রুবেলের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেক তরুণী

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, উন্নয়ন কর্মকর্তা এরকম নানা পরিচয়ে পরিচিত তিনি। শুধু তাই নয়, দক্ষ অভিনেতার মতোই বিভিন্ন চরিত্রের গভীরে ঢুকে যান। বুঝার উপায় থাকে না পরিচয়টি মিথ্যা। এভাবেই মিথ্যা পরিচয় দিয়ে একের পর এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েছেন তিনি। বিয়েও করেছেন। চুরমার করে দিয়েছেন সম্ভাবনাময় অনেক জীবন। এমন একজন প্লে বয়ের নাম শেখ রুবেল। অগণিত মেয়ের প্রেম- ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। মিথ্যা পরিচয়ে কেড়ে নিয়েছেন সর্বস্ব। অত্যন্ত কৌশলে এই অপকর্মটি করতেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামে-বেনামে অনেক আইডি তার। এমনকি মেয়ে সেজেও অনেক আইডি চালাতেন তিনি। সর্বশেষ ধরা খেয়েছেন মেডিক্যালে কর্মরত এক তরুণীর কাছে। নির্যাতিতা ওই তরুণীর মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন শেখ রুবেল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, ব্যক্তি জীবনে অসুখি থাকার কারণেই একের পর এক মেয়েদের টার্গেট করে ভালোবাসার অভিনয় করতেন তিনি। বন্ধুতা দিয়ে শুরু করে সঙ্গী করতেন বিছানা পর্যন্ত। এসব দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। শেখ রুবেলের প্রতারণার শিকার এক তরুণী জানান, গত বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারিতে তার ফেসবুক আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান রুবেল। রিকোয়েস্ট কনফার্ম করার পরই ইনবক্সে হানা দিতে থাকেন তিনি। নিজেকে বিশেষ একটি বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তরুণীকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। কারণে-অকারণে কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কি করছেন এসব প্রশ্ন করতে থাকেন তরুণীকে। বিরক্ত হয়েই মাঝে-মধ্যে রিপ্লে দিতেন তরুণী। এরমধ্যে ইউনিফর্ম পড়া বেশ কয়েক ছবি পাঠান তরুণীকে। এভাবে চলে বেশ ক’দিন। দু’জনের মধ্যে একটা বন্ধুতা গড়ে উঠে।দিনে-রাতে যখন তখন চ্যাট হতো তাদের। এরমধ্যেই ফোন নম্বরও আদান প্রদান হয়। কথা হয় ফোনে। মাঝে-মধ্যে ভিডিও কলেও কথা হতো। কথা হতো ঘন্টার পর ঘন্টা। গভীর রাতে শুরু হলে শেষ হতো ভোরের আলোয়। ততদিনে বন্ধুতা থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। দেখা হয় দুজনের টঙ্গীতে। দিনভর ঘুরে বেড়ান। একসঙ্গে খাবার খান। সেদিন চুটিয়ে প্রেম করেন তারা।এরমধ্যেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রস্তাব দেন রুবেল নিজেই। রুবেলের কথামতো গত বছরের ১৩ই এপ্রিল বাড়ি থেকে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে চলে যান গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট বাজারে। সেখান থেকে গাড়িতে তরুণীকে টঙ্গিতে একটি কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করেন রুবেল। শুরু হয় নতুন সংসার। দু’চোখে তখন রঙিন স্বপ্ন। প্রজাপতির মতো উঁড়ে বেড়াচ্ছিলো তরুণীর মন। কারণে-অকারণেই দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি, ভিডিও চিত্র ধারণ করতেন রুবেল। এসবই যেন সুখের অংশ- মনে করতেন তরুণী।কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন সয়নি। বুঝতে পারেন তার স্বামী শেখ রুবেল কোনো বাহিনীতে চাকরি করেন না। মূলত গাজীপুরের একটি পোষাক কারখানায় চাকরি করেন। বুঝতে পারেন ভুল পথে পা দিয়েছেন তিনি। নিরবে কান্না করেন। এদিকে রুবেলের প্রতি পদক্ষেপেই তখন সন্দেহ বাড়তে থাকে তার। রুবেলের মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে হতভম্ভ হয়ে যান। অসংখ্য নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ চ্যাট। ছবি।তরুণী জানান, অনেক নারীর সঙ্গেই তার প্রেমের সম্পর্ক। নামে-বেনামে আইডি থেকে চ্যাট করেন তাদের সঙ্গে। ওই তরুণীর ধারণা শুরু থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক নারীর সান্নিধ্য পেয়েছেন রুবেল। এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য প্রমাণও পেয়েছেন তিনি। তখন থেকেই কলহ সৃষ্টি হয় দুজনের মধ্যে। গত বছরের নভেম্বরে ঘটে আরেক ঘটনা। কর্মক্ষেত্রে পরিচয় হয় স্বামী রুবেলের এক ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে। তখনই কঠিন সত্যটি ফাঁস হয়ে যায়। জানতে পারেন, তার আগেও তিনটি বিয়ে করেছেন রুবেল। ১০-১২ বছর বয়সের দুই বাচ্চাও আছে তার। জানার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তারপর কাটে আরও কিছু দিন। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন যা হওয়ার হয়েছে রুবেলকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন করে বাঁচতে হবে। গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি রুবেলকে ডিভোর্স দেন তিনি। ডিভোর্সের পর ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে ফেসবুকে অন্তত তিন-চারটি আইডি থেকে শুরু হয় অশ্লীল প্রচারণা। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে ধারণ করা ছবি, ভিডিও চিত্র ওই তরুণী ও তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠাতে থাকেন। একের পর এক ঘটতে থাকে ঘটনাগুলো। বাধ্য হয়েই ১লা জুন ঢাকা মেট্টোপলিটনের শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন ওই তরুণী। ৪ঠা জুন সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেন শেখ রুবেলকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল জানান, প্রেম করেছেন অনেক নারীর সঙ্গে। এরমধ্যে বিয়ে করেছেন চার জনকে। তিন জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। মিথ্যা পরিচয়ে প্রেম, বিয়ে করার পর এর আগেও জেল খেটেছেন তিনি। ২০১৬ সালের কথা। গোপালগঞ্জের এক তরুণীকে ফেসবুকে একই কায়দায় আকৃষ্ট করে প্রেম ও বিয়ে করেন। তারপর তরুণী যখন সত্য জানতে পারেন রুবেলকে ডিভোর্স দেন। ঠিক তখনই তার সঙ্গে ধারণকৃত ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেন রুবেল। এ নিয়ে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হলে জেল খাটেন তিনি। জিজ্ঞাসবাদে রুবেল জানিয়েছেন, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ না হলেও দুজনই আলাদা থাকেন। এই সংসারে দু’সন্তান আছে তার। এসব বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা নাজমুল নিশাত বলেন, রুবেল মূলত প্লে বয়। একের পর এক নারীদের সঙ্গে মিথ্যা পরিচয়ে প্রেমের নামে শারীরিক সম্পর্ক করা তার স্বভাব। ফেসবুকে নামে-বেনামে তার বিভিন্ন আইডি রয়েছে। বিভিন্ন পোশাকের ছবি এডিট করে এতে নিজের মুখ বসিয়ে দেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর দোষ স্বীকার করে গত ২৮শে জুন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন রুবেল। তার কাছ থেকে ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার খারুয়া বড়াইল গ্রামের আব্দুল খালেক শেখের পুত্র শেখ রুবেল।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us