ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে থেকে এক ভুয়া নারী আইনজীবীকে রোববার আটক করেছে ‘টাউট উচ্ছেদ কমিটি’। আটক হওয়া ভুয়া নারী আইনজীবীর নাম মোসাম্মৎ মৌ। যিনি আদালত পাড়ায় সুফিয়া খানম রিমি নামে পরিচিত। আইনজীবী হয়েছেন জানিয়ে গত ডিসেম্বরে আইনজীবী সহকর্মীদের পাঁচ কেজি মিষ্টি খাইয়েছেন। ৭ বছর ধরে নিয়মিত আদালতে প্র্যাকটিস করছেন মোসাম্মৎ মৌ। অনেক বিচার প্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষাধিক টাকা। চিত্রনায়ক ফারুক, শাকিব খান, সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে রয়েছে তার নানা রকমের ছবি। তিনি সুফিয়া খানম নামে একজনের পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে ঢাকা আইনজীবী সমিতির জাল পরিচয়পত্র বানিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ভুয়া আইনজীবী হয়েও সর্বশেষ ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ইলেকশন কমিটিতে ছিলেন মৌ। তিনি কিভাবে ইলেকশন কমিটির সদস্য হলেন এ বিষয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারেননি কেউই। সর্বশেষ ঢাকা বারের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্বে থাকা মোখলেছুর রহমান বাদল মানবজমিনকে বলেন, মৌকে আমি চিনতাম। তবে সে যে ভুয়া আইনজীবী সেটা জানতাম না। আর এবারের নির্বাচনে সে আমাদের কোন কমিটিতে ছিল না। মোসাম্মৎ মৌ নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কমিশনের বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত ছিল বলে দাবি করেছেন টাউট উচ্ছেদ কমিটির অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বার আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, পুরো নির্বাচনে মৌ ইলেকশন কমিটির পক্ষে কাজ করেছে। নির্বাচনের দিন ৮ং বুথে সারাদিন ছিল সে। তার কোনো আইনের ডিগ্রি নেই। অথচ সাত বছর ধরে আইনজীবী পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির আইডি কার্ডও জাল করেছেন। টাউট মৌয়ের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ঢাকা বার অফিস সূত্র মতে, গত ১ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ২১ জন টাউটকে আটক করেছে টাউট উচ্ছেদ কমিটি। ২০১৬ সালে ৮ জন, ২০১৭ সালে ৩১ জন, ২০১৮ সালে ১৯ জন টাউট আটক করে এই কমিটি। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টও টাউট মুক্ত নয়। বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির তিন বছর পর লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হতে হয়।চলতি সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট বার ৭ জন টাউটকে আটক করেছে। এর মধ্যে তানজিমা তাসকিন আদুরীকে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকে শুনানি অবস্থায় আটক করে সুপ্রিম কোর্ট বারের কেস ম্যানেজমেন্ট কমিটি। গত বৃহস্পতিবার আটক করা হয়েছে চারজনকে। মোসাম্মত সাবিনা নামে এক নারী মুহুরিকে (ক্লার্ক) ‘আমি টাউট’ লেখা সাদা ব্যাজ পরিয়ে পুরো বার ভবন ঘুরানো হয়। এছাড়া আবুল বাশার ও মো. ইমদাদুল হক নামের দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর টাউট প্রমাণিত হওয়ায় উত্তেজিত আইনজীবীদের অনেকে মারধর করেছেন। সুবোধ চক্রবর্তী। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পরিচয়ে কাজ করছিলেন ঢাকার আদালত পাড়ায়। বিচার প্রার্থীদের কাছ থেকে মামলা নিয়ে অর্থ উপার্জন করেছেন প্রচুর। অবশেষে জানা যায় তিনি আইনজীবী নন। ভুয়া পরিচয়ে গত পাঁচ দশক আইন পেশায় রয়েছেন। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাঁড়াশি অভিযানে গত ২৯ এপ্রিল ধরা পড়ে তিনি এখন কারাগারে।ভুয়া আইনজীবীরা আইনের পরিভাষায় টাউট নামে পরিচিত। আইনের ডিগ্রি নেই অথচ আইনজীবী পরিচয় দিচ্ছেন এমন লোকদের আইনজীবীরা টাউট নামে ডাকেন। পুরান ঢাকার আদালত পাড়াকেন্দ্রিক ভুয়া আইনজীবী ও টাউটদের আনাগোনা বেশি। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ও ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত বিশাল এলাকা নিয়ে হওয়াতে এখানে টাউটরা সহজে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যান। কে আইনজীবী আর কে টাউট তা সনাক্ত করা কঠিন হলেও ঢাকা বার ‘টাউট উচ্ছেদ কমিটি’ নামে টাউটদের পাকড়াও করে আসছে। আদালত পাড়ায় গেলেই দেখা মেলে টাউটদের থেকে সতর্ক থাকতে নানা বিজ্ঞপ্তি। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নতুন ভবনের সামনে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি টানিয়েছে ঢাকা বার ও মহানগর বার। এতে বলা হয়েছে কেউ এলএলবি পাস বা ইন্টিমেশন জমা না দিয়ে আদালত অঙ্গনে পোশাক পরে ঘোরাফেরা করলে টাউট হিসিবে চিহ্নিত হবেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সমিতি। মহানগর বারের সাধারণ সম্পাদক টাউটদের থেকে সতর্ক থাকতে বিচার প্রার্থীদের প্রতি আহবান জানিয়ে আলাদা বিজ্ঞপ্তি টানিয়েছেন।