(প্রিয়.কম) সিনেমা মুক্তির আগেই ২৩টি চলচ্চিত্রে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের আর কোনো নায়িকার এ ধরনের রেকর্ড নেই। বিষয়টা এমন, আসলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। বলছি সময়ের আলোচিত তরুণ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরী মণির কথা। ২৪ অক্টোবর এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। নিজের জন্মদিন, অভিনয়, ফ্যাশনসহ নানান প্রসঙ্গে প্রিয়.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন পরী।
প্রিয়.কম : প্রথমেই জন্মদিনের অাগাম শুভেচ্ছা...
পরী মণি : ধন্যবাদ।
প্রিয়.কম : জন্মদিনের প্লান কী?
পরী মণি : প্রতিবছরের মতো ইচ্ছে আছে এবারও কিছু সুবিধাবঞ্ছিত শিশুর সঙ্গে সময় কাটানোর। আর সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি আমার কাছের বন্ধু বান্ধবদের জন্য।
প্রিয়.কম : আপনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রতিবছরই ড্রেসকোড থাকে। এবারের ড্রেসকোডটা কী?
পরী মণি : গত বছর তো নীল-সাদা রংয়ের পোশাক পরতে বলেছিলাম সবাইকে। এবার ছেলেদেরকে বলেছি কালো পোশাক পরতে আর মেয়েদেরকে বলা হয়েছে সোনালী রঙের পোশাক পরতে।
প্রিয়.কম: সাধারণের চেয়ে একটু বেশি পোশাক সংগ্রহে রাখতে হয় অভিনয়শিল্পীদের। এ ক্ষেত্রে আপনিও নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম নন। জানতে চাইব শপিং নিয়ে ঘটে যাওয়া অবাক কোনো ঘটনা।
পরী মণি: অনেক সময় দেখা যায় সবাই মিলে হুট করে শপিংয়ে যাচ্ছেন। অনেক সময় দেখা যায় সবাই হঠাৎ করে বলছে, ‘ফ্রি আছি, চল শপিংয়ে যাই’। আমার বেলায় কখনো হুট করে শপিংয়ে যাওয়া হয় না। আগে থেকে সব রেডি করা থাকে তারপর খুব প্ল্যান করে শপিং করি। কখনো বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে প্ল্যান করে যাই, কখনো বা ডিজাইনার ফ্রেন্ডদের সঙ্গে প্ল্যান করে নির্দিষ্ট কোনো শপিংয়ে যাওয়া হয়। তখন দেখা যায়, আগে কোন দোকানে যাব? কী কী কিনব? এসব কিছু আগে থেকে লিস্ট করে রাখছি। তো একবার এরকম রেডি-টেডি হয়ে শপিংয়ে গেলাম। সেদিন অনেকগুলো শপিং করি। কেনাকাটার পর অনেকগুলো ব্যাগ-ট্যাগ হলো। শপিং শেষে যখন বের হচ্ছি তখন দেখছি আমার হাতে ৭/৮ টার মতো ব্যাগ। বিল দিতে গিয়ে দেখি আমার কাছে কার্ড নেই, টাকাও নেই! দেখি পার্সও আনিনি। এতো প্ল্যান করে গেলাম, আর এখন দেখি টাকাই নিয়ে যাইনি। নিজেও রীতিমতো অবাক! আমি এতো মনভুলা কীভাবে হলাম? আসলে কী, অনেকে মিলে যখন শপিংয়ের যাওয়ার জন্য রওনা দিই। তখন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখা যাচ্ছে, কেউ বলছে, ‘আপু ফোনটা নিচ্ছি’ বা কেউ বলছেন ‘আপু পার্সটা নিচ্ছি’। তখন মনে হয় কী, ঠিক আছে ওদের কাছেই দিই। ওরাই যেহেতু আমার জিনিসটা ক্যারি করছে, করুক। তো ওইদিন ওরা ভেবেছিল পার্সটা মনে হয় আমার কাছে আছে। আর আমিও ভেবেছিলাম, পার্সটা নিশ্চয়ই ওদের কেউ না কেউ দায়িত্ব নিয়েই তাদের সঙ্গে করে নিয়ে এনেছে। আবার ভেবেছিলাম, আমি হয়তো কাউকে পার্সটা দিয়েছি। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত আমি খুবই অস্বস্তিতে পড়েছিলাম।
প্রিয়.কম: শপিংমলে এরকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা সামাল দিলেন কীভাবে?
