প্রাণীখেকো উদ্ভিদ `সূর্যরশ্মি`দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের উন্মুক্ত জমিতে ‘প্রাণীখেকো’ উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছে কলেজটির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ। নিজ ক্যাম্পাসে এমন উদ্ভিদের সন্ধান পেয়ে আনন্দিত ও গর্বিত সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, পাঠ্যপুস্তকে এমন উদ্ভিদ সম্পর্কে পড়লেও বাস্তবে এমন উদ্ভিদের সন্ধান পেয়ে হাতে-কলমে শেখার বিষয়ে আগ্রহী তারা।গত ১৫ জানুয়ারি দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের উত্তরদিকে পরিত্যক্ত ভূমিতে এই উদ্ভিদগুলো শনাক্ত করেন সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, “এক বীজপত্রী মাংসাশী উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Drosera Rotundifolia যাকে বাংলায় বলা হয় ‘সূর্যশিশির’। উদ্ভিদটি পতঙ্গকে অর্থাৎ প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মাংসাশী উদ্ভিদের মধ্যে এই প্রজাতি সবচেয়ে বড়। ৪-৫ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট গোলাকার থ্যালাস সাদৃশ্য উদ্ভিদটির মধ্য থেকে একটি লাল বর্ণের ২-৩ ইঞ্চি লম্বা পুষ্পমঞ্জুরি হয়। ১৫-২০টি তিন থেকে চার স্তরের পাতা সাদৃশ্য মাংসল দেহের চারদিকে পিন আকৃতির কাঁটা থাকে। মাংসল দেহের মধ্যভাগ অনেকটা চামচের মতো ঢালু এবং পাতাগুলোতে মিউসিলেজ সাবস্টেন্স নামক একপ্রকার এনজাইম (আঠা) নিঃসৃত হয়। সুগন্ধ আর উজ্জ্বলতায় আকৃষ্ট হয়ে পোকা বা পতঙ্গ উদ্ভিদটিতে পড়লে এনজাইমের আঠার মাঝে আটকে যায় এবং পতঙ্গ নড়াচড়া করলে মাংসল পাতার চারদিকে পিনগুলো বেকে পোকার শরীরে ফুড়ে গিয়ে পোকাকে ধরে ফেলে। এভাবেই এই উদ্ভিদটি পোকা বা পতঙ্গকে খেয়ে ফেলে।”মাংসাশী বা পতঙ্গখেকো এই উদ্ভিদের ইংরেজি নাম Sundews । এটি Caryophyllales বর্গ এবং Droseraceae গোত্রের অর্ন্তভুক্ত। কলসপত্রী ও পাতাঝাঝি নামে আরও দুইটি এর সদস্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।প্রাণীখেকো উদ্ভিদ `সূর্যরশ্মি`দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এমএসসি শেষ পর্বের ছাত্র মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ‘২০১৬ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরে জীববিজ্ঞান গ্যালারিতে এই সূর্যশিশির উদ্ভিটটি সম্পর্কে জানতে পারি। এটি শুধু দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলেই জন্মায়। এরপর বিভিন্ন স্থানে এই উদ্ভিদটি খোঁজার চেষ্টা করি। সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সহযোগিতায় নিজ কলেজ ক্যাম্পাসেই এই উদ্ভিদটির সন্ধান পাই।’তিনি বলেন, ‘রূপকথার গল্পে মানুষখেকো গাছ বা প্রাণীখেকো উদ্ভিদের কথা শুনেছি। কিন্তু নিজ ক্যাম্পাসেই বাস্তবে একটি উদ্ভিদের পোকা খাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এটি নিয়ে কাজ করার এবং হাতে কলমে শিক্ষালাভের একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হলো এই উদ্ভিদটি পেয়ে।’একই কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী হাফিজা ইসলাম হ্যাপী জানান, ‘আমরা খুবই গর্বিত যে আমাদের ক্যাম্পাসে এরকম একটি পতঙ্গখেকো উদ্ভিদ আমরা পেয়েছি। পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি নিজ ক্যাম্পাসেই পতঙ্গখেকো উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে করছি।’দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. ফিরোজ জানায়, ‘প্রাণীখেকো এই ধরনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’ সে জানায়, পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি হাতে-কলমে এই উদ্ভিদ নিয়ে শিক্ষার্জন করতে পারবে তারা। যা উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্র নিয়ে শিক্ষালাভে সবার জন্য সহায়ক হবে।পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বাবুল হোসেন জানান, ‘মাংসাশী বা পতঙ্গখেকো এই উদ্ভিদটি সংরক্ষণের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এজন্য সরকার ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। এর আগে বাংলাদেশে এই উদ্ভিদের গবেষণা করা হয়নি। এটি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়েছে। কীভাবে কপি ও সংরক্ষণ করা যায় এটি ভাবা হচ্ছে এবং টিস্যু নিয়ে কাজ করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই উদ্ভিদটি প্রোটিন হিসেবে পোকামাকড় খায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও এই উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।’