যেসব চ্যানেল ছাড়পত্র পেয়েছে
তরঙ্গ (ফ্রিকুয়েন্সি) বরাদ্দ ও নিরাপত্তা ছাড় পাওয়া নতুন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো হল- ঢাকা বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল (ডি বাংলা), নিউ ভিশন টিভি, রেনেসাঁ টিভি, রংধনু টিভি, যাদু টিভি, আমার গান টিভি, চ্যানেল টোয়েন্টিওয়ান, এটিভি, নিউজ টোয়েন্টিফোর এবং বাংলা টিভি।ডি বাংলা:
ঢাকা বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধূরী। তার সাথে যুক্ত আছেন কয়েকজন প্রবাসী। ঢাকা বাংলা মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এই টিভি চ্যানেল। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ অবজারভারে রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে অবজারভারের সম্পাদক হন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে দীর্ঘসময় নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা বোর্ডেরর চেয়ারম্যান।
নিউ ভিশন টিভি:
নিউ ভিশন টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর। এই চ্যানেলের জন্য সুপারিশ করেছিলেন সাংসদ সুকুমার রঞ্জন রায়। এর আগে শাহ আলমগীর এশিয়ান টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কাজ করেন। এর আগে তিনি চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশনের হেড অব নিউজ, যমুনা টেলিভিশনের পরিচালক (বার্তা) এবং মাছরাঙা টিভির বার্তা প্রধান ছিলেন।
রেনেসাঁ টিভি:
বারিন্দ মিডিয়া লিমিটেডের রেনেসাঁ টিভির চেয়ারম্যান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। জানা গেছে, এই চ্যানেলটি শুধুমাত্র শিশুদের জন্য একটি বিশেষ চ্যানেল হিসেবে কাজ করবে। রাজশাহী-৬ আসন থেকে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আলহাজ্ব মোঃ শাহরিয়ার আলম। ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বি.কম এবং ১৯৯৩ সালে আই.বি.এ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এম.বি.এ ডিগ্রী লাভ করা মোঃ শাহরিয়ার আলম এর আগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড’র পরিচালক, নর্থ বেঙ্গল ক্রিকেট একাডেমীর চেয়ারম্যান এবং কুর্মিটোলা গল্ফ ক্লাবের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রংধনু টিভি:
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল রংধনু’র মালিকগণের মাঝে আছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম। এই টেলিভিশন চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন এইচ এম ইব্রাহিম, আর সুপারিশ করেছিলেন সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম। খালিদ মাহমুদ চৌধুরি দিনাজপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। অপরদিকে এইচ এম ইব্রাহিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে নোয়াখালি-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
যাদু টিভি:
জাদু মিডিয়া লিমিটেডের চ্যানেল যাদু টিভির চেয়ারম্যান এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুল হক। অর্থনীতিতে স্মাতক জনাব আনিসুল হক দেশের অন্যতম বড় শিল্পগ্রুপ মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। ৮০ দশকের শেষ দিকের টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক আনিসুল হক বাকপটু সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে ব্যবসায়ী মহল ছাড়াও সাধারন মানুষের কাছে আলোচিত এবং সমাদৃত। তার উপস্থাপনায় টিভিতে ‘এখনই সময়’ এবং ‘সবিনয়ে জানতে চাই’ অনুষ্ঠানগুলি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এ ছাড়া ঈদের আনন্দ মেলার প্রানবন্ত উপস্থাপক হিসাবেও তিনি সুনাম অর্জন করেন।
নিউজ টোয়েন্টিফোর:
নিউজ টোয়েন্টিফোরের মালিক ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ, যা বসুন্ধরা গ্রুপেরই একটা অংশ। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান। তিনি বসুন্ধরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও। ২০০১ সালে তাকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া তিনি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সার্ক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মেম্বার।
এছাড়া আরো আছে-
এটিভি: এটিভি চ্যানেলের মালিক চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা, বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ির আব্বাস উল্লাহ সিকদার। তিনি আলোচিত বেদের মেয়ে জোছনা সিনেমার প্রযোজক বলেই সমাধিক পরিচিত। আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
