প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ও দূষণ রোধে এখনই উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে তা বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠলে প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণ শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি’র (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য মারাত্মক রকম ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ড্রেনে ফেলার কারণে তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো আবার জলাশয় ও নদীতে জমছে। যা মাছ খেয়ে ফেলার কারণে এটা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করছে। এর ফলে প্রাণীকূলের ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। আবর্জনা ব্যবস্থা চিন্তায় ফেলছে। এছাড়া আমাদের কৃষি জমিতে এসব প্লাস্টিক বর্জ্য জমার ফলে সেখানে ফসল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। প্লাস্টিক মাটিতে মিশে যাচ্ছে কিন্তু পঁচছে না। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে পলিথিন চাইলে এখনই বন্ধ করে দেয়া যায়। কারণ এর বিকল্প কাঁচামাল আমাদের মজুদ রয়েছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দ্রতই পলিথিন বন্ধ করে দিতে পারে। তবে অন্যান্য প্লাস্টিক বন্ধ করতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি আরো বলেন, এসব প্লাস্টিক উৎপাদনের ফলে আমাদের পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন সামগ্রী বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আবার চালু করে প্লাস্টিক থেকে নিজেদের ফিরিয়ে নিতে হবে। রুয়ান্ডার মত দেশ এক বছরের মধ্যে প্লাস্টিক বন্ধ করে দিতে পারলে আমাদের এখানে এটা কোনো কঠিন কিছু নয়। এছাড়া যেসব প্লাস্টিক রিসাইকেল করা যায় সেটাই কেবল রেখে অন্যসব প্লাস্টিক বন্ধ করে দিতে হবে। এটার জন্য সরকার একটি প্লাস্টিক রিসাইকেল উৎপাদন কারখানা করতে পারে। সেক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলো এসব রিসাইকেল প্লাস্টিক নির্দিষ্ট সময় জমা নিতে পারে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, প্লাস্টিক যে উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় সেটা হচ্ছে বিষাক্ত। প্লাস্টিকের মূল দানাটা মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে এটা উৎপাদনের পরে কোনো কোনো প্লাস্টিকে ক্ষতি কম আর বেশি হয়ে থাকে। তবে সব ধরণের প্লাস্টিকই পরিবেশ, জীববৈচিত্র এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। প্লাস্টিক বর্জ্য কখনো ধ্বংস হয় না। এটা চিরস্থায়ী। এটা কতভাবে যে আমাদের ক্ষতি করছে তার কোনো শেষ নেই। এর আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ড্রেন, জলাশয়, খালবিল ও নদীতে ব্লক তৈরি করে। এছাড়া জলাশয় ভরাট করে এক পর্যায়ে সেখানে যে ভবন করা হয় সেটাও থাকে মারাত্মক ঝুঁকিতে। তিনি বলেন, পলিথিন জাতীয় প্লাস্টিক চাইলেই যে কোনো সময় বন্ধ করে দেয়া যায়। সরকারের গাফলতির কারণে এটা বন্ধ হচ্ছে না। আমাদের পরিবেশ বাঁচাতে হলে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের দেশে বড় একটি আতংকের নাম। যেখানে আমেরিকা, চীন প্লাস্টিক বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সেখানে আমরা এর ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছি।