স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেয়া হবে। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত আইনের একটি খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আইনের খসড়া অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। সরকারি এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও সংগৃহিত অর্থের সঠিক ব্যবহারের ওপর এর সফলতা নির্ভর করবে। সংস্থাগুলো থেকে অর্থ নিয়ে তাদের সমৃদ্ধি যাতে আটকে দেয়া না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান মূলত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে রাষ্ট্রের আয়ের উৎস বাড়ানোর জন্য। টেক্সের বাইরে যেসব আয়ের উৎস রয়েছে রাষ্ট্রের এর মধ্যে এগুলো অন্যতম। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান অনেক সময় লসের মধ্যে পড়ে। তারা নিজেরাই দাঁড়াতে পারে না। তবে এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই আমি দেখছি আমি। এতে রাষ্ট্রের আয় বাড়বে। কিন্তু এতে করে যেন ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো আবার ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। তাদের পর্যাপ্ত সুবিধা যেমন ভালো প্রশিক্ষণ, সেমিনার তাদের যাবতীয় সুযোগ নিশ্চিত করে এই ধরনের প্রদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে। তা না করতে পারলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও মনোবল ভেঙে পড়তে পারে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, এসব সংস্থা চালাতে যে খরচ হয় এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে যে অর্থ লাগে, তা তাদের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হবে। এছাড়া আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ অর্থ এসব সংস্থা সংরক্ষণ করতে পারবে। ওই সংস্থার কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ড ফান্ডের অর্থও তারা সংরক্ষণ করবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রাষ্ট্রের স্বশাসিত সংস্থাগুলোর আর্থিক স্থিতির পরিমাণ বর্তমানে দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে আছে। এই টাকাগুলো কোনো ভালো কাজে ইনভেস্ট হচ্ছে না। এজন্য সরকারের পলিসি হল, নতুন আইনের মাধ্যমে কিছু প্রভিশন রেখে বাকি টাকাটা সরকারি কোষাগারে নিয়ে আসা। আমাদের অনেক প্রজেক্ট আছে, জনকল্যাণমূলক কাজ, যেগুলো আর্থিক সংকটের কারণে অর্থায়ণ করা যায় না। এ জন্য সরকারের এ আইনের মাধ্যমে পলিসি হলো-কিছু প্রভিশন রেখে সরকারের কোষাগারে নিয়ে আসা এবং জনকল্যাণমূলক কাজ করা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো তাদের পরিচালন ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জমা রাখবে। আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালক ব্যয়ের ২৫ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করতে পারবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিধি মোতাবেক যদি পেনশন, প্রভিডেন্ড ফান্ড থাকে সেটাও রেখে দেবে। এরপরও যা থাকবে (উদ্বৃত্ত) সেটা সরকারের কোষাগারে জমা দেবে। ওনাদের বিপদে ফেলা হবে না। প্রয়োজনীয় অর্থ রাখার পর বাকি অর্থটা সরকারি কোষাগারে দেবেন। উদ্বৃত্ত অর্থ আছে এমন স্বায়ত্তশাসিত ৬৮টি সংস্থার তালিকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের তালিকা রয়েছে। যেমন- বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশনের ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, পেট্টোবাংলার ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, ডিপিডিসির ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে।