াই কোটি মানুষ জবরদস্তিমূলক শ্রমে নিয়োজিত আর দেড় কোটি মানুষ শিকার হয়েছেন বাধ্যতামূলক বিয়ের। এই দুই প্রকার দাসত্বের শিকার মোট এক কোটি শিশু।

‘আধুনিক দাসত্ব’ শীর্ষক ওই রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে জবরদস্তিমূলক শ্রমে নিয়োজিত আড়াই কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি ৬০ লাখ ব্যক্তিমালিকানার দাসত্বের শিকার, ৪৮ লাখ যৌন শোষণ আর ৪১ লাখ মানুষ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে জবরদস্তিমূলক শ্রমে নিয়োজিত। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে জবরদস্তিমূলক শ্রমের মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ এবং কৃষিক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক কাজ।

ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফিওনা ডেভিড গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘নতুন এই পরিসংখ্যান নিছক দাসত্বের চিত্রই শুধু তুলে ধরে না। বরং বিশ্বজুড়ে ৪ কোটি মানুষ দাসত্বের শিকার হওয়াকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে আড়াই কোটি মানুষ যখন বাধ্যতামূলক কৃষিকাজ, মাছ ধরা, নির্মাণ, এমনকি যৌন বাণিজ্যের শিকার হচ্ছে তখন জাতিসংঘের কাছে ৬৩ হাজার নির্যাতিত দাসের তথ্য থাকা প্রমাণ করে দেয় বাস্তবতার সঙ্গে সমস্যার পার্থক্য কতটা গভীর।’

এই গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক জবরদস্তিমূলক শ্রমে নিয়োজিত শ্রমিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই ঋণের জালে আবদ্ধ অথবা মজুরি থেকে বঞ্চিত।

আইএলও’র সিনিয়র পরিসংখ্যানবিদ মিশেল ডি কক বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে জবরদস্তিমূলক শ্রমে নিয়োজিত আড়াই কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকই ঋণের জালে আবদ্ধ। প্রায়শই তাদর আয়ের বেশিরভাগই ঋণ শোধ করতে চলে যায় অথবা ঋণ শোধে বাড়তি কাজ নিতে বাধ্য হয়। এমনকি সাত শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, মালিকেরা তাদের পারিশ্রমিক থেকে ফাইন আদায় করে থাকে।’

‘বাধ্যতামূলক শ্রম কীভাবে পুরো পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলে তা পরিস্কার হয়ে যায় যখন ১৮ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক বলেন, চাকরিদাতারা সরাসরি তাদের পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের হুমকি দেয়’, বলেন তিনি।

প্রথমবাবরের মতো বাধ্যতামূলক বিয়েকে হিসাবে এনেছে এই পরিসংখ্যান। ডেভিড বলেন, ‘আধুনিক দাসত্ব থেকে এত দিন বিষয়টি কীভাবে বাইরে ছিল তা পরিষ্কার নয়। বিয়ের বিনিময়ে ফ্রি গৃহস্থালি শ্রম এবং যৌন স্বাধীনতা হরণ করে নেওয়ার বিষয়টি দাসত্বের চেয়ে কম নয়। বিষয়টিতে নতুন করে আলো ফেলতেই এই হিসাব সামনে আনা হয়েছে।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আধুনিক দাসত্ব সবচেয়ে প্রকট আফ্রিকা, এশিয়াসহ প্যাসিফিক দেশগুলোতে। আরব আমিরাত বা আমেরিকার মতো দেশগুলো থেকে পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়ায় আইএলও এবং ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন প্রতিবেদনটি ‘সাবধানে’ বিবেচনা করতে সতর্ক করে দিয়েছে।

ডি কক বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে চার কোটি ৩০ লাখ মানুষের হিসাব করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এটা খুবই সাধারণ হয়ে যেতে পারে কারণ আমরা সংঘাতপূর্ণ এলাকা, শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে কোনো তথ্য পাইনি। এছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রবেশ এবং ভাষাগত সমস্যায় প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে থেকেও পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।’

গবেষকরা দেখেছেন, যৌন শোষণের শিকার ৪৮ লাখের মধ্যে ৭০ শতাংশই এশিয়া এবং প্যাসিফিক এলাকাগুলো থেকে পাচারের শিকার। আর বাধ্যতামূলক বিয়ের বেশিরভাগ ঘটনাই আফ্রিকান দেশগুলোতে ঘটেছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে পাঁচ বছর ধরে ৪৮টি দেশের ৭১ হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইএলও এবং ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তাদের তথ্য এবং জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার তথ্যও বিবেচনায় নিয়েছে।

সূত্র: গার্ডিয়ান

প্রিয় সংবাদ/রিমন

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...