কর্তব্য—বিদেশি বধূবরণ ও মেরুদণ্ডের ব্যথা উপশম

অনুষ্ঠান শেষে অনেকেই উচ্চকণ্ঠে প্রশংসা করেছে, যদিও আমার আনাড়িপনার সঙ্গে তারা মেলাতে পারেন নাই। আমি অবশ্য লা জবাব। তবে এই বিদেশি মেয়েটিকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা দেওয়ার জন্য মিজান ভাইয়ের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না এবং মেয়েটি  যারপরনাই মোহিতও হয়েছে।

মোহাম্মদ কায়কোবাদ
ডিসটিংগুইজড প্রফেসর, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৩:৩৪ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৫:২০
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৩:৩৪ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৫:২০

আমার বিদেশিনী আত্মীয়া ম্যাদলিন দুপউই বিবাহোত্তর ভ্রমণে বাংলাদেশে আসবে। কানাডার নিউ ব্রান্সউইকের ক্যাপ-পেলেতে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে, যাতে আমরা যোগদান করতে পারি নাই। তবে আমার বড় ছেলে অদ্বিত তার পরিবারসহ ডালাস থেকে উড়ে টরন্টোতে যায়। এরপর আমাদের ঘনিষ্টবন্ধু সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে তুষারপাতের শংকা নিয়ে ১৬০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে অনেক সংশয়ে ক্যাপ পেলেতে পৌঁছেছে। সংশয় এই কারণে যে চারশত বছর আগের হলেও ফরাসি প্রবাসীরা এশিয়ানদের সঙ্গে সম্পর্কটি কীভাবে নিবে। যাহোক সকল সংশয়কে ভুল প্রমাণ করে জেরি ও ক্লডেট দুপউইয়ের ফরাসি পরিবার বরপক্ষকে সাদরে গ্রহণ করেছে।

দুপউই পরিবার তাদের আত্মীয়স্বজন মিলে নিউ ব্রান্সউইকের ক্যাপ-পেলেতে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে বসত গেড়েছে। আত্মীয়স্বজন সবাই কাছাকাছি থাকে অনেকটা ৫০ বছর পূর্বে আমরা যেমন আত্মীয়স্বজন নিয়ে একই পাড়ায় বাস করতাম। তারা বাড়িতে ফরাসি ভাষায় কথা বলে। বিয়ের আয়োজন হয়েছে পারিবারিক বসবাসের জায়গায় সকল আত্মীয়স্বজনের অংশগ্রহণে। কনের পিতা জেরি তার বক্তব্যে বাংলা ভাষার কিছু শব্দ উচ্চারণ করলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কোনো ফরাসি শব্দ উচ্চারণের পরিকল্পনা করি নাই। বরপক্ষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে ম্যাদলিনের পিতা বন কর্মকর্তা এবং বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব নিউ ব্রান্সউইকের বনভূমি মালিক সমিতির সভাপতি জেরি দুপউইয়ের নিজহাতে তৈরি কাঠের বাসায়। আমাদের দেশে যেমন কৃষক সমিতির সভাপতি নিশ্চয়ই কৃষিকাজে জড়িত নন, যেমন তাঁতি সমিতি কিংবা জেলে সমিতি কিংবা বাস্তুহারা সমিতির সভাপতি তদীয় কর্মকাণ্ডে মোটেই জড়িত থাকেন না। এমনকি ছাত্রদের নেতাদের ছাত্র হতেই হবে এমন বাক্যে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান। কিন্তু এক্ষেত্রে একসময়ের বনকর্মকর্তা অবসরের পর বন নিয়েই আছেন।

যাহোক, বরপক্ষকে যে আতিথেয়তা করা হয়েছে তা উন্নত দেশের গতিময় জীবনে যে হতে পারে তা আমার কাছে অসম্ভব মনে হয়েছে। যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে  বিবাহসংশ্লিষ্ট সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।  বর-কনে ঠিক করেছে বিয়ের পর তারা বাংলাদেশে বেড়াতে আসবে। আর আমার বড় ছেলের সাবধান বাণী আমরা যাতে করে আতিথেয়তায় কোনো কার্পণ্য না করি। আমার যোগ্যতায়, পারদর্শিতায় তার যেহেতু যথেষ্ট সন্দেহ তাই বারবার বিষয়টি সে আমাকে স্মরণ করে দিয়েছে।

আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। তাই আমার স্ত্রীর আগ্রহ এই দম্পতি দেশে বেড়াতে আসলে আমরা বিবাহোত্তর একটি সম্বর্ধনার আয়োজন করব। আমি ভাবছিলাম আমার বাসস্থান পিংক সিটিতেই এই আয়োজন হবে। যোগ্যতার নিদারুন অভাব থাকায় আমি কখনো বড় চিন্তা করতে পারি না। ১৯৯৮ সালে আটলান্টা শহরে ৫০ এর বেশি তলাবিশিষ্ট ম্যারিয়ট মার্কি হোটেলে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করার পর আমি এতই অভিভূত হয়েছিলাম যে, খুব শীঘ্রই আমাদের বিভাগের সাদামাটা ল্যাবগুলোতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। আর আমার ছাত্র একই অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে হোটেল শেরাটনে জাতীয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করল, যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সকল হেভিওয়েট মন্ত্রী মহোদয়েরা।

কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে আমার দৌড় কম্পিউটার প্রতিযোগিতা পর্যন্ত—দেশে কম্পিউটার শিল্পের বিকাশ হোক, সেখানে একটি অগ্রণী ভূমিকার জন্য নিজেকে কখনো যোগ্য মনে করি নাই, তার প্রস্তুতিও গ্রহণ করি নাই। একদিন একই গাড়িতে চলার সময় কথা প্রসঙ্গে সুফি মিজানুর রহমানকে বিষয়টি বললাম। ইউআইটিএসের ট্রাস্টি বোর্ডের তিনি সভাপতি। মিজান ভাই সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ইউআইটিএস শনিবার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে তাই এই আয়োজন ইউআইটিএসেই হতে পারে। আমি ভাবলাম ইউআইটিএসের একটি কনফারেন্স কক্ষ আছে সেখানে ৭০/৮০ জন মানুষ বসতে পারবে এবং তার আশেপাশেও কিছু জায়গা আছে, সেখানে এরকম একটি আয়োজন করা যেতে পারে। এই দায়িত্ব যে তখনই আমার হাত থেকে চলে গিয়েছে তা আমি বুঝতে পারি নাই। কিছুদিন পর সুফি মিজানের আত্মীয় মোফাজ্জল ভেন্যুটি দেখার জন্য আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসার জন্য বলল। তিনি এসে পছন্দ করলেন, এখনো কিন্তু আমরা আনন্দের সঙ্গে কনফারেন্স কক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছি। এ বিষয়ে যোগাযোগ আরও বাড়ল। ডেকোরেশন নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি বললাম ডেকোরেশনের কোনো প্রয়োজন নেই, আমার স্ত্রী আবার সে বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। মিজান ভাইও মাঝেমধ্যে এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন, মোফাজ্জলের যোগাযোগ আরও বাড়ল। যে সকল বিষয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয় আমি তার গুরুত্ব অনুধাবন না করতে পারলেও আমার স্ত্রী যারপরনাই খুশি। আমার এক গুণধর ছাত্র সজলের সুবাদে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন দুই শতাধিক দ্বিতল ভবন সমৃদ্ধ অসাধারণ ক্যাম্পাস পিংক সিটিতে আমার বাস। পিংক সিটির পিংক লেডিস ক্লাবের উৎসাহী উদার ভাবীরাও বিদেশিনী বধুকে স্বতস্ফূর্তভাবে বরণ করার জন্য জোর প্রস্তুতি চালালেন।

বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠানাদি মহাসাগরের সন্নিকটে নিউ ব্রান্সউইকের ক্যাপ পেলেতে অনুষ্ঠিত হলেও পিংক সিটিতেও হলুদের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হলো। চারদিকে হলুদ ছাড়াও অন্যান্য রংয়ের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে মিজান ভাইও এই আনন্দ উপভোগ করতে আসবেন বলে জানালেন। যদিও ওই সময়ে তার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে দাওয়াত। আমার ধারণা ছিল ৫/১০ মিনিট থেকে চলে যাবেন। তার আসা উপলক্ষে সবাই যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগদান করলেন। মিজান ভাই অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে পাঁচ তারকা হোটেলের গুরুত্বপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠানকে এড়িয়েই ৩/৪ ঘণ্টা থেকে সবাইকে উৎসাহিত করলেন। এদিকে আমিও বুঝতে পারলাম স্থিরলক্ষ্য মিজান ভাইয়ের উৎসাহে বিবাহোত্তর সম্বর্ধনার অনুষ্ঠানটি আর কনফারেন্স কক্ষে সীমাবদ্ধ নেই। সম্ভবত ইউআইটিএস ক্যাম্পাসে একটি বড় পরিসরে এই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদিও আমার কাছে মনে হলো, মশা মারতে কামান দাগা। ১৪ই জানুয়ারি ২০২৩ অনুষ্ঠান। মিজান ভাই ১২ই জানুয়ারি ঢাকা আসলেন। আমি নানা কাজ শেষে বিবাহোত্তর সম্বর্ধনার অনুষ্ঠানস্থলে বিকাল তিনটায় রীতিমত অতিথির মতো উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিনতে পারলাম না। মোফাজ্জল ক্যাম্পাসে তিনটি রাত্রিযাপন করে তার দল নিয়ে সুন্দর তোরণ, সর্বত্র লাল গালিচা, অনলাইনে যাতে করে কনের আত্মীয়রা সুদূর কানাডা থেকে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে পারে তার ব্যবস্থা করল। খাবারের মান নিশ্চিত করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে পাচকের দল আসলো। মোটামুটি এলাহী কাণ্ড।

অনুষ্ঠান শেষে অনেকেই উচ্চকণ্ঠে প্রশংসা করেছে, যদিও আমার আনাড়িপনার সঙ্গে তারা মেলাতে পারেন নাই। আমি অবশ্য লা জবাব। তবে এই বিদেশি মেয়েটিকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা দেওয়ার জন্য মিজান ভাইয়ের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না এবং মেয়েটি  যারপরনাই মোহিতও হয়েছে। সৌভাগ্যবশত, আমার বন্ধুবান্ধবেরা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। আমার ডাক্তার বন্ধু বাসুদেব কর্মকার বিদেশসম সিলেটে যেয়ে সিলেটি ভাষা-সংস্কৃতি আত্মস্থ করে সুদূর গ্রামে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে দিনে গড়ে ২০০ জন রোগীকে তা-ও সপ্তাহে সাত দিন। এমনকি বিদেশে অবস্থানকালেও তার চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকে।

