অবশেষে অভিমান কাটতে শুরু করেছে ২০ দলের শরিকদের। জোট ত্যাগ, আল্টিমেটাম ও নানা অভিযোগে জোটে অস্থিরতা দেখা দেয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে শরিকদের কিছু বিষয়ে আশ্বাস দেয়ায় তাদের অসন্তোষ কমেছে। মান-অভিমান ভুলে এক সঙ্গে কাজ করার জন্য দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন তারা। জোটের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। এর আগে বিএনপির সঙ্গে ২০ বছর ধরে চলা রাজনৈতিক সঙ্গ ছিন্ন করে গত ৬ই মে জোট ত্যাগের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির রাজনীতি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টমুখী। যে কারণে বিএনপিতে ২০ দলের গুরুত্ব কমে গেছে। তেমন কোনো কর্মসূচি না থাকায় ২০ দলীয় জোট অকেজো হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ২০ দলকে অন্ধকারে রেখে জোটের প্রধান শরিক বিএনপির এমপিদের শপথগ্রহণ অনৈতিক। দীর্ঘদিনের এসব পুঞ্জীভূত ক্ষোভ জোটের অন্যান্য দলের নেতাদের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। পার্থর জোট ত্যাগের পর বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন ২০ দলের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। ২৩শে মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে ২৪শে মে তার দল জোটে থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। জোটের অন্যান্য দলের নেতারাও বর্জন করা নির্বাচনের সংসদে হঠাৎ যোগ দেয়ার বিরুদ্ধে এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের ক্ষোভ প্রশমনে বৈঠক ডাকে বিএনপি। বৈঠক শেষে জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আন্দালিভ রহমান পার্থ মান অভিমান থেকে জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি তিনি আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান গতকাল বলেন, আমাদের অভিযোগ ছিল জোটকে শক্তিশালী করা ও ঐক্যফ্রন্ট ত্যাগ করা। ২০ দলীয় জোট একটি এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এক সঙ্গে রয়েছি। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একটি রাজনৈতিক জোট। এখন নির্বাচনও নেই ঐক্যফ্রন্টও কার্যত নেই। এছাড়া আমাদের যে অভিযোগ ছিল তার ভিত্তিতে জোটের বৈঠকে বিএনপি যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এখন আর জোট ত্যাগের কোনো ব্যাপার নেই। তবে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ মানবজমিনকে বলেন, আমি জোট ছাড়ার পর থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি। এখন জনগণের জন্য নিজের দলের পক্ষ থেকেই কাজ করতে চাই। তবে বিজেপির অপর এক নেতা মানবজমিনকে বলেন, আমরা জোট ত্যাগ করার ঘোষণা দিলেও অন্য কোনো জোটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা ২০ দলের সঙ্গেই আছি। এটা সময়মতো দেখতে পারবেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, যারা জোট ত্যাগ করেছে সেটা তাদের ব্যাপার। যারা আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন সেটাও তাদের ব্যাপার। তবে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বৈঠক ডেকে বিএনপি তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এর পর থেকে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছেন। ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বলেন, আমরা সব সময় ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপির সঙ্গে আছি। বিএনপির দুর্দিনে জোট ছেড়ে যাব না। যে যাই বলুক আমাদের দল বিএনপিকে ছেড়ে যাবে না। এদিকে জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০ দলীয় জোটে তাদের অবস্থান অনেক দিন থেকেই তেমন জোরালো নয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জোট নিয়ে তারা কোন নেতিবাচক অবস্থানে যাবে না।