ঈদ আনন্দের অন্যতম অংশ হলো টেলিভিশন অনুষ্ঠান। প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বেশিরভাগ চ্যানেলেরই এ আয়োজন ছয় কিংবা সাতদিনের। কয়েকটি টিভি চ্যানেল অবশ্য আট থেকে দশদিনও অনুষ্ঠান প্রচার করবে। এরই মধ্যে ঈদের প্রথম তিনদিনের আয়োজন শেষ। এ তিনদিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিন্নতার ছোঁয়া উপভোগ করেছেন দর্শক। এবারের ঈদের আয়োজনে সব মিলিয়ে প্রচার হওয়ার কথা ছয় শতাধিক নাটক। ইতিমধ্যে প্রচার হওয়া নাটকগুলোর গল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। রোজার ঈদে কেবল একই ধরনের রোমান্টিক গল্পের নাটক প্রচারের অভিযোগ ছিল। এবার প্রথম তিনদিনে সেই অভিযোগ অনেকটাই দূর হয়েছে বলা চলে। কারণ রোমান্টিক নাটকের পাশাপাশি ম্যাসেজর্নিভর, কমেডি ও থ্রিলারধর্মী নাটকেরও প্রাধাণ্য লক্ষ্য করা গেছে এবার। তবে ঈদে মাত্রাতিরিক্ত ধারাবাহিক নাটক প্রচার নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল দর্শকদের। কারণ ছয় কিংবা সাত পর্বের ধারাবাহিক নাটক ধারাবাহিকভাবে একই সময়ে প্রতিদিন দেখা বেশ কষ্টসাধ্য। এদিকে নাটকের বাইরে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল প্রচার করেছে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র, ছায়াছবির গানের অনুষ্ঠান, সংগীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, গেইম শো, লাইভ সংগীত পরিবেশনা, তারকাদের টক শো, শিশুতোষ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। ব্যতিক্রমী আয়োজনের চেষ্টার পাশাপাশি এবার অতি বিজ্ঞাপনের মতো বিরক্তির বিষয়ও কম দেখা গেছে। টিভি চ্যানেলগুলো চেষ্টা করেছে অনুষ্ঠানের মাঝে কম বিজ্ঞাপন প্রচারের। কয়েকটি চ্যানেল স্বল্প বিরতির নাটকও প্রচার করেছে। এদিকে বিজ্ঞাপনের বিরক্তি এড়াতে এবার দর্শক ইউটিউবেও নাটক-টেলিছবি উপভোগ করছেন। টিভি চ্যানেলে দিনে প্রচার হওয়া অনেক নাটকই ইউটিউব চ্যানেলে দর্শক দেখতে পারছেন রাতে কিংবা পরদিন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে ঈদের দিন প্রচারিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘আনন্দমেলা’ ছিল বরাবরের মতো প্রশংসিত। চিত্রতারকা ফেরদৌস ও পপির উপস্থাপনায় বেশ বৈচিত্র্যে পূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানটি। এছাড়াও একই চ্যানেলে প্রচারিত চলচ্চিত্রের গান নিয়ে ‘ছায়াছন্দ’ এবং অর্ণব ও মিথিলার দ্বৈত সংগীতানুষ্ঠান ছিল দর্শকপ্রিয়তায়। এদিকে এটিএন বাংলায় প্রচারিত ‘মৌসুমীস লাইভ কিচেন-২’ অনুষ্ঠানটি প্রশংসিত হয়েছে। একই চ্যানেলে ঈদের দিন প্রচার হয় হানিফ সংকেতের রচনা ও পরিচালনায় নাটক ‘অজ্ঞ-বিজ্ঞ সমাচার’। ভাষার বিকৃতি না করা এবং মাতৃভাষার প্রতি যথার্থ ভালোবাসা প্রদর্শনের আহবান জানিয়ে নির্মিত এ নাটকটি ছিল এককথায় অসাধারণ। একই চ্যানেলে প্রচারিত ড. মাহফুজুর রহমানের একক সংগীতানুষ্ঠানও ছিল বেশ আলোচিত। এটিএন বাংলায় ভিন্ন আয়োজনে প্রচারিত ফাগুন অডিও ভিশনের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘পাঁচফোড়ন’ও ছিল প্রশংসিত। চ্যানেল আইতে প্রচারিত শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় ফার্মারস গেইম শো ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ এবারও দর্শকদের দারুণ আনন্দ দিয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রতিটি খেলা এবং বিদেশি প্রতিবেদনগুলো ছিল বেশ আকর্ষণীয়। এছাড়াও প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ছোটকাকু’ সিরিজের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ৮ পর্বের সিরিজ ‘খালি খালি নোয়াখালী’ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। একই চ্যানেলে ফেরদৌস হাসানের রচনা ও পরিচালনায় নাটক ‘বালিশ বিলাস’ও পছন্দ করেছেন দর্শক। একুশে টেলিভিশনে নাটক ‘জামাই হাজির’ ছিল প্রশংসিত। একই চ্যানেলের নাটক ‘আমি তোমার আঙ্গুল ধরতে চাই’ এবং কমেডি শো ‘একুশের ঈদের ঢোল’ ছিল দর্শকপ্রিয়তায়। ঈদের পরদিন এনটিভিতে প্রচারিত তারকাবহুল নাটক ‘মুগ্ধ ব্যাকরণ’ ছিল দর্শকপ্রিয়তায়। এর বাইরে একই চ্যানেলের নাটক ‘পারফেক্ট ওয়াইফ’ ও টেলিছবি ‘কেস ৩০৪০’ ছিল আলোচিত। আরটিভিতে বরাবরের মতো এবারও প্রচার হয় ‘সিসিমপুর’, এটি ছিল শিশুদের পছন্দের শীর্ষে। এছাড়াও একই চ্যানেলের একক নাটক ‘লাইফ মেট’ ও ‘আশ্রয়’ ছিল প্রশংসিত। বাংলাভিশনে প্রচারিত নাটক ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স’ পেয়েছে বেশ দর্শকপ্রিয়তা। একই চ্যানেলের নাটক ‘মায়া সবার মতো না’, ‘রিলেশনশিপ’ ও ‘অভিমানী কাজল’ও প্রশংসা পেয়েছে। বাংলাভিশনের সাত পর্বের নাটক ‘ভাড়াটিয়া’ও নজর কেড়েছে দর্শকদের। বৈশাখী টেলিভিশনের একক নাটক ‘হঠাৎ সেলিব্রেটি’ ছিল আলোচিত। একই চ্যানেলে প্রচার হওয়া টেলিছবি ‘আয়না মতি’ পছন্দ করেছে দর্শক। এছাড়া ‘ফানি মোমেন্ট’ অনুষ্ঠানটিও ছিল উপভোগ্য। মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত কার্টুন ‘চাচা ভাতিজা’ শিশুদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও একক নাটক ‘কিডন্যাপড’ ছিল আলোচিত। একই চ্যানেলে প্রচারিত টেলিছবি ‘ম্যারেজ ম্যাটারিয়াল’ ও ‘স্টার নাইট’ অনুষ্ঠানটি ছিল আলোচনায়। চ্যানেল নাইনে প্রচার হওয়া ভিন্নধর্মী গল্পের নাটক ‘তোমার হাজবেন্ড কি জানে?’ আলোচনায় ছিল। এছাড়াও একই চ্যানেলে প্রচারিত টেলিছবি ‘রোমিও জুলিয়েট’ ও একক নাটক ‘শেষ বিকেলের আলো’ পছন্দ করেছেন দর্শক। দেশটিভিতে প্রচারিত ছায়াছবির গান নিয়ে অনুষ্ঠান ‘ছায়াছন্দ’ ছিল প্রশংসিত। এছাড়াও একই চ্যানেলে প্রচারিত একক নাটক ‘ফিনিক্স পাখির গান’ আলোচনায় ছিল। গাজি টিভিতে প্রচারিত একক নাটক ‘জয়েন্ট ফ্যামিলি’ ছিল প্রশংশিত। একই চ্যানেলে প্রচারিত টেলিছবি ‘অভিশাপ’ পছন্দ করেছেন দর্শক। এশিয়ান টিভিতে প্রচারিত ‘সেলিব্রেটি আড্ডা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটিও প্রশংসিত হয়েছে দর্শকমহলে।দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান ‘ঈদ স্পাইসি কিচেন’ প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। এছাড়াও একক নাটক ‘মায়া ’ ও ‘নো ওয়ে আউট’ দর্শক পছন্দ করেছেন। নাগরিক টিভিতে প্রচার হওয়া ঈদ ধারাবাহিক নাটক ‘মিষ্টার হেলানম্যান’ রয়েছে দর্শকপ্রিয়তায়। এছাড়াও একই চ্যানেলে প্রচার হয় প্রশংসিত ধারাবাহিক নাটক ‘তিন রাস্তার ভূত’ ও একক নাটক ‘সুইট সিক্সটিন’। ঈদের দিন থেকে সপ্তম দিন পর্যন্ত দুরন্ত টিভিতে প্রচার চলতি ‘দ্য ফেইরি টেলার’ প্রশংসিত হচ্ছে।