একবার তার একমাত্র অবসর প্রাতঃভ্রমণের সময় মোবাইলে কথা বলার সময় আমি বললাম কথা শুনতে পারি না। কেন জিজ্ঞাসা করাতে মোবাইল সেটের ওপর দোষ চাপিয়ে দিলাম। তারপর দিন একই সময়ে একজন আমার জন্য সেট নিয়ে এসেছে আমার বন্ধু বাসু দেবের পাঠানো উপহার। আমি বললাম, এরপর বলব আমার গাড়িটা ঠিকমতো চলছে না, তাতে যদি একটি নতুন গাড়ি পাওয়া যায়। এবার সিলেট ভ্রমণে এ কথাটি আভা বৌদিকে বলায় বৃহৎ হৃদয়া বৌদি বললেন, দোয়া থাকলে ওটাও হবে। আমি কায়মনোবাক্যে দোয়া করছি। বিদেশিনী কনেকে আমার বন্ধু সিলেটে দাওয়াত করেছে। সিলেট যাত্রায় শুধু সেই নয়, তার বাহিনীর লোকজন আমাদের ভ্রমণের অবস্থা জানতে নিয়মিত ইন্টারভালে আমাকে ফোন করে নির্ঘুম হতে বাধ্য করেছে। বধুবরণ করেছে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে যথেষ্ট আনুষ্ঠানিকতায়। নিকটজনকে নানা উপলক্ষ্যে উপঢৌকন দেওয়ার যে সংস্কৃতি আমাদের সমাজে রয়েছে তাও এই বিদেশিনীকে একাধিকবার দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন মিজান ভাই এবং আমার বন্ধুবর বাসু। শুধু তাই নয় বিবাহোত্তর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দও নানা উপহার নিয়ে এসেছেন যদিও উপস্থিতি ও শুভকামনাই কেবল আকাঙ্ক্ষিত ছিল। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চনে একটি গ্রামের বিয়ে দেখার জন্য দাওয়াত করেছে মোফাজ্জল। সেখানে সামিয়ানা টানিয়ে কীভাবে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, কীভাবে অসংখ্য বিশালকায় পাত্রে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়। কখনো কখনো এই আয়োজন করা হয় কোনো ভবনের ছাদের উপরে। এসবই দেখার এক অপূর্ব সুযোগ হলো ম্যাদলিনের।

ক্যাপ-পেলেতে ম্যাদলিনের বিয়ের অনুষ্ঠানে ৮০/৯০ জন অংশগ্রহণ করেছিল, তা-ও আত্মীয়স্বজন সবাই মিলে একই এলাকায় থাকার সুবাদে। সাধারণত উন্নত দেশে এর থেকে বড় বিয়ের আপ্যায়নের অনুষ্ঠান হয় না। আর বাংলাদেশে একটি বিয়ের দাওয়াতে ৮০০ থেকে এক হাজার মানুষ আসে এবং একাধিক সেশনে খাওয়া-দাওয়া করে এটা তার জন্য একটি বিশাল অভিজ্ঞতা। সবকিছু মিলে মিজান ভাইয়ের নেতৃত্বে বিদেশিনী মেয়েটি বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি অসাধারণ ধারণা নিয়ে গেছে। ম্যাদলিনও তার অসাধারণত্ব প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সে গ্রহণ করেছে, হাতে খেতে কখনো কুণ্ঠা বোধ করে নাই, আমাদের সালাম দেওয়ার রীতিনীতি ভালো রপ্ত করেছে, গ্রামে হয়েছে, কোনো রকম অস্বস্তি প্রকাশ করে নাই। নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিতে গ্রামে পর্যন্ত গিয়েছে। এগুলো জেনে তার পিতামাতাও বাংলাদেশ সফরে আগ্রহ প্রকাশ করছে। কোথায়ও কাজ না থাকলে মিজান ভাই কাজ তৈরি করেন, সে কাজে স্বতপ্রণোদিত হয়ে তিনি তার দায়িত্ব বের করে নেন এবং পরিশেষে সেই দায়িত্ব এমনভাবে পালন করেন যে, তা দেখে হতবিহ্বল হতে হয়।

৩০শে জানুয়ারি ২০২৩-এ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমে দাওয়াত পেয়েছি। বাংলাদেশে ভালো ছাত্রদের বড় আকারে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান করার রেওয়াজ কখনও ছিল না। প্রথম আলো পত্রিকা তা শুরু করেছিল ২০০০ সালের কাছকাছি সময়ে এবং তা ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন করে যাচ্ছিল। এর মধ্যে কোভিড-১৯ বাঁধ সাধলো, অনেক দিন এই অনুষ্ঠানটি করা যায়নি। এবার আবার নতুন করে শুরু হলো। যত দিন দাঁত ও মেরুদন্ডের উপস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না, জীবনটি ভালোই কাটছিল। বিগত কয়েক বছরে টের পেলাম আমার দাঁত এবং মেরুদণ্ড রয়েছে। অনুষ্ঠানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে বলে ব্যথাযুক্ত কোমরের উপর বেল্ট বেঁধে উপস্থিত হয়েছি।

