আলুর দাম আরও বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা ছিলই। হালে এর দামও নতুন করে বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির প্রবণতা রোধের চেষ্টা যে নেই, তা নয়। অন্তর্বর্তী সরকার কর-শুল্ক কমিয়ে এগুলোর আমদানি বাড়াতে চাইছে ঘাটতি মেটাতে। তবে বাজারে এর প্রভাব নেই বললেই চলে।
টানা অনেক বছর আলু আমদানি করতে হয়নি আমাদের। এটা বরং ছিল রপ্তানিপণ্য। বিগত সরকার আমলের শেষদিক থেকে আবার করতে হচ্ছে আলু আমদানি। ডিম আমদানিও করতে হয় তখন। বর্তমান সরকার আমলেও মাঝে ডিমের দাম অনেক বাড়ায় নতুন করে শুরু করতে হয় আমদানি। এক্ষেত্রেও কমানো হয় শুল্ক। ডিমের দাম কমে আগের জায়গায় এসেছে এর মধ্যে। কিন্তু বেড়েছে অন্য দুই নিত্যব্যবহার্য পণ্য আলু ও পেঁয়াজের দাম। করাচি থেকে সরাসরি যে জাহাজ এসেছিল, তাতেও কিছু কনটেইনারে এসেছে আলু ও পেঁয়াজ। স্থলবন্দর দিয়েও আমদানি অব্যাহত। সেক্ষেত্রে আমদানি হচ্ছে ভারত থেকে। এ আমদানিটা আমাদের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক। তবে ভারতেও পেঁয়াজ, আলুর মতো কৃষিপণ্যের দাম সম্প্রতি বেড়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বেড়েছে মাত্র কদিনে। এ প্রবণতা সেদেশটির বাজারেও উপস্থিত। ওখানে অতিবৃষ্টিতে পেঁয়াজ, আলুর মতো ফসলের চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। ভারতে পেঁয়াজের দাম এ মুহূর্তে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ কমাস আগেই তারা পণ্যটি রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল। এতে খুশি হয়েছিলাম আমরা। এখন মন খারাপ হচ্ছে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায়। ওখানে আলুর দামও বাড়ছে। এ অবস্থায় অন্য কোনো উৎস থেকে আলু এনে বাজার শান্ত করা যাবে কি?
দেশের হিমাগারগুলোয় আলুর মজুত এখন কম। সময়মতো নতুন আলু বাজারে এসে গেলে অবশ্য তেমন সমস্যা হতো না। এখানেও অতিবৃষ্টিতে আলু ও পেঁয়াজের ‘আগাম ফলন’ বিঘ্নিত। অপেক্ষাকৃত উঁচু অঞ্চলে যেটুকু আবাদ হয়েছিল, সেখান থেকে কিছু আলু এলেও তা খুবই অপর্যাপ্ত। দামও স্বভাবতই বেশি। নতুন আলুর কেজি কোথাও কোথাও ৪০০ টাকা বলে মাঝে খবর হয়েছিল। সেটা ঠিক হলেও নিতান্ত বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কোনো কোনো অঞ্চলে কেশুর ও মিষ্টি আলুর কেজিপ্রতি দাম ৫০০ টাকা বলেও খবর মিলছে। নবান্নের উপকরণ হিসাবে এগুলোর এক ধরনের চাহিদা রয়েছে বৈকি। দাম অনেক বলে এর বিক্রিও নিশ্চয় কম। এটা অর্থনীতির মূলধারার বাইরের ঘটনাও বটে। তবে এ খবর উদ্বেগজনক যে, বিভিন্ন অঞ্চলে বীজ আলুর সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং এর দামও অনেক বেড়েছে। বীজ আলু রান্নাঘরে চলে যাওয়ায় এর ঘাটতি বেড়েছে বলে খবর মিলছিল। খাদ্যপণ্য হিসাবে সংরক্ষিত আলুর দাম হঠাৎ বাড়লে বীজ আলু রান্নাঘরে চলে আসতে পারে বৈকি। এখন আবার খাদ্যপণ্য হিসাবে রাখা আলুকে বীজ হিসাবে ব্যবহারের প্রবণতা বাড়লে বাজারে এর সরবরাহ কমবে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এসব দিকে হয়তো যথোচিত দৃষ্টি দিতে পারেননি। এটা তো ঠিক, একটা নজিরবিহীন অস্থির সময়ে তারা দায়িত্ব নিয়েছিলেন। স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রশাসনেও চলছে অস্থিরতা। এখন যেভাবেই হোক, বীজ আলুর সংকট হতে দেওয়া যাবে না। তাহলে পরবর্তী উৎপাদন বিঘ্নিত হয়ে আলুর দাম আরও বাড়বে।
পেঁয়াজের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার দিকেও দিতে হবে দৃষ্টি। এক্ষেত্রে বীজ সংকটের কথা শোনা না গেলেও উপকরণের কোনোরকম ঘাটতি যেন না হয়। আলু ও পেঁয়াজে ভালো দাম মিলছে বলে চাষিদের উৎসাহ থাকবে এগুলোর উৎপাদনে। অন্য কৃষিপণ্যের বদলে তারা এগুলোর আবাদে বেশি মনোযোগী হতে পারেন। এতে আবার অতি উৎপাদনের সংকট সৃষ্টি হয়ে দাম কমে যাবে কি না, সে প্রশ্নও তোলা যেতে পারে। তবে সাম্প্রতিককালে আলুর মতো পণ্য আমদানি করতে হওয়ায় মনে হচ্ছে পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। গেল বছর আলু উৎপাদনের তথ্য নিয়ে কৃষি বিভাগ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। কৃষি বিভাগ বরাবরই চায় উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় সাফল্য দেখাতে। সরকারও উন্নয়নের বয়ান বেশি বেশি প্রচার করায় ওই কাজে তাদের উৎসাহ বেড়েছিল। এতে আলুর ক্ষেত্রে ঘটে যায় সর্বনাশ। উৎপাদনের বড় ঘাটতি আড়াল হওয়ায় এর দাম বাড়ে অনেক। এখন আসলে চলছে সেটারই এক ধরনের জের। বাজারে যাওয়া খুব কমসংখ্যক মানুষই অবশ্য এসব খতিয়ে দেখতে চাইবে। তারা সাদা চোখে দেখবে, উচ্চস্তরে থাকা আলুর দাম নতুন করে বেড়েছে! এর সঙ্গে আবার চালের দাম তুলনা করে দেখা হয় সাধারণত। দেখা যাচ্ছে, আলুর বর্ধিত দাম মানসম্মত চালের দামকেও গেছে ছাড়িয়ে।