গত ১৩ই জুলাই দুপুরে রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি কদমতলীর সাইবোর্ড এলাকা থেকে ‘৯৯৯’ এ ফোন দেন। তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। তিনি জরুরি এম্বুলেন্স চান। পুলিশকে কদমতলীর কাঠেরপুলের ইউনিসেফ অফিসের পেছনের বাসায় ঠিকানা দেন। রবিউলের ফোন লাইন কেটেই পুলিশ মুহুর্তেই কদমতলীর শিশু হাসপাতালে ফোন দেয় এম্বুলেন্সের জন্য। একটি এম্বুলেন্স দ্রুত সেখানে পৌঁছে যায়। পরে রবিউল তার স্ত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তাদের একটি ফুটফটে ছেলে সন্তান হয়েছে। রবিউল পরে ‘৯৯৯’ এ দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ফোন করে কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিবাদন জানান। জানা-অজানা এমন অনেক সেবা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশের ‘৯৯৯’। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে চালু করা হয় জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’। সারাদেশে এই নম্বরটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাধারণ জনগণ ২৪ ঘণ্টা বিনা টোলে তাদের প্রয়োজনীয় সমস্যা জানাতে পারছেন। ওই কেন্দ্র থেকে পুলিশের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যার সমাধানের পরামর্শ দিচ্ছেন। সমাধানের জন্য কোথাও ফোন করার প্রয়োজনবোধ করলে সেখানেও কথা বলছেন পুলিশই। সূত্র জানিয়েছে, কলটি উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৯৯ এ কল এসেছে ১ কোটি ১৬ লাখ ১৪ হাজার ২৪৬ টি। এরমধ্যে কল রিসিভ করে পুলিশ ভুক্তভোগীকে সেবা দিয়েছে ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫১৪ টি। এরমধ্যে ব্ল্যাককলের মাত্রা বেশী ছিল। ব্ল্যাক কলের সংখ্যা হচ্ছে ৬২ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩ টি। ব্ল্যাক কলের মাত্রা বেশী হওয়ার কারণ, অনেকেই কল করছেন, তাদের মোবাইল মিউজিক বাজছে কিন্তু কথা বলছেন না, কেউ ফোন করে নীরব থাকছেন, কারও ফোন সঙ্গে সঙ্গে কেটে যাচ্ছে। কেউবা কলটি টেস্ট করছেন। কারও কল সংযোগ পাচ্ছে না। এসব কারণে ব্ল্যাক কলের সংখ্যা বাড়ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভুক্তভোগীর কল পাওয়া মাত্রই তাৎক্ষণিক সেবার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ কারণে সারাদেশে টোলবিহীন এ কলটিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গত ২০১৭ সালের ১২ই ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর আবদুল গনি রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের ক্রাইম কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টারে এক অনাম্বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘৯৯৯’ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। প্রয়োজনে যে কেউ ফোন করে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিস সেবা পাবেন। উন্নত বিশ্বে জরুরি কল সেন্টার চালু আছে। সেগুলোতে ফোন করে নাগরিকেরা দ্রুত সেবা নিয়ে থাকেন। সেই আদলে এই সেবাটি চালু করা হয়েছে। এ বিষয়ে ৯৯৯ কলটির সুপারভাইজার (ডিসি) মো. তোবারক হোসেন মানবজমিনকে জানান, প্রথম থেকেই কলটিতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। এই কলটি চালু করা হয়েছে মূলত ৩টি সেবার জন্য। কিন্তু এই নম্বর এখন জনসাধারণের বিপদের বন্ধু হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি আরও বলেন, নারী নির্যাতন থেকে প্রতিকার পাওয়াসহ একটি বিড়াল বড় ভবনের কোন স্থানে আটকা পড়লেও ভুক্তভোগী ও জনসাধারণ ‘৯৯৯’ কল করে থাকে। সূত্র জানায়, ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টারে কল রিসিভের জন্য পুলিশ সদস্যরা পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করে থাকেন। তারা ভুক্তভোগীর সমস্যাটি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুনে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। সূত্র আরও জানায়, এ পর্যন্ত ৯৯৯-এ আসা মোট কল থেকে ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫১৪টি কলের ভুক্তভোগীকে সেবা দিয়েছে পুলিশ। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গড় কল হিসাব করলে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার কল এসেছে ‘৯৯৯’। এই কল পর্যালোচনা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, গড়ে ৬৪.২০ ভাগ পুলিশী সেবা, ৩১.৬০ ভাগ ফায়ার সার্ভিস ও ৪.১০ ভাগ এ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য কল করেছেন সেবাগ্রহণকারীরা। ৯৯৯ কলের হেল্প ডেক্সের সমন্বয়কারী ইন্সপেক্টর আবদুল বারী জানান, আমরা জনসাধারণকে কাঙ্খিত সেবা দেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকি। অনেকেই আমাদের ফোন করে এমনিতেই ধন্যবাদ জানিয়ে থাকে।