উপমহাদেশের সবগুলো দেশের মধ্যে যদি সম্প্রীতির একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক জরিপ করা হতো, তবে আমি চ্যালেঞ্জ করে অগ্রিম ফলাফল বলতে পারি যে, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ মার্ক পাবে। ১৯৪৭ সনে উপমহাদেশ বিভক্ত হয় ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র। পূর্ব পাকিস্তান তথা স্বাধীন পরবর্তীতে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। গুগলের তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার ১০ বছরের একটি গ্রাফ নিচে দেয়া হলো পরবর্তীতে বিশ্লেষণের জন্য :
১৯৯১ সনে ১০.৫১%, ২০০১ সনে ৯.৬০%, ২০১১ সনে ৮.৫৪% এবং ২০২২ সনে ৭.৯৫% হিন্দু জনসংখ্যা ছিল।
এই তথ্যে পরিষ্কার হয় যে প্রতি ১০ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা গড়ে ১% হারে কমে। এই জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ বের করার চেষ্টা করছি।
(১) দেশান্তর: আমাদের বাংলাদেশ হতে ১-১.৫ কোটি বাংলাদেশী আমেরিকা, ক্যানাডা, ইউরোপ, মালয়েশিয়ায় লেখাপড়া করতে গিয়ে বা চাকুরি নিয়ে বিভিন্ন কারণে উপরোক্ত দেশগুলেতে মাইগ্রেট করে। এছাড়াও সরকারি চাকুরি, ব্যাবসায়ী ও সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ উন্নত জীবনযাপন এবং সামাজিক নিরাপত্তার কারণে বৈধ অবৈধ অর্থসহ উপরোক্ত দেশগুলো ছাড়াও দুবাই, সিঙ্গাপুরে মাইগ্রেশন করা একটি নিয়মিত ব্যাপার। উল্লেখ্য যে, এসব কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও মাইগ্রেশন হয়।
(২) ভারতীয় টোপ : বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ যারা গরীব তারা কিন্তু ভারতে মাইগ্রেট করছে ভারতীয় সরকারের টোপ দেবার কারণে। ভারত বাংলাদেশী হিন্দুদের জন্য যেভাবে নাগরিকত্বের টোপ ফেলে রাখে, মুসলমানদের জন্য তার বিপরীত অনুপ্রেরণা দেয়।
(৩) পরিবেশ বিপর্যয়: ভারতের বাংলাদেশের প্রতি পানি বৈষম্য নীতির কারণে বাংলাদেশে বিশাল পরিবেশ বিপর্যয় হওয়াতে বাংলাদেশী হিন্দুরা ভারতে চলে যেতে আগ্রহ দেখায়।
হিন্দু কার্ড কি?
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ এর ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকার একটি প্রচ্ছদ উল্লেখ করছি।
" What's the future of Hindus in Bangladesh as Sheikh Hasina's Party Woos? "
বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে হাসিনার আওয়ামী লীগকে সেকুলার দল বলা হয়েছে। ২০২৪ এর রাজনীতির তামাশার নির্বাচনে বাংলাদেশে হিন্দুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা প্রকাশ করে। বাংলাদেশের হিন্দুদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ সকল দলই হিন্দু কার্ড ব্যবহার করেছে। ১ কোটি হিন্দু জনসংখ্যার মধ্যে ৫০-৬০% ভোটার ধরা হলে সকল দলের জন্য বিশাল একটি ফ্যাক্টর। এই দর্শন ভারতে বিজেপি কংগ্রেস বসাবহার করেছে, করে এবং করবে।
প্রশ্ন হলো এই কার্ড তথা সংখ্যালঘুদেরকে ট্রাম্প কার্ড হিসাবে ব্যাবহার কি রাষ্ট্রের জন্য উপকারী? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা ও জানা বাংলাদেশের রাজনীতি তথা জনগণ বিশেষ করে সনাতন ভাই বোনদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশটা সকলের। সকল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও ভিন্ন মতাবলম্বী আস্তিক, নাস্তিক, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী ও ধর্মের মানুষের দেশ আমাদের বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে আওয়ামী লীগের ভোটের রাজনীতি ও হিন্দু কার্ড :
১/১১ পরবর্তী ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু তথ্য উপস্থাপন করছি।
২০২১ সনে কুমিল্লা, চাঁদপুর চৌমুহনী এলাকায় হিন্দুদের উপর ব্যাপক হামলা, ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেশী বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এসব হামলা ভাঙ্গচুরের ঘটনায় ততকালীন শাসকদলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।
আওয়ামী লীগ সরকার যতবার বিপদগ্রস্ত হয়েছে, ততোবারই তারা হবে হিন্দু মাইনরিটির ঘাড়ে চেপে বিপদমুক্ত হবার জন্য বাংলাদেশে জঙ্গি কার্ড গেম খেলেছে। জঙ্গি কার্ড গেম খেলে আওয়ামী লীগ পশ্চিমে ও ভারতকে বোঝাতে চেয়েছে যে, তারা ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত থাকবে।