ফিরতি ভ্রমণে মিজান ভাইকে ফোন এবং কথাপ্রসঙ্গে মেরুদন্ডের ব্যথার কথা বললাম এবং তার মহৌষধ হিসাবে একটি চেয়ার কিনব বলে জানালাম। তিনি বললেন, চেয়ার মেরুদণ্ডের ব্যথার কোনো ঔষধ নয়। ফিরে মোফাজ্জলের সঙ্গে দেখা হতেই সে আমাকে ল্যাবএইডে নিয়ে চলল। বুঝতে পারলাম আমার কোমর ব্যথা মিজান ভাইয়ের মাথাব্যথায় পরিণত হয়েছে। কাছের মানুষকে কতভাবে যে আন্তরিকতার সঙ্গে সাহায্য করেন, এই কোমর ব্যথা থেকে তা সরাসরি জানার সুযোগ হলো। পথে তার যোগ্য পুত্র সোহেল সাহেব নিশ্চিত করেন যাতে করে ল্যাবএইডে দ্রুত গতিতে ডাক্তার দেখানো যায়। একেবারেই ম্যাকগাইভারি কায়দায় ল্যাবএইডের একজন ক্করিৎকর্মা কর্মকর্তা আমাকে সিনিয়র কনসাল্ট্যান্ট ড. জিয়ার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিলেন, এক্সরে করা হলো, মুহূর্তের মধ্যে ঔষধ পত্রাদিসহ বাসার পথে রওয়ানা হলাম। তারপরের দিন কোমর ব্যথা নিরাময় প্রকল্পে একটি আরাম কেদারাও যুক্ত হলো ব্যথা নিরাময়ের বাড়তি দাওয়াই হিসাবে। চেয়ারে বসে মনে হলো এত দিন শুধু কোমরের আরাম থেকেই বঞ্চিত হইনি, এরকম একটি চেয়ার আগে থেকে থাকলে নিশচয়ই জ্ঞানার্জনেও অনেক এগিয়ে থাকতে পারতাম!

সকল বিষয়ে আমার আনাড়িপনা শুধু অবসর জীবনেই নয়, সেই ছোটবেলা থেকেই শুরু হয়েছে। আমার বিমান যাত্রার প্রায় অর্ধ শতক পূরণ হয়েছে। ভ্রমণে যতরকম সমস্যা তার সকল দুর্ভোগই ভাগ্যে জুটেছে, তা দুই ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছে ভুল লেনে দাঁড়িয়ে ফ্লাইট মিস করে অর্ধলক্ষ টাকা দণ্ড দিয়েই হোক, আর ফ্লাইট বিলম্বের কারণে বিমান বন্দরে না খেয়ে কষ্টের মধ্যে দুদিন পার করা হোক।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সজ্জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিরীন সাহেবের সুবাদে ক্রেডিট কার্ড ও প্রায়োরিটি পাসে বিমান বন্দরের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত লাউঞ্জ ব্যবহার করে আমার স্ত্রী তো গোটা পৃথিবীকেই রঙিন দেখা শুরু করছেন এবং সম্ভব হলে বাসার পরিবর্তে কীভাবে বেশি সময় লাউঞ্জে কাটানো যায়, তার ফন্দি-ফিকির আবিষ্কার করছেন। সেই থেকে আমাদের ভ্রমণের জীবন অনেক আনন্দময় হয়েছে। এই দামি কেদারা অনুরূপ আনন্দের কারণ হয়েছে। কাছের মানুষের পায়ের সমস্যাও মিজান ভাইয়ের মাথার সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এবং যতক্ষণ তার কার্যকর ও পূর্ণাঙ্গ সমাধান না হয়, ততক্ষণ  তিনি তার সমাধানে শতভাগ চেষ্টা করেন। এতদিন অন্যের কাছ থেকে মিজান ভাইয়ের এই গুণাবলী সম্পর্কে শুনেছি এবার  নিজেই তার সাক্ষাৎ প্রমাণ পেলাম।

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...