ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুরের সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত মো. মঞ্জুরুল ইসলাম। তার জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৬ জুন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর ৯ মাস। নোয়াখালীর খেপুপাড়ার সাব-রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৭ সালের ২ এপ্রিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় চার বছর এক মাস বয়স ছিল তার। এত অল্প বয়সেও তারা মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এই দুজনের মতো মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ২৭ জন সাব-রেজিস্ট্রার এখনো কর্মরত। মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে কর্মস্থলে তাদের রয়েছে ব্যাপক আধিপত্য। প্রভাবশালী এসব কর্মকর্তা পদায়ন বাগিয়েছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে।
২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে ১৯০ জন মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীকে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগের লক্ষ্যে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে এই ১৯০ কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৩০ জনকে প্রকৃত মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে তৎকালীন আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে এই যাচাই-বাছাই কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রায় সবাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা সবাই সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের উদ্যোগে। নিয়োগের তালিকা অনুযায়ী ১৯৬৭, ১৯৬৬, ১৯৬৫ সালে জন্মতারিখ আছে এমন সংখ্যা ছিল অনেক। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের বয়স ছিল ৪ থেকে ৬ বছর। জালিয়াতির মাধ্যমে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া নিয়ে তখন নিবন্ধন অধিদপ্তরসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার বা মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হলেও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়; আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারত সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষা করে এই সরকার।