দেশের ছাত্র রাজনীতির নৈরাজ্য দেখে আমি এবং আমরা বহুবারই বলেছি এই লেজুড়বৃত্তি আমাদের শিক্ষাকে ধ্বংস করে দেবে, দিচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার বা সামরিক, আধা-সামরিক ও কর্তৃত্ববাদি ভোটবিহীন নির্বাচনের অবৈধ সরকার, খুনি ও স্বৈরাচারি সরকার মসনদের নেশাটাকেই প্রধান ভেবেছে। আর আমাদের ছাত্রলীগই বৈষম্যবিরোধীদের উৎখাতে যথেষ্ট বলে যে নিষ্ঠুরতার তরঙ্গ ছড়িয়ে আবু সাঈদ, মুগ্ধদের হত্যা করতে কসুর করেনি, সেই রাজনীতির অবসানই আসলে দেশের বৃহত্তর কল্যাণ ও উন্নয়নের স্বপ্নকে লালন করতে পারে। এটাই আমার অভিমত।
আমরা তাই ক্যাম্পাসে ছাত্রদের হাতে কোনো রকম রাজনৈতিক পোস্টার চাই না। আমরা বলতে দলভুক্ত নয় এমন রাজনীতি সচেতন মানুষের কথা বলছি। আমরা লেজুড়মুক্ত চিন্তাশীল, মানবিকবোধ সম্পন্ন মানুষ,যারা দেশের জন্য কল্যাণকেই প্রধান করতে চায়, এবং উৎসাহী। এবং আমরা চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও ক্যাম্পাসের ভেতরে জাতীয় রাজনীতির প্রবহমান কালচারকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন- এটাও আমরা চাই না। তারা যদি রাজনৈতিকভাবে দেশের জন্য কোনো কাজ করতে চান, তাহলে শিক্ষার ক্ষেত্র ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে তা করতে পারেন।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান আমাদের সেই শিক্ষাটা দিচ্ছে। তারা রাজনীতি সচেতন, কিন্তু রাজনৈতিক দলভুক্ত নয়। যে রাজনীতি দেশের শিক্ষিত সমাজের জন্যও উপকারী ও বৈষম্যমুক্ত, সর্বক্ষেত্রে সাম্যময় কর্মযজ্ঞ চালাতে শেখায়, আমরা সেই দলের মানুষ।
যে রাজনীতি কেবল দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে পরিপর্ণ, সেটা কোনো রাজনীতি নয়, সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠী, যারা অন্যের অধিকার হরণে পিছপা হয় না, সেটা গণআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারে না এবং তা গণতান্ত্রিক বোধেরও নয়। যে রাজনীতি ছাত্রদের হাতিয়ার করে তোলে, যে রাজনীতি ছাত্রদের সন্ত্রাসী হতে সহযোগ দেয়, সেটা কোনো রাজনীতির কোনো তরিকায় পড়ে না।
এসব কারণেই আমি এবং আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনীতির বিরোধী। তারা ছাত্র-জীবনে কেবল কারিকুলামভুক্ত জ্ঞান চর্চাই করবে না, তারা পড়াশোনো করবে পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়ে, যাতে এই সংগ্রামশীল ও স্বার্থ-উন্মাদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপরিভাগ ও তল-ভাগ সম্পর্কে জানতে পারে। এই জানা ও শেখাটাই একজন জ্ঞানান্বেষণকারীর জন্য পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজন।
ক্যাম্পাস হোক সেই জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্র। এসব কথা বলার পেছনে আছে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের পোস্টার সাঁটা নিয়ে সাধারণ ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষর্থীদের প্রতিবাদের সহযোগ দেবার জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের গেটে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের পোস্টার লাগিয়েছে বিএনপির অধীন ছাত্রদল কর্মীরা। গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতি যে ছাত্রদের কেবল জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র, এটা এখনো ছাত্রদল বুঝতে পারেনি। তাদের বাবা-মা লেখাপড়া শেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী হবার জন্য পাঠাননি। তাহলে, তারা পড়াশোনো বাদ দিয়ে জাতীয় রাজনীতিকে কেন ক্যাম্পাসের ভেতরের পরিবেশে নিয়ে আসবেন?