আমার গান টিভি: মিডিয়া বাংলাদেশ লিমিটেডের চ্যানেল আমার গান টিভির চেয়ারম্যান তরুণ দে। তার সাথে জড়িত আছেন সাংস্কৃতিক জগতের কয়েকজন।
চ্যানেল টোয়েন্টিওয়ান: ব্রডকাস্ট ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের টেলিভিশিন চ্যানেল টোয়েন্টিওয়ানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন কৌশিক। তার সাথে আছেন জাসদের কয়েকজন নেতা।
বাংলা টিভি: আবদুস সামাদের মালিকানাধীন বাংলা টিভি হবে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ চ্যানেল। বাংলা টিভি (বাংলা টিভি লিমিটেড) নামের নতুন এই চ্যানেলের কর্ণধার আবদুস সামাদ। তিনি লন্ডনে বাংলা টিভি নামের একটি চ্যানেলের মালিক।
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও যোগ্য জনবল দিয়ে ছাড়পত্র পাওয়া ১০টি চ্যানেল পরিচালনা করতে নূন্যতম ১ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন।
যে চ্যানেলগুলো ছাড়পত্র পায়নি
যে পাঁচটি চ্যানেল নিরাপত্তা ছাড় পায়নি এগুলো হল- ক্যামব্রিয়ান টেলিভিশন, গ্রিন মাল্টিমিডিয়া, তিতাস টিভি, চ্যানেল ৫২ এবং উৎসব টিভি।ক্যামব্রিয়ান টেলিভিশন:
বিএসবি ফাউন্ডেশনের এই টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক এমএ বাশারের রাজনৈতিক পরিচয়সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন, নিরাপত্তা ছাড় পাওয়ার আগেই রাজধানীতে এর গাড়ি ঘোরাঘুরি, জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি এবং স্টুডিও তৈরি করে এর শেয়ার বিক্রিসহ বেশ কিছু কারন এই চ্যানেলটির ছাড়পত্র না পাওয়ার পেছনে বেশ ভূমিকা রেখেছে বলে জানা গেছে।
গ্রিন টিভি:
গ্রিন মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের গ্রিন টিভির মালিকানায় ছিলেন গোলাম দস্তগীর, নিশাদ দস্তগীর প্রমূখ। গোলাম দস্তগীর জ্বালানি খাতে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। চ্যানেলটির জন্য সুপারিশ করেছিলেন হলেন সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
চ্যানেল ৫২:
বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) বাহারউদ্দিন খেলনের চ্যানেল ৫২-ও ছাড় পায়নি। তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত ব্যবসায়ী মূসা বিন শমসেরকে কীর্তিমান বাঙালি হিসেবে বিটিভিতে তুলে ধরা এবং তদন্তে বাহারউদ্দিনের সম্পৃক্ততা প্রমাণ হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তাকে তরঙ্গ বরাদ্দ ও নিরাপত্তা ছাড় দেওয়া হয়নি। তিনি দ্বিতীয় দফায় স্ত্রীর নামে আবেদন করেছিলেন।
ছাড়পত্র না পাওয়া আরো দুই চ্যানেল হল-
তিতাস টিভি: মিলেনিয়াম মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের তিতাস টিভিও নিরাপত্তা ছাড় পায়নি। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন সাংবাদিক সেলিম ওমরাও খান, ধানাদ ইসলাম দীপ্ত প্রমূখ। চ্যানেলটির জন্য সুপারিশ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম।
উৎসব টিভি: মিলেনিয়াম মাল্টিমিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের উৎসব টিভিও ছাড়পত্র পায়নি। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদ। চ্যানেলটির সুপারিশকারী সাংসদ মমতাজ বেগম।
প্রসঙ্গত, নতুন ১০টি চ্যানেলসহ দেশে বর্তমানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৪১টিত। আর চালু আছে ২২টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল।
বর্তমান সরকারের গত আমলে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ১০টি চ্যানেলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে ৭১ টিভি, চ্যানেল নাইন, সময় টিভি, বিজয় টিভি, গাজী টিভি (জিটিভি), ইনডিপেনডেন্ট টিভি, মাছরাঙা টিভি, এটিএন নিউজ, মাই টিভি ও মোহনা টিভি। এ ছাড়া ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এবং এপ্রিলে এসএ টিভির লাইসেন্স দেওয়া হয়।
২০১১ সালের জুনে এশিয়ান টিভি, অক্টোবরে গানবাংলা টিভি এবং ডিসেম্বরে দীপ্তবাংলা টিভির লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ১০টি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছিল। এগুলো হচ্ছে- বৈশাখী, আরটিভি, বাংলাভিশন, ইসলামিক টিভি, দেশ টিভি, দিগন্ত টিভি, সিএসবি, চ্যানেল ওয়ান, এসএ টিভি, যমুনা টিভি। এগুলোর মধ্যে ইসলামিক, দিগন্ত, সিএসবি ও চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচার স্থায়ী বা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য(০)
মন্তব্য করতে লগইন করুন