সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতনে অনেকেই খুশি হয়েছেন। পতনের ধাঁচের সঙ্গে আমাদের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের মিল আছে। ফলে একধরনের উল্লাস উল্লাস ভাব; কিন্তু আদতে এর পরিণতি কী হচ্ছে, সেদিকে নজর ফেরানো দরকার। হতে পারে, এর তাৎপর্য বোঝার পর উল্লাস উল্লাস ভাব দূর হয়ে যাবে।
বিষয়টি যেন হঠাৎ করেই ঘটে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগে থেকেই বলে আসছেন, তিনি ক্ষমতায় বসামাত্র রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। কোনো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে যেভাবে অর্থসহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, সেই পাটাতনে ট্রাম্পের এই অঙ্গীকার যে হালে ভালোই পানি পেয়েছিল, নির্বাচনের ফলাফল থেকেই তা পরিষ্কার। ঘটনাচক্রে মনে হচ্ছে, সিরিয়ার বাশার আল আসাদের পতনের সঙ্গে ট্রাম্পের সেই অঙ্গীকারের যোগ আছে।
বাংলাদেশের মতো প্রান্তিক দেশে বসে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের খবরাখবর পাওয়া সম্ভব নয়—সেই সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেই বেশ কিছু ঘটনার দিকে আলো ফেলে যোগসূত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করাই এই লেখার উদ্দেশ্য।
ট্রাম্প ভোটে জেতার কয়েক সপ্তাহ পর ইলন মাস্ক হঠাৎ ইরানের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। স্বাভাবিকভাবেই এই আলোচনার বিষয়বস্তু বাইরে প্রকাশিত হয়নি।
বিশ্বের সেরা কৌশলগত জেনারেল খ্যাত ইরানের কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার জন্য ইরান ট্রাম্পের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল; কিন্তু সিরিয়ার প্রশ্নে রাশিয়ার পিছু হটা এবং ইলন মাস্কের সঙ্গে ইরানের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ এবং মাত্র ১২ দিনের হামলায় আসাদের ক্ষমতা ছেড়ে পলায়ন যদি একসূত্রে নিয়ে আসা যায়, তাহলে বলতে হবে, সিরিয়া প্রশ্নে রাশিয়াকে পিছু হটতে বাধ্য করেছেন ট্রাম্প এবং সেটি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির শর্তে।
অবশ্যই ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে কমেডিয়ান থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া জেলেনস্কিকে। ক্ষতি হলো সিরিয়ার। ইরান কী পেয়েছে, তা অবশ্য জানা যায়নি। এখন ইরান কী করবে, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
এবার দেখা যাক, কাদের হাতে সিরিয়ার বাশার আল আসাদের পতন হলো। যারা এই কাণ্ড ঘটাল—তারা তুরস্ক, ইসরায়েল, মার্কিন–সমর্থিত জঙ্গি বাহিনী। এরা কিন্তু এত দিন সশস্ত্র অবস্থায় সিরিয়াতেই ছিল, ইসরায়েল সীমান্তের কয়েক কিলোমিটার দূরেই।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে নেতানিয়াহু গাজায় মুহুর্মুহু বিমান হামলায় ৫০ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ হত্যা করলেও এই সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরায়েলের দিকে একটিও গুলি ছুড়েছে, তেমন খবর পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে যেসব মানুষ স্বৈরাচার পতনের আনন্দে উদ্বেলিত, তাঁদের বেশির ভাগই জানেন না, এরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক।
অনেকেই ওসামা বিন লাদেন ও আল–কায়েদার সমর্থনেও হাততালি দিয়েছিলেন, আইএসের প্রতিও সমর্থন জানিয়েছিলেন; কিন্তু এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী সব সময় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও জায়নবাদীদের পক্ষে কাজ করেছে। এদের তৈরি, লালনপালন, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, অর্থনৈতিক সহায়তা—সবকিছুর পেছনেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল আছে বলে ঘটনাচক্রে বোঝা যায়।