পরী মণি: ওই দিনটা আমার জন্য ভীষণ লজ্জাজনক ছিল। আমিতো মাস্ক পরে যাই। তাই সেদিন কেউ আমাকে চিনতেও পারছিলেন না। ব্যাপারটা এরকম যে, আমার কাছে টাকাও নেই এদিকে মুখও ঢাকা। বিষয়টা অনেকটাই ভয়ংকর হয়ে গিয়েছিল। তারপর যখন দেখলাম সবাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছেন। তখন কী আর করব, বাধ্য হয়ে মুখের মাস্কটা খুললাম। চেহারা দেখে তখন সবাই অবাক হয়ে বলে উঠেন ‘ও মাই গড, আপনি?’। শপিংমলের সবাই আমকে দেখে চিনতে পারলেন। তারপর আমি বললাম, ‘এখন কী করবেন? আমিতো ভুলে পার্স আনিনি’। এরপর তারা বললেন, ‘কোনো সমস্যা নাই। আপনি নিয়ে যান’। যাই হোক, এটা ছিল আমার জীবনের প্রথম বাকিতে শপিং করা। তারপর আমি বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে লোকজনকে দাম বুঝিয়ে দিলাম।
প্রিয়.কম: বিশেষ দিনে কী ধরনের উপহার পেতে ভালোবাসেন?
পরী মণি: গিফটের মধ্যে বই এবং ফুল। এই দুইটি জিনিসকে বেশি প্রেফার করি। তাই যদি কেউ আমাকে উপহার দিতে চায় আমি চাইব, তিনি যেন আমাকে বই ও ফুল দেন। প্রিয় লেখকের মধ্যে যদি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে শুরু থেকে শেষ অবধি একজনই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উনি আমার কোন রকমের পছন্দ এটা আমি বলে বুঝাতে পারব না। যখন খুব ছোট ছিলাম তখন থেকেই তার লেখার প্রতি আমার অনেক টান ছিল।
প্রিয়.কম: গয়না পরতে ভালো লাগে?
পরী মণি: শুটিংয়ে আসলে এতো গয়না পরা হয়। তাই বাসায় এসে যে একটু খানি সাজবো বা গয়না পরব সেটা আর হয়ে উঠে না। একবার মাথায় ভূত উঠেছিল। তখন অনেকগুলো হীরার গয়না কিনেছিলাম। পরে মনে হয়েছে এসব কেনা আসলে পুরোটাই মাটি, মাটি বললে ভুল হবে, এটা আসলে ছাই।
প্রিয়.কম: জানতে চাইব ছোট বেলা ও বড় বেলার শপিং সম্পর্কে।
পরীমনি: ছোট বেলায় যখন আমার বয়স আড়াই বছর কী তিন বছর। তখন আম্মু মারা যান। এরপর বাবাও বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান বিদেশে। তাই ছোটবেলার বাবা মায়ের সঙ্গে বেড়ানো বা শপিং করার মতো জিনিস আমার জীবনে হয়নি। আর বড় বেলায় প্ল্যান করে শপিং করার ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন শপিং মলেই যাওয়া হয়। আর বিদেশে ট্যুরে গেলে শপিংয়ের প্ল্যান না থাকলেও দেখা যায়, যাওয়ার সময় নিয়ে গেছি একটা লাগেজ। আর ফিরে এসেছি দশটা লাগেজ নিয়ে।
প্রিয়.কম: অভিনয়ের খাতিরে একেক চরিত্রের জন্য চুলের একক ধরনের স্টাইল করতে দেখা যায়। অনেক সময় ভারি ক্যামিকেলযুক্ত চুলের প্রসাধনী ব্যবহার করতেও দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে চুলকে কীভাবে রক্ষা করছেন?
পরী মণি: ছোট চুল নিয়েতো অনেককে অনেক ধরনের সমস্যা পোহাতে দেখা যায়। আর আমারতো লম্বা চুল। অভিনয়ের শুরুর দিকে চুলের ওপর খুব ধকল গিয়েছিল। আসলে তখন অন্যের উপর ছেড়ে দিয়েছিলামতো তাই তখনকার শুটিংয়ে চুলের বিভিন্ন ডিজাইনের জন্য, রূপসজ্জাকারীরা যে যার মতো নানা রকমের স্প্রে দিয়ে, বিভিন্ন রকমের ক্যামিকেলসহ নানা ধরনের নানা কিছু প্রয়োগ করতেন। তখনতো চুলের বারোটা বেজে গিয়েছিল। শুটিং শেষে যখন চুলগুলো ছাড়ানো হতো, তখন দেখতাম এত্তো এত্তো করে একসঙ্গে অনেকগুলো চুল নষ্ট হতো। যাই হোক তখন অভিনয়ের জন্য চুলের একটু খানি বিসর্জন না হয় দিলামই।
প্রিয়.কম: এরপর প্রতিকার কীভাবে বের করলেন?
পরী মণি: পরে এর সমাধান আসলে নিজে নিজেই করতে হয়েছে। এখন বিষয়গুলো আর আগের মতো হয় না। এখন বুঝি, এ বিষয়গুলো আসলে অন্যের উপর ছাড়া ঠিক না। এখন বেশিরভাগ সময় বাসাতেই নিজের চুলের যত্ন নিই। আমার মনে হয়, চুলের ধরন অনুযায়ী যে যার নিজের মতো করে ম্যানেজ করলে ভালো। তবে যাদের চুল কালার করা তারা মনে হয় পার্লারে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিলেই ভালো। আর যাদের চুল আমার মতো বড়। তাদের জন্য বলব সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও চুলে তেল দেওয়া দরকার। তেলটা খুবই প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় তেলে অনেকের নানা রকমের সমস্যা থাকে। তারপরেও বলব রাতে অথবা গোসলের আগে হলেও তেলটা দিলে ভালো।
প্রিয়.কম: কোন অভ্যাসটির জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়তে হয়?
পরী মণি: ‘হাসি’। আমার এ হাসিটাই আমার সবচেয়ে বড় শ্ত্রু। যদিও একদিক থেকে এটা আমার জন্য খুব ভালো। কারণ হাসলে হার্ট ভালো থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার অতিরিক্ত হাসির জন্য খুবই বাজে পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়। তখন দেখা গেছে আমি যে জিনিসটা বুঝাতে চাচ্ছি ওই জিনিসটা তখন আর কেউ বুঝতে চায় না। যেমন, কাউকে আমি কড়া কথা বলছি। সেই কড়া কথাটা যাকে বলছি, অনেক সময় তার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে কড়া কথার মাঝখানেই হেসে দিচ্ছি। তখন আসলে আমার সেই কড়া কথা বলার আর কোনো মানেই থাকে না। সবতো ওখানেই পানি হয়ে যায়।
প্রিয়.কম: হাসির জন্যই কি বেশি বিড়ম্বনা পোহাতে হয়?
পরী মণি: এই হাসির জন্যই সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনা পোহাতে হয় আমাকে। একবার কেউ একজন এসে কেঁদে কেঁদে বলছেন, ‘আই লাভ ইউ, তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।’ তো পুরুষ মানুষ এভাবে অনেক জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছিল। যা দেখেই আমি হেসে দিয়েছিলাম। এরকম পরিস্থিতিও পড়তে হয়।
প্রিয়.কম: এবার জানতে চাইব পছন্দের পোশাক সম্পর্কে?
