জনযুদ্ধের বিজয়ে তরুণদের অনন্য অবদান

কালের কণ্ঠ ড. সুলতান মাহমুদ রানা প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭

আজ মহান বিজয় দিবস। এই দিনে আমরা স্মরণ করতে চাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে। বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য এই দেশের সব ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জীবন বাজি রেখে অসংখ্য আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের এই বিজয় ধরা দিয়েছিল।

সাধারণ মানুষ কতগুলো সাধারণ স্বপ্ন ও প্রত্যাশার ভিত্তিতে নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিল। মুক্তিযুদ্ধের আগের ধারাবাহিক আন্দোলন ও ঐতিহাসিক ঘটনাধারা এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সবার মধ্যে একটি অলিখিত দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। এ কারণেই দেশের আনাচকানাচে, এই মাটির প্রতিটি অংশে প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদাররা। একাত্তরের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলো দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়েছিল, তারাই জানেন কত অশ্রু, রক্ত আর ঘামে ভরা ছিল সেই সব দিন।


পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ খ্যাত টিক্কা খান তার বাহিনীকে সদম্ভে বলেছিলেন, ‘এ দেশের মানুষের দরকার নেই আমার। দরকার কেবল মাটি।’ টিক্কার বিশ্বস্ত সেনাপতি রাও ফরমান আলী ও জাহানজেব আবরারের নেতৃত্বে পাকিস্তানিরা এই বাংলাদেশে এমন নির্মম গণহত্যা চালিয়েছিল, যেমনটা ইতিহাসে দেখা যায় না। রাও ফরমান আলী তার দিনলিপিতে ‘পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ মাটিকে রক্তে লাল’ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে বর্বর পাকিস্তানিরা সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে চেষ্টার ত্রুটি করেনি। তবু এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বীর বাঙালি ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য।


বাঙালিদের মহান স্বাধীনতার ইতিহাস দীর্ঘ। যেভাবে ১৯৪৭ সালে ১৪ ও ১৫ আগস্ট  ব্রিটিশ শাসন থেকে পাকিস্তান ও ভারত মুক্তি লাভ করেছিল কিংবা আলাদা হয়েছিল, সেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতাসংগ্রামের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।




দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে উপমহাদেশের দুই প্রান্তে অবস্থিত দেড় হাজার মাইল ব্যবধানের দুই অঞ্চলের জোড়া লাগানো পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ কায়েমি স্বার্থবাদী আমলাচক্রের ও উচ্চাভিলাষী সামরিক জান্তার ধর্মীয় লেবাসে অগণতান্ত্রিক শাসন ও শোষণের প্রথম ও প্রত্যক্ষ আক্রমণ আসে বাংলা ভাষার ওপর। তখন থেকেই আন্দোলন শুরু।


১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর জল, স্থল ও আকাশ পথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে। এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের সহযোগিতায় হানাদারগোষ্ঠী দেশের মেধাবী, শ্রেষ্ঠ সন্তান তথা বুদ্ধিজীবীদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেওয়ার এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোনো নজির বিশ্বে নেই।


১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১টার দিকে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের হেডকোয়ার্টারে চলে আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট  জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজি, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মেজর  জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ। যৌথ বাহিনীর পক্ষে ছিলেন মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব, মেজর জেনারেল গন্ধর্ভ সিং নাগরা ও কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার কাদের সিদ্দিকী। সিদ্ধান্ত হয়, আত্মসমর্পণের দলিলে সই করবেন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার ও যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজি। বৈঠকে ঠিক হয়, আত্মসমর্পণ করলেও তখনই অস্ত্র সমর্পণ করবে না পাকিস্তানি বাহিনী। তখন মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব বলেন, ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় যুদ্ধবন্দি থাকবে ঠিক, কিন্তু ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে তারা থাকবে সশস্ত্র।


ডিসেম্বর শব্দটি শুনলে হৃদয়ের গহিনে ত্যাগ, সফলতা ও বিজয়ের সংমিশ্রিত হিমশীতল


হৃত্স্পন্দন অনুভূত হয়। যারা কখনো পরাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করেনি, তারা কখনো স্বাধীনতা কিংবা বিজয়কে অনুভব করতে পারবে না। বিজয়ের ৫৩ বছরেও আমাদের প্রাপ্তি থেকে অপ্রাপ্তি ও হতাশার পাল্লাটা বেশ ভারী। দীর্ঘ সময় অতিক্রম করেও জনগণের শতভাগ মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে ব্যর্থ। আর আমরা প্রতিবছরই এই মাসটিকে বিজয়ের মাস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করি এবং সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু উদযাপনটি কেবল ভক্তি-শ্রদ্ধার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে আমরা লক্ষচ্যুত হব, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হয়ে যাবে অবহেলিত। আজকের প্রজন্মকে জানাতে হবে কেন আমরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে থাকতে পারিনি। কোন স্বপ্ন সামনে রেখে এ দেশের দামাল ছেলেরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এবং সে স্বপ্নের প্রকৃত বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে। আমাদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ফারাক কতখানি।


আর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রাষ্ট্র আয়ত্তাধীন সেবা খাতগুলোর অবস্থা খুব নাজুক, যা আমাদের বিজয়ের আনন্দকে ভূলুণ্ঠিত করে। আমাদের সমসাময়িক স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত, স্বনির্ভর, সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র না গঠন করতে পারলে আবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরাধীনতার অগ্নিকুণ্ডে পতিত হতে হবে। তাই বিজয়ের মাসে তরুণদের দৃঢ় সংকল্প হওয়া উচিত রাষ্ট্র ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুন্দর, সমৃদ্ধিশালী, স্বনির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত, ভিনদেশি প্রভাবমুক্ত স্বদেশ গঠন করা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us