৬ বছর আগে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও হাসপাতালটিতে ৩১ শয্যারই জনবল নেই। প্রায় সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ উপজেলায় মাত্র ৫ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি পদটি শূন্য। ওই পদে ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা. শামীমা জাহান। ৭-৮ মাস আগে তিনি জেলা সদর হাসপাতালে বদলি হন। বছর খানেক ধরে আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদটিও শূন্য আছে। মেডিকেল অফিসার ডা. মিনাক্ষী দেবনাথ দীর্ঘদিন অন্যত্র প্রেষণে থাকার পর সপ্তাহখানেক আগে তাকে সিভিল সার্জন অফিসে পদায়ন করা হয়েছে। ফলে এ পদটিও শূন্য। ডেন্টাল সার্জন ডা. মো. শামীম হোসেন। তিনি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে তিন মাস আগে চলে যান। অথচ বেতন তুলছেন শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। আরেকজন মেডিকেল অফিসার (হোমিও) ডা. মঈন উদ্দিন আহমদ মামুন। তিনি দু’বছর ধরে ডেপুটেশনে ঢাকা হোমিও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যান। সপ্তাহের একদিন বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন তিনি। কিন্তু প্রতি মাসে বেতন নেন শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে। এদিকে উপজেলার ৯ ইউনিয়নের নয়টি উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতেই কোনো মেডিকেল অফিসার নেই। একমাত্র হুগলীয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার ডা. শুভ্র তুষারের সিং পদায়ন থাকলেও তিনি কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগে ও জরুরি বিভাগে প্রেষণে কর্মরত আছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ এ টি এম আনোয়ার গাজী বলেন, ‘ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল অফিসার পদটি এক থেকে তিন বছর ধরে খালি রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসারগণ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে সাব অ্যাসিসটেন্ট (সেকমো) ডাক্তার স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। ৫০ শয্যায় উন্নীত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির ৫০ শয্যার কোনো জনবলের মঞ্জুরি আজ অবধি পাওয়া যায়নি। উপরন্তু ৩১ বেডের ১১টি পদের মধ্যে আরএমও, মেডিকেল অফিসার ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি)সহ তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। মেডিকেল অফিসার হোমিও ও ডেন্টাল সার্জন এই দুইজন অন্যত্র প্রেষণে রয়েছেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে মাঠপর্যায়ে ইপিআই ও অন্যান্য কার্যক্রমের সুপারভিশন ও মনিটরিং ব্যাহত হচ্ছে।হাসপাতালটিতে আল্টাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তারের অভাবে সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এই মূল্যবান মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বিকল। টেকনেশিয়ান পদটিও অনেকদিন ধরে শূন্য।হাপাতালটির প্যাথলজিস্ট দুইজন থাকলেও অভিজিৎ বণিক দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেষণে চলে গেছেন। কিন্তু প্রতি মাসের বেতন তুলছেন শ্রীমঙ্গল হাসপাতাল থেকে।এই হাসপাতালটিতে ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসার (হোমিও) এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) এই তিনটি পদে পদায়ন করা হলেও তারা প্রেষণে অন্যত্র কাজ করছেন কিন্তু নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। ফলে হাসপাতালের এই তিনটি পদ শূন্য দেখাতে না পারায় এসব পদে নতুন কাউকে পোস্টিং দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না।