পরী মণি: শাড়ি পরতে ভালো লাগে। পছন্দের রং সাদা। তবে সব ধরনের ও সব রঙের শাড়িই আমার ভালো লাগে। বিশেষ করে দেশীয় তাঁত, জামদানি, সুতি শাড়িগুলোর সঙ্গে নিজেকে অনায়েসে মানিয়ে নিতে পারি। শাড়ি পরার ক্ষেত্রে কখন কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছি, তার উপর নির্ভর করে শাড়ির ধরন ও রংটা বাছাই করি। যেমন ধরুন বাসায় থাকলে কী পরব? কোনো মহড়তে গেলে কী পরব? পার্টিতে গেলে কেমন শাড়ি পরব? সব মিলিয়ে কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছি তার উপর নির্ভর করে শাড়ি পরা হয়।
প্রিয়.কম: ব্যক্তিগতভাবে ও পর্দার বিভিন্ন চরিত্রের প্রয়োজনে যখন পোশাক নির্বাচন করছেন, তখন কাদের সাহায্য বেশি নিয়ে থাকেন?
পরী মণি: ব্যক্তিগতভাবে একজন কাজ করেন। আর ছবির জন্য অন্যরা কাজ করেন। পোশাকের ক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে কাছের দুজন মানুষের মধ্যে একজন হচ্ছেন জোনায়েত করিম। আরেকজন হচ্ছেন রুহুল চৌধুরী। ওনারা আমার খুব কাছের। তাদের সাথে পোশাকের বিষয়ে আলোচনা করি। ‘স্বপ্নজাল’ ছবিতে যিনি আমার সঙ্গে কাজ করেছেন ওনার নাম মুক্তা। ওনার সাথে আমার এর আগে কাজ করা হয়নি। কিন্তু খুব কম সময়ের মধ্যে তিনিও আমার খুব কাছের হয়ে গেছেন। এরপর দেখা গেছে যে কোনো বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনাও করছি। আমাদের মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়াও তৈরি হয়েছে। দেখা গেল, কোনো এক ছবিতে তিনি নেই। তার পরেও সেখানকার অনেক কিছু তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
প্রিয়.কম: রূপালি পর্দার অভিনেত্রীদের উপর মেকআপের প্রেসারটা অনেকে বেশি থাকে, তাই অভিনেত্রীদের ত্বকের বাড়তি যত্নেরও প্রয়োজন হয়। তাই জানতে চাইব নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করার জন্য আপনি কী করেন?
পরী মণি: বডি অ্যান্ড ফেইসের জন্য ডাক্তার আমাকে একটি লোশনের পরামর্শ দিয়েছেন। ওটাই ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া আর কিছু করা হয় না। মাঝে মধ্যে মাসে একবার দুইবার পার্লারে গিয়ে স্পা ও ফেশিয়ালটা করা হয়। এ ছাড়া আমি খুব ন্যাচারালে বিশ্বাসী। খুব ন্যাচরাল থাকতে পছন্দ করি। আর মাঝে মধ্যে বাসায় কাজিনরা আসলে জোর করে এটা সেটা মেখে টেখে দেয়।
প্রিয়.কম: রেগে গেলে কী করেন?
পরী মণি: রেগে গেলে হালকা চিল্লচিল্লি কর। হালকা চিল্লা চিল্লিটাও অনেক লাউড হয়ে যায়। এরপর নিজে নিজেই থেকেই থেমে যাই। কিন্তু রাগের মধ্যে যদি কেউ আমাকে থামাতে আসেন, তাহলে আরও বেশি রাগ করি।
প্রিয় ফ্যাশন/গোরা
পাঠকের মন্তব্য(০)
মন্তব্য করতে লগইন করুন