অসুস্থ মানুষটি হতে পারে সন্তান বা পরিবারের যে কেউ। প্রতীকী ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

প্রিয়জনের গুরুতর অসুস্থতায় যেভাবে সামলাবেন নিজেকে

সুখের দিন যত দ্রুত পার হয়ে যায়, রোগ-বালাইয়ের দিনগুলো মনে হয় ততটাই দীর্ঘ। প্রিয়জনের গুরুতর অসুস্থতা একজন মানুষের জীবনে বদলে দেয় অনেক কিছুই, ঘিরে ধরে প্রচণ্ড কান্তি-হতাশা বা আর্থিক সংকট। কি করবেন এমন সময়ে?

রুমানা বৈশাখী
বিভাগীয় প্রধান (প্রিয় লাইফ)
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৪ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৪
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৪ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৪


অসুস্থ মানুষটি হতে পারে সন্তান বা পরিবারের যে কেউ। প্রতীকী ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) জীবন কখনো একরকম যায় না। অসুখ-বিসুখ, রোগ-শোক জীবনেরই অংশ। তবে হ্যাঁ, সুখের দিন যত দ্রুত পার হয়ে যায়, রোগ-বালাইয়ের দিনগুলো মনে হয় ততটাই দীর্ঘ। বিশেষ করে অসুখ যখন হয় প্রিয়জনের। অসুখ অল্প হোক বা বেশি, সবার কাছেই নিজ নিজ প্রিয়জন সবচেয়ে আপন। ফলে তাদের কিছু হলে আমরা অস্থির ও চিন্তিত হয়ে পড়ব সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসবের মাঝেও নিজেকে ধরে রাখতে হবে, নিজেকে স্থির রাখতে হবে, নিজেকে ভালো রাখতে হবে। কারণ আপনি নিজে যদি সুস্থির থাকতে না পারেন, তবে অসুস্থ প্রিয়জনের খেয়াল করার কেউ থাকবে না।

প্রিয়জনের অসুখ-বিসুখের সময়গুলোতে কীভাবে নিজেকে সামলে নেবেন, আজকের ফিচারটি সেই বিষয়েই।

সেবা করা প্রচণ্ড ক্লান্তিকর

যত প্রিয়জনই হোক না কেন, সেই প্রিয়জন যখন রোগী তখন দীর্ঘমেয়াদি সেবা করতে গিয়ে ক্লান্ত আপনাকে হতেই হবে। এতে কোনো দোষ নেই। আপনিও মানুষ, আপনারও বিশ্রাম চাই। তা ছাড়া প্রিয়জনকে কষ্ট পেতে দেখলে অসম্ভব স্ট্রেস হয়, ফলে ভয়াবহ মানসিক ক্লান্তিও স্পর্শ করে। শারীরিক-মানসিক এই ক্লান্তিতে নিজেকে দোষারোপ করবেন না। বরং সাহায্য খুঁজুন, যে অল্প সময়ের জন্যে হলেও আপনাকে ব্যাকআপ দিতে পারে। আত্মীয়-স্বজন কাউকে পাওয়া না গেলে পেশাদার সাহায্য নিন।

হতাশা স্পর্শ করতে দেবেন না

অনেক চেষ্টার পরেও যখন প্রিয়জনের রোগমুক্তি হয় না বা তাকে কষ্ট পেটে দেখি আমরা, তখন হতাশায় ভেঙে পড়া খুবই স্বাভাবিক। এই হতাশা থেকে দূরে থাকুন। কারণ হতাশা লড়াই করার উৎসাহ নষ্ট করে দেয়। আর আপনি হতাশ হয়ে পড়লে আপনার রোগী আরও হতাশ হয়ে পড়বে, ফলে রোগমুক্তির সম্ভাবনাও কমে যাবে।

আর্থিক অবস্থা একটি বড় ব্যাপার

চিকিৎসা সবসময়ই ব্যয়বহুল আর সবার আর্থিক অবস্থা সমান নয়। অসুখ-বিসুখে আর্থিক অবস্থার ওপরে চাপ পড়া বা চিকিৎসার অর্থের যোগান নিশ্চিত রাখা একটি অনেক বড় ব্যাপার। তাই গুরুতর অসুস্থতায় সবার আগেই এই ব্যাপারটি নিয়ে ভাবুন, অর্থের সমস্যায় যেন চিকিৎসা বন্ধ না হয়ে যায়। নিজের অফিস, আত্মীয়-স্বজন বা ব্যাংক লোনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন। সঞ্চিত অর্থ ও পাওনা অর্থের হিসাব কষুন। একেবারেই কোনোদিক দিয়ে ব্যবস্থা করতে না পারলে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ করুন, যারা অর্থ সাহায্যের জন্যে প্রচারণা চালিয়ে থাকে।

শেয়ার করুন

কাউকে না কাউকে নিজের মনের কথা, সুবিধা-অসুবিধার কথাগুলো বলতেই হবে। চেপে রাখবেন না, কারো না কারো সাথে মন খুলে কথা বলুন। আপনজন কাউকে না পেলে পেশাদার কাউন্সিলরের সাথেও কথা বলতে পারেন।

রাগ বা নেগেটিভ কোনো আবেগ নয়

প্রিয়জন যখন কঠিন রোগে আক্রান্ত, এমন অবস্থায় নানা ধরনের আবেগ আপনার মনের মাঝে ঘুরবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের রাগ, ঘৃণা বা হতাশা কিছুই রোগীর ওপরে ঝাড়বেন না। অভিনয় করে হলেও তার সামনে স্বাভাবিক থাকুন, তাকে উৎসাহ ও ভালোবাসা দিন। আপনার মানসিক জোরেই সে স্থির থাকবে।

নিজের দিকেও খেয়াল করুন

আপনি হয়তো প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছেন, রোগীর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, চারদিকে কেবল বিপদ আর বিপদ। কিন্তু তবুও, নিজের শরীরের কথা ভুলবেন না। খাওয়া ও ঘুমের দিকে যতটা সম্ভব খেয়াল করুন। কারণ আপনি অসুস্থ হয়ে গেলে দেখার কেউ নেই।

নিজেকে তৈরি করুন

হয়তো প্রিয়জনের রোগটি অনেক গুরুতর, অবস্থা খুব খারাপ। চিকিৎসকরা হয়তো আশার বাণী শোনাতে পারছেন না। কি করবেন এমন সময়ে? লড়াই অবশ্যই চালিয়ে যাবেন, কিন্তু অন্তিম পরিণতির জন্যেও নিজেকে আস্তে আস্তে তৈরি করতে শুরু করুন। আর্থিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। একই সাথে নিজের যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যান, যেন পরে কোনো আফসোস না থাকে।

আপনার কেউই চায় না এমন দুঃসহ দিন কারো জীবনে আসুক। তারপরেও বিপদের দিন আসে। তাই বিপদের জন্যে প্রস্তুতি রাখাই বুদ্ধির কাজ।

প্রিয় লাইফ/আজাদ চৌধুরী

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...