কিছুদিন ধরে যা ঘটছে তাতে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া, অভ্যুত্থানে আশাবাদী হয়ে ওঠা মানুষদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাদের অনুচ্চারিত প্রশ্নকে ভাষায় রূপ দিলে শোনা যাবে তারা বলছেন, হচ্ছেটা কী দেশে? ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মানুষ মুক্তি চেয়েছে। পুরনো অধ্যায় শেষ করে নতুনের পথে যাত্রা করার জন্যই তো মানুষ পরিবর্তন চায়। পুরনো পরিত্যক্ত হয়েছে কিন্তু নতুন এখনো গড়ে ওঠেনি, স্থায়িত্ব পায়নি এমন সময়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতা থাকতে পারে কিন্তু অভ্যুত্থানের পর অরাজকতা কারোই কাম্য নয়। এতে অভ্যুত্থানের আসল উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়, লক্ষ্য হারিয়ে যায়। কয়েকটি ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না।
বিচারালয় সব নাগরিকের শেষ আশ্রয়। যেখানে ন্যায়বিচারের স্বার্থে অভিযুক্ত, অপরাধী, অন্যায়কারীকে যেমন উপস্থিত হতে হয়, তেমনি বিচারপ্রার্থীও উপস্থিত থাকেন। অন্যায়কারী এবং অন্যায়ের শিকার দুজন এক জায়গায় উপস্থিত হলে উত্তেজনা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যখন মানুষ বিচারপ্রার্থী হয় তখন ব্যক্তিগত উত্তেজনার পরিবর্তে আইনের ব্যাখ্যা করে অপরাধের মাত্রা ও শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। রায় ঘোষণার আগে বিচারালয়ে সবার নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার গণতান্ত্রিক ও নৈতিকভাবে স্বীকৃত। এটা না থাকলে তো বিচারের আগেই রায় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও আদালতের পরিবেশ রক্ষায় আইনজীবীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিছুদিন ধরে আইনজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। যা দৃষ্টান্ত হিসেবে খারাপ এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রশ্ন ও পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা তৈরি করবে। নিম্ন আদালতে অভিযুক্তদের ওপর হামলা, জুতা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। কিন্তু উচ্চ আদালতে এ ধরনের ঘটনা বিচারালয়ের সংস্কৃতি নিয়ে উদ্বেগের জন্ম দেয়। যেমন গত ২৭ নভেম্বর ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের অভিযোগে হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতিকে বেঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন একদল আইনজীবী। তখন দুই বিচারপতি বেঞ্চ থেকে নেমে যান। এ সময় তাদের প্রতি ডিম নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটে।