১৯৭১ এবং ২০২৪: সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের স্বরূপ সন্ধান

বিডি নিউজ ২৪ খান মো. রবিউল আলম প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১২

রাজনৈতিক বিবেচনায় ১৯৭১ এবং ২০২৪ এক নয়। দুটো আলাদা সত্তা, স্বতন্ত্র মহিমায় অস্তিত্বশীল। ১৯৭১ হলো বাংলাদেশের ভিত্তিভূমি আর ২০২৪ হলো চলার নতুন ‍নিশানা। একটির সঙ্গে আরেকটির তুলনা হয় না। কিন্তু অনেকে তুলনা করছেন। তুলনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। কারণ, তুলনা ছাড়া অনেকে বিষয় বা ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারি না আমরা।


প্রকৃত অর্থে, কোনো কিছুর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা হয় না। যোগাযোগের একটি থাম্ব রুল হলো– পৃথিবীর প্রতিটি প্রপঞ্চ আলাদা (এভরি ইউনিট ইজ ইউনিক ইন দ্য ওয়ার্ল্ড)। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় প্রতিজন মানুষের হাতের আঙ্গুলের ছাপ এক রকম নয়। সুতরাং একাত্তর এবং চব্বিশ এক নয়। দুটো ঘটনাকে পড়তে হবে স্বতন্ত্র ধারায়। টমাস উলফের একটি বই রয়েছে ‘ইউ কান্ট গো ইউর হোম এগেইন’ (কেউ দ্বিতীয়বার তার ঘরে যেতে পারে না)। তিনি আরও বলেছেন, আমরা কখনো এক নদীতে দু-বার গোসল করতে পারি না। নদীর স্রোত যেমন পরিবর্তনশীল ঠিক মানুষও তেমন পরিবর্তনশীল। ওই অর্থে প্রতিটি ঘটনা মুহূর্ত স্বতন্ত্র।


আমাদের স্বাধীনতা একটাই যা অর্জিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। অন্যান্য সকল আন্দোলন, সংগ্রাম ও অর্জন তার বর্ধিত সংস্করণ। কিন্তু কোনো অর্থেই তা ১৬ ডিসেম্বরের সঙ্গে তুলনাযোগ্য নয়। এ ধরনের ব্যাখ্যার শানে নুযুল নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। তার অর্থ এ নয় যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ছোট করে দেখা হচ্ছে। এটিও আমাদের অত্যন্ত উঁচুমানের অর্জন। বাঙালি তার অধিকারের প্রশ্নে যে নিয়ত জেগে আছে– এ অভ্যুত্থান তা প্রমাণ করে।


চব্বিশকে বলা হচ্ছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এবং নতুন বাংলাদেশ। আন্দোলনের শুরুর দিকে মনে হতো হয়তো এটা রূপকার্থে বলা হচ্ছে। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে তা বিশেষ অর্থারোপ করেই বলা হচ্ছে। একাত্তর-এর মহিমাকে কিছুটা ম্লান করে দেখার অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি যথেষ্ট গুরুত্ব ও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের মৌলআকাঙ্ক্ষা ছিল পাকিস্তানি শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে একটি নতুন দেশের ঠিকানা। একাত্তর হলো দেশের প্রশ্ন, সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন, মানচিত্রের প্রশ্ন। চব্বিশ হলো এক নিপীড়ক স্বৈরশাসকের উচ্ছেদের লড়াই।



পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, একাত্তরকে ছোট করতে না পারলে বা পেছনে ফেলতে না পারলে চব্বিশকে বড় করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১, ১৯৯০ এবং ২০২৪ স্বকীয় ধারায় বহমান। সাদৃশ্য রয়েছে, তবে বৈসাদৃশ্য কম নয়। দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট সাদৃশ্য ও বৈশাদৃশ্যের আলোকে চিন্তা করতে শিখিয়েছিলেন।


এসব রাজনৈতিক আন্দোলন বা সংগ্রামকে পড়ার জন্য যে নির্মোহ মনোভঙ্গি দরকার তার সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবকিছু ছোট-বড় বা তুলনাযোগ্য হয়ে উঠছে। সাত কোটি মানুষের আন্দোলন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন আঠারো কোটি মানুষের আন্দোলন সমান গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি একজন মানুষের আন্দোলন বা সংগ্রামও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ সমষ্টি হলো ব্যক্তির আধার। ব্যক্তি না বাঁচলে সমষ্টির বাঁচা সহজ নয়।


চরিত্রগতভাবে দুটো সংগ্রামের কেন্দ্রে রয়েছে মানুষের মুক্তির প্রশ্ন। দুটোই নিপীড়নমূলক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ মানুষের বাঁধ ভাঙ্গার গল্প। একটি নিপীড়নের বয়স ২৩ বছর আরেকটি বয়স ১৫। একাত্তর-এর শত্রু বাইরের আর চব্বিশ-এর শত্রু ঘরের। স্পিরিটের দিক থেকেও সাজুয্যতার জায়গা হলো একাত্তর মানে হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারে আকুতি আর চব্বিশ হলো বৈষম্যবিরোধী স্বপ্নকল্প।


পশ্চিমবাংলার ভাষাতাত্ত্বিক কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী তাদের বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ গ্রন্থে ‘দেশ’ শব্দের অর্থ নির্ধারণ করেছেন গন্তব্য বা নিশানা। ওই নিশানা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার সম্পন্ন বাংলাদেশ বিনির্মাণ। কিন্তু বিগত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ ওই নিশানায় হাঁটতে পারেনি। এ ব্যর্থতা রাজনৈতিক ব্যর্থতা। আমাদের সবার ব্যর্থতা। রাষ্ট্র জনগণের না হয়ে হয়ে উঠেছে শাসকগোষ্ঠী বা গুটিকয়েক মানুষের। রাষ্ট্রের যে বিমানবীকরণ সেটাই প্রধানতম সমস্যা। রাষ্ট্রকে মানবিক বা মানুষের উপযোগী করতে পারিনি। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি। দেশ বড় সময় সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়েছে। আবার আরেকটা বড় সময় নির্বাচিত বা পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের কৃষ্ণগহ্বরে পড়েছে। নিপীড়ন আর অধিকার বঞ্চনা এদেশের মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ চাচ্ছে মানবিক ও কার্যকরী রাষ্ট্র।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us