এখন থেকে ৫৪ বছর আগে বাবা হাফিজ আল-আসাদ সিরিয়ার ক্ষমতা দখল করে যে রাজবংশ গড়ে তুলেছিলেন, ছেলে বাশার আল-আসাদের হাতে সেই উত্তরাধিকার ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। অবশেষে বিদ্রোহীরা সেই রাজবংশকে উৎখাত করেছে।
হ্যাঁ, এটি ঠিক, বাশারের ইরানি ও রুশ মিত্রদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকাটা তাঁর পতনের পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে। তবে বাশারের নিজের ব্যর্থতাগুলোই মূলত তাঁর পতনের পথ তৈরি করেছে।
সিরিয়া দীর্ঘদিন একটি পরনির্ভরশীল অর্থনীতি এবং কোনো ধরনের বিরুদ্ধতা বরদাশত না করা রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে আটকা পড়ে ছিল। এ অবস্থায় বাশার বড় কোনো সংস্কারের হিম্মত দেখাতে পারেননি।
আদতে বাশার কখনোই সিরিয়ার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। বাশারের বাবা হাফিজ আল–আসাদ বড় ছেলে (বাশারের বড় ভাই) বাসেলকে তাঁর উত্তরসূরি ঠিক করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৪ সালে বাসেলের অকালমৃত্যু হয়। ওই সময় বাশার লন্ডনে চোখের ডাক্তারি পড়ছিলেন। বড় ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুর পর তাঁকে পড়াশোনা ফেলে রেখে দেশে ফিরতে হয়েছিল।
২০০০ সালে হাফিজের মৃত্যু হয়। তিনি বাশারকে একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল রাষ্ট্রের দায়িত্ব দিয়ে যান। সিরিয়া তখন কোনো একঘরে রাষ্ট্র ছিল না। সিরিয়া তখন আর আগের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে গুলি করে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান নামানোর মতো কাজ কাজ করত না।
১৯৯১ সালে ইরাক কুয়েতে হামলা চালানোর পর বাশারের বাবা হাফিজ কুয়েত থেকে ইরাককে উৎখাত করার জন্য সেখানে সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর সুবাদে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় একজন অংশীদার হয়ে উঠেছিলেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।
হাফিজ পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু বাশার দীর্ঘদিন পশ্চিমে কাটানোর কারণে পশ্চিমা সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করেছিলেন। এ কারণে অনেকে মনে করেছিলেন, তিনি ক্ষমতা নেওয়ার পর সিরিয়ার শাসক দল বাথ পার্টিকে (যা ১৯৬৩ সাল থেকে ক্ষমতায় ছিল) সংস্কার করে পশ্চিমা ধারায় আরও উদারপন্থী করতে পারবেন।
শুরুতে বাশার সংস্কারমূলক কাজ শুরুও করেছিলেন। তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়েছিলেন এবং বুদ্ধিজীবীদের তুলনামূলকভাবে মুক্ত আলোচনা চালানোর সুযোগ দিয়েছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ বাশার সেই পথ থেকে সরে আসেন। তিনি ভিন্নমত দমন করতে শুরু করেন এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতে শুরু করেন।
জনগণের অসন্তোষকে সামাল দেওয়ার জন্য বাশার বিদেশি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার করতে থাকেন। এ ছাড়া তিনি বিদেশি জিহাদিদের সিরিয়ায় ঢুকতে দেন, যাতে তারা ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।