ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্ভাগা দল বোধ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা! ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেও ফাইনালে উঠতে পারেনি প্রোটিয়ারা। গত আসরের সেমিতে শেষ ওভারের নাটকে নিউজিল্যান্ডের কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। ফাফ ডু প্লেসির নেতৃত্বে কি এবার ইংল্যান্ডে ‘চোকার’ তকমাটা ঘুচাতে পারবে দক্ষিণ আফ্রিকা? ভিলিয়ার্সকে ছাড়াও শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপগত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু গত বছর মাত্র ৩১ বছর বয়সেই জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। কারণটা সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন ভিলিয়ার্স। বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বই তাকে অবসরে বাধ্য করেছে। তবে ভিলিয়ার্সকে ছাড়াও কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন-আপ শক্তিশালী। ওপেনিংয়ে হাশিম আমলা-কুইন্টন ডি কক। ওয়ানডেতে আমলার ব্যাটিং গড় প্রায় ৫০। ১৭৪ ম্যাচে ৭ হাজার ৯১০ রান করেছেন তিনি। ৩৬ বছর বয়সী আমলার সম্ভবত এটাই শেষ বিশ্বকাপ। কুইন্টন ডি কক ১০৬ ওয়ানডেতে ৪৫.৫৬ গড়ে ৪৬০২ রান সংগ্রহ করেছেন। আইসিসির ব্যাটসম্যান র্যাঙ্কিংয়ে ডি কক রয়েছেন পঞ্চম স্থানে। তার পরেই অধিনায়ক ডু প্লেসি। ১৩৪ ওয়ানডেতে তার রান ৫১২০। গড় ৪৬.৫৪। মিডল-অর্ডারে নির্ভরতার প্রতীক ডেপি ডুমিনি ও ডেভিড মিলার। ১৯৪ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডুমিনির সম্ভবত এটা শেষ বিশ্বকাপ। ওয়ানডেতে ২৯ বছর বয়সী মিলারের স্ট্রাইকরেট ১০০-এর উপরে। মারকুটে মিলারের জন্য ইংল্যান্ডের উইকেট একেবারে আদর্শ। এছাড়া অলরাউন্ডার আন্দিলে ফেহলুকাওয়োও ভালো স্ট্রাইক রোটেট করতে জানেন।সমীহ জাগানো বোলারআইসিসির ওডিআই বোলার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ পাঁচে দক্ষিণ আফ্রিকার দুজন রয়েছেন। চতুর্থ স্থানে লেগস্পিনার ইমরান তাহির। এবারের আইপিএলে সর্বাধিক উইকেট নেন তাহির। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এখন পর্যন্ত ৯৮ ওয়ানডেতে ২৪.২১ গড়ে ১৬২ উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই বোলার। বোলার র্যাঙ্কিংয়ে পঞ্চম স্থানে ডানহাতি পেসার কাগিসো রাবাদা। জাতীয় দলের হয়ে ৬৬ ওয়ানডেতে রাবাদার শিকার ১০৬ উইকেট। ২৩ বছর বয়সী এই গতিতারকার সঙ্গে রয়েছেন অভিজ্ঞ ডেল স্টেইন। প্রজন্মের অন্যতম সেরা পেসার স্টেইন ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া পেসার লুঙ্গি এনগিডিও বল হাতে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন। ১৮ ওয়ানডেতে ৩৪ উইকেট নিয়েছেন এনগিডি। চোটের কারণে এনরিক নরতিয়ে বাদ পড়ায় বিশ্বকাপ দলে জায়গা মিলেছে অভিজ্ঞ পেস অলরাউন্ডার ক্রিস মরিসের। এছাড়া রয়েছেন ডানহাতি পেসার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ও বাঁহাতি স্পিনার তাবরিজ শামসি। সবমিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইন-আপ বেশ শক্তিশালী।ফিল্ডিংটাও ভালো হওয়া চাইদলের ফিল্ডিং কোচ জাস্টিন ওনটং ভালো ফিল্ডিংয়ের উপরও জোর দিচ্ছেন। কারণ, গত আসরের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংসের মাঝপথে কোরি অ্যান্ডারসনের রানআউট মিস করেন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। এরপর গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গ্র্যান্ড ইলিয়টের ক্যাচ মিস ছাড়েন ফারহান বেহারদিন। জীবন পেয়ে ওই ইলিয়টই শেষ ওভারে হারিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে।কতদূর এগোতে পারবে প্রোটিয়ারা?ক্রিকেটবোদ্ধারা ২০১৯ বিশ্বকাপের শেষ চারে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে রেখেছেন। চতুর্থ স্থানের জন্য তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে অন্য দলগুলোর চেয়ে এগিয়ে রাখছেন। তবে রাউন্ড রবিন লীগে প্রেটিয়াদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ। এ দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচগুলো তাই দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটে-বলে পারফরম্যান্স ভালো হলে আর ভাগ্যের সহায়তা পেলে এবার ফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার।স্কোয়াড: ফাফ ডু প্লেসি (অধিনায়ক), হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, জেপি ডুমিনি, এইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, ইমরান তাহির, ডেল স্টেইন, আন্দিলে ফেহলুকাওয়ো, কাগিসো রাবাদা, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, ক্রিস মরিস, লুঙ্গি এনগিডি, রাশি ভ্যান ডার ডুসন ও তাবরিজ শামসি।ম্যাচসূচিতারিখ প্রতিপক্ষ ভেন্যু৩০শে মে ইংল্যান্ড ওভাল২রা জুন বাংলাদেশ ওভাল৫ই জুন ভারত সাউদাম্পটন১০ই জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাউদাম্পটন১৫ই জুন আফগানিস্তান কার্ডিফ১৯শে জুন নিউজিল্যান্ড বার্মিংহাম২৩শে জুন পাকিস্তান লর্ডস২৮শে জুন শ্রীলঙ্কা চেস্টার-লি-স্ট্রিট৬ই জুলাই অস্ট্রেলিয়া ম্যানচেস্টার