দেশে সংস্কার মৌসুম চলছে। বিগত সরকার পতনের আগে ও পরে দেশ সংস্কার নিয়ে অনেকবারই কলামে লিখেছি। আগের লেখাগুলো পতিত সরকার গুরুত্ব দেয়নি। পরে তিন-চারটি লেখায় বেশকিছু সংস্কারভাবনা দলনিরপেক্ষভাবে তুলে ধরেছি। একই কথা অবশ্য বারবার লিখতেও খারাপ লাগে। যদিও একটাই লক্ষ্য, লক্ষ্যভ্রষ্ট দেশের কীভাবে কল্যাণ করা যায়। বর্তমানে এ দেশের আইন ও নিয়মনীতিতে সংস্কারের তোড়জোড় দেখে আরও কিছু কথা লেখার প্রয়াস অব্যাহত রাখছি। এগুলোকে বারোয়ারি বয়ান বলা যায়। জানি না, এসব কথা হালে পানি পাবে কিনা। একটা কথা আগে বলে রাখি: বিগত ১৬ বছরে রাজনীতিকদের সীমাহীন দুষ্কর্মে মনের গভীরে ঘৃণায় দগদগে ঘা সৃষ্টি হয়েছে, যা মলম-মালিশে নিশ্চয়ই যাবে না। সদ্য পতিত রাজনীতিকরা নিজেরা লুটেপুটে খেয়েছে, আবার সাধারণ জনগোষ্ঠীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে নষ্ট করে রেখে গেছে, যা এত সহজে মেরামতযোগ্য নয়। এতে নীতি-আদর্শহীন সামাজিক টাউটদের পোয়াবারো হয়েছে। এখনো সমাজের পরতে পরতে তাদের অস্তিত্ব বিদ্যমান। সেসব চোরচোট্টা ও বিবেকবোধরহিতরা ধর্মের কাহিনি শুনবে না, বরং জীবনযাত্রাকে অতিষ্ঠ করে তুলবে, দেশকে আরও ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে।
সাধারণভাবে অতি বুদ্ধিমান এদের দুভাবে ভাগ করা যায়-মানুষ ও অমানুষ। মনুষ্যত্বের গুণাবলি যাদের মধ্যে বেশি, তাদের মানুষ বলা যায়। অমানুষ দেখতে মানুষের মতো হলেও তারা বর্বর দলভুক্ত। আভিধানিক অর্থে অমানুষ বলতে যাদের মনুষ্যত্ববর্জিত, পশুতুল্য মানুষ বোঝায়; আমার দৃষ্টিতে এদের ‘নরাধম’ বলা যায়। এরা মানুষ নামের কলঙ্ক, স্বদেশবিরোধী, পরিচ্ছন্দানুবর্তী। ভাবতে কষ্ট লাগে, ১৬ বছর যারা আধিপত্যবাদী প্রভুর সহায়তায় গুরু-চেলা মিলে বিরোধী দলগুলো নির্মূলের উদ্দেশ্যে যথেচ্ছ দমন-পীড়ন-নির্যাতন, গুম-হত্যা, ডাহা মিথ্যাচারিতা করল, হাজার হাজার ছাত্র-জনতার বুকে নির্দ্বিধায় গুলি চালাল, সাধারণ মানুষের অর্থকড়ি, ব্যাংক লুটপাট, বেপরোয়া আত্মসাৎ ও সর্বস্ব বিদেশে পাচার করে দেশবাসীকে আকণ্ঠ ঋণের ভারে ডুবিয়ে কোষাগার চেটেপুটে বিদেশে পালাল; তাদের মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা ও অপরাবোধ কাজ করে না। অমানুষের কোন্ নিম্নপর্যায়ে পৌঁছলে তারা নিজেদের এখনো মানুষ বলে দাবি করতে পারে? এদের সংখ্যা এ দেশে নেহাত কম নয়। এজন্যই দেশ মেরামত এত সহজসাধ্য ব্যাপার নয়।