বাংলাদেশিদের কাছে পাকিস্তানের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র সম্ভবত জিন্নাহ ও ইমরান খান। জিন্নাহর মৃত্যুর ৭৫ বছর পার হলো। অন্যদিকে ইমরান খান কারাগারে আছেন প্রায় দেড় বছর হলো। সম্প্রতি এই দুজন একটা ঐতিহাসিক ‘মোড়ে’ এসে মিলিত হয়েছেন বলা যায়।
জিন্নাহকে নিয়ে ইসলামাবাদে যে অ্যাভিনিউ আছে, তার সুন্দর মোড়টাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ডি-চক। এটা ‘ডেমোক্রেসি-চওকে’র সংক্ষিপ্ত রূপ। সম্প্রতি একে ‘গাজা চওক’ও বলা শুরু হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এই এলাকায়। পাকিস্তানে রাজনীতির শক্তি পরীক্ষারও জায়গা এটা। অনেকটা ঢাকার পুরোনো দিনের পল্টনের মতো।
একাধিক নামে পরিচিত এই চওকেই গত সপ্তাহে শক্তি পরীক্ষা হলো ইমরানের সমর্থকদের সঙ্গে শরিফ ও ভুট্টো বংশের। যেহেতু শেষের দুই বংশকে মদদ দিচ্ছেন সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেলরা, সে কারণে এই লড়াইকে ইমরান বনাম সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধও বলা যায়। ইমরানের দলই এই শক্তি পরীক্ষার ডাক দিলেও ব্যারিকেড পেরোতে পারেনি তারা। তবে ডি-চক দখলের এই যুদ্ধের ফলাফলই পাকিস্তানের রাজনীতির ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে কি না, সেটা এখনই বলা যায় না।
কৌতূহল উদ্দীপক হলো, দেশটির মিডিয়া জগতের অনেকে রসিকতা করে বলছেন, চলমান ঘটনাবলি হচ্ছে পাকিস্তানে বাংলাদেশচর্চার চেষ্টা। এ রকম বলার কারণ, পিটিআই বনাম সরকারের চলমান যুদ্ধের মেঠো ধরনে বাংলাদেশের জুলাই অধ্যায়ের কলাকৌশল দেখা গেছে। সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়ে সেটা করছে।
প্রশ্ন হলো, পিটিআইয়ের নেতৃত্বে পাকিস্তানের মানুষ কি আসলেই বাংলাদেশের মতো একটা গণ–অভ্যুত্থানের দিকে হাঁটছে? নাকি এটা কাপ্তান ইমরানের অনুসারীদের একক মামলা এবং আপাতত তারা আহত বাঘের মতো ফুঁসছে কেবল?
বুশরা বিবির চ্যালেঞ্জ
এই লেখা তৈরির সময়ও ইসলামবাদের বাতাসে কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজ ছিল। মানুষ ঠেকাতে ডি-চকের দুই দিকের রাস্তায় বড় বড় লোহার কনটেইনার বসিয়ে দেয়াল বানায় সরকার। মূল মিছিল ডি-চকে আসার আগেই পিটিআইয়ের দুজন মারা গেছেন। কয়েকজন রক্ষীও মারা গেছেন সংঘাতে। মিছিলের আগুয়ান অংশকে ঠেকাতে কনটেইনারের ওপর বসানো হয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। ইসলামাবাদের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই। অফিস-আদালতের পরিবেশও থমকে ছিল।
চলতি বিবাদের প্রকাশ্য কারণ, সরকার পিটিআইকে ডি-চকে সমাবেশ করতে দিতে চায় না। পিটিআইয়ের কাজকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দিয়েছে তারা। ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবি নিজে মিছিলে ছিলেন। তিনি বলছেন, ইমরানকে মুক্ত না করে মিছিল-সমাবেশ কিছু থামবে না। সম্ভবত ‘সিরিজে’র বাকি ম্যাচগুলো সামনে হবে। ডি-চক থেকে পিছু হটে গেলেও আবার অন্য কোথাও শক্তি প্রদর্শনে নামবে ইমরানের সমর্থকেরা।