আমি সব নাটকেই দর্শকদের জন্য কোনো একটি মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করি। শুধু বিনোদনের জন্য নাটক নির্মাণ করি না। হাসির মধ্য দিয়ে হলেও দর্শকদের বোঝার ও শেখার জন্য নাটকে কিছু রাখি। বড় বিষয় হলো আমি নাটক নির্মাণ করি সাধারণ দর্শকদের জন্য। নিজের কাজ নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বললেন চলতি সময়ের জনপ্রিয় নাট্যকার ও নির্মাতা সাগর জাহান। ২০০৫ সালে তিনি প্রথম নাটক লেখেন। তার গল্প নিয়ে নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার নির্মাণ করেন ‘নীল গ্রহ’ শিরোনামের একটি খণ্ড নাটক। এতে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ ও অপি করিম। এরপর ২০০৯ সালে নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তার নির্মিত প্রথম নাটক ‘দূরের মেঘ’। এই নাটকে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ ও রিচি সোলায়মান। প্রথম নাটক নির্মাণ করেই সাগর জাহান সবার নজরে আসেন। বর্তমানে তিনি দেশের ব্যস্ত নাট্যনির্মাতাদের একজন। এবার ঈদে তার নির্মাণে তিনটি একক, দু’টি ধারাবাহিক নাটক ও একটি টেলিছবি প্রচার হয়েছে। এসবের মধ্যে তার নির্মিত ‘মায়া সবার মতো না’ শিরোনামের নাটকটি দর্শকদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলে। এ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন মেহজাবিন। বর্তমানে নাটকে ভালো গল্প নেই বলে অনেকে মন্তব্য করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা হিসেবে সাগর জাহানের অভিমত কি? তিনি বলেন, এটি সত্যি আমাদের এখন ভালো কনটেন্টের অভাব। তাই নির্মাতাদের ভালো গল্পের দিকে জোর দেয়া প্রয়োজন। কোয়ালিটি না থাকলে সেই গল্পের নাটক-টেলিছবি দর্শক কখনোই নিবে না। এই সময়ে নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাতাদের কাছে কোন বিষয়টি প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হচ্ছে? সাগর জাহান বলেন, নির্মাতারা বাজেট সংকটে ভুগছেন। আগের তুলনায় নাটকের বাজেট এখন অনেক কম। নতুন করে যোগ হয়েছে বাজেট বৈষম্য। এই সময়ে কতিপয় নির্মাতা ভালো বাজেট পাচ্ছেন। আবার অন্য নির্মাতারা তা পাচ্ছেন না। নির্দিষ্ট কয়েকজন নির্মাতাকে পর্যাপ্ত বাজেট দেওয়া হচ্ছে। আমি নিজেকে দিয়ে বলি, আমাকে একটি খণ্ড নাটকের জন্য তিন লাখ টাকা বাজেট দেয়া হচ্ছে। আবার অন্য নির্মাতাকে দেয়া হচ্ছে দুই লাখের কম। বাজেটের এই বৈষম্য দূর করতে হবে। নির্মাতারা এই সময়ে আর কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পেশাদারিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। যার কারণে যে যার মতো কাজ করছেন। কখনো দেখা যায় শুটিং স্পটে শিল্পী আসতে দেরি করছেন। আবার কখনো দেখা যায় নির্মাতা মধ্যরাত পর্যন্ত শুটিং করছেন। ফলে পরের দিন সেই শিল্পীর শিডিউল জনিত সমস্যা হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে যদি আমাদের নীতিমালা প্রয়োগ হতো তাহলে এই সমস্যাগুলো আর থাকতো না। অনেকেরই অজানা সাগর জাহান একসময় অভিনয়ও করেছেন। তবে তা নাটকে নয়। শিশুশিল্পী হিসেবে ৩৪টি চলচ্চিত্রে তাকে দেখা গেছে। তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র হলো ‘নিঃস্বার্থ’। এটি নির্মাণ করেন সাইফুল আজম কাশেম। অভিনয়ের বাইরে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেন তিনি। ২৫টির মতো চলচ্চিত্রে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন বলে জানান। ‘ভাবির সংসার’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এ ছাড়া জনপ্রিয় অভিনেতা ওমরসানীর ‘প্রেমগীত’ চলচ্চিত্রে নায়কের জন্য প্রথম প্লেব্যাক করেন। ১৯৯৭ সালে ‘বেকার’ শিরোনামের একটি গানের অ্যালবামও প্রকাশ করেন সাগর জাহান। জীবনমুখী গান দিয়ে সাজানো হয় অ্যালবামটি। সেই সময়ের কথা মনে করে এ নির্মাতা বলেন, অভিনয় ও গান গাওয়া থেকেই হঠাৎ আমি লেখালেখি ও নির্মাণে চলে আসি। সংগীতপরিবারে জন্ম নিয়েছি। সেই কারণে সংগীতের সঙ্গেই আমার বেড়ে ওঠা। কিন্তু হয়ে গেলাম নাট্যনির্মাতা।