বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রকাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটানোর সুযোগ এসেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকার—দুই পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রকাঠামোয় কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনায় আন্তরিকতা লক্ষণীয়। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে, কীভাবে ও কখন এসব সংস্কার হবে, কিন্তু রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন যে প্রয়োজনীয়, তা নিয়ে কারও দ্বিধা নেই।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও এর সমমনা দলগুলো রাষ্ট্রসংস্কারের যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছে, তার অন্যতম একটি প্রস্তাব হলো দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রণয়ন।
বিএনপির এই প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদ্যমান সংসদীয় কাঠামোর পাশাপাশি উচ্চকক্ষে বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞদের আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দেওয়া হবে। এসব বিশেষজ্ঞের বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি একটি ভাষণে বলেন, ‘দেশে প্রথাগত রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, কিন্তু দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে চান—এমন অসংখ্য জ্ঞানী, গুণী শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী রয়েছেন; কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোয় তাঁদের পক্ষে সংসদে সদস্য হিসেবে অবদান রাখার সুযোগ নেই। তাঁদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও উচ্চকক্ষসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট–ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়’ (সেপ্টেম্বর ৪, দ্য ডেইলি স্টার)।
নির্বাচনের মাধ্যমে উচ্চকক্ষের সদস্যদের নির্বাচন করার পদ্ধতি যেসব দেশে রয়েছে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রতিটি থেকে ২ জন উচ্চকক্ষ অর্থাৎ সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন। সিনেটের মোট সদস্যসংখ্যা তাই ১০০। এখানে লক্ষ করার মতো বিষয়, জনসংখ্যা বা আয়তনে বড় বা ছোট হলেও সব অঙ্গরাজ্যের দুজন করেই সিনেটর থাকেন। ছোট অঙ্গরাজ্যকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর্জেন্টিনা, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াতেও নির্বাচনের মাধ্যমে উচ্চকক্ষের সদস্যদের নির্বাচনের রীতি রয়েছে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নয়, কিন্তু জনগণের নির্বাচিত অথবা রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরোক্ষ ভোটে উচ্চকক্ষের সদস্যদের নির্বাচন করে কয়েকটি দেশ। এই দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্স অন্যতম।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও অঙ্গরাজ্য ও ইউনিয়ন টেরিটরির আইনসভাগুলোর ভোটে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার ২৩৮ জন সদস্য ‘সিঙ্গেল ট্রান্সফারেবল’ ভোটে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিয়মে নির্বাচিত হন। তবে ভারতের রাষ্ট্রপতি শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সামাজিক সেবায় বিশেষ অবদান রাখা ১২ জনকে সদস্য নিয়োগ দিতে পারেন। সেই বিবেচনায় এটি একটি মিশ্র পদ্ধতি।