অন্তর্বঙ্গ-বহির্বঙ্গ

যুগান্তর পবিত্র সরকার প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪

কয়েক বছর আগে ভারতে এ কথাটা খুব চালু হয়েছিল। তার কারণ, অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো সংগতভাবেই ভেবেছিলেন, বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতির মধ্যে কিছু বিচ্ছেদ তৈরি হয়েছে। হয়তো দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে থাকা সব সংস্কৃতির মধ্যেই প্রাতিবেশিক কারণে এটা অনিবার্য, কিন্তু এটা নিয়ে ক্ষোভ ও অভিযোগ কোথাও কোথাও ধূমায়িত হয়ে ওঠে। আমাদের বাঙালিদের সামগ্রিক অস্তিত্বের পক্ষে সেটা সুখদায়ক নয়। অথচ এর কোনো সহজ সমাধানও নেই।


এখন বাঙালি বলতে যদি আমরা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বুঝি, অর্থাৎ বাংলার যে কোনো উপভাষা আর প্রমিত বাংলা ব্যবহারকারী মানুষ (প্রমিত বাংলাতেও নানা জায়গায় একটু-আধটু তফাত হতেই পারে, তা নিয়ে শুচিবায়ুগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই), আর যাদের লেখাপড়া করা অংশ হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের কিছু খবর রাখেন, হয়তো তার আধুনিক সময়ের নমুনাগুলোই পড়েন বইপত্রে খবরের কাগজে, তাহলে সে তো এক ব্যাপক জনগোষ্ঠী। এখন পুঁথিগত বাংলা উপভাষার সংখ্যাও হয়তো বেড়ে গেছে, বাংলার আমেরিকান উপভাষা, জাপানি উপভাষা, দিল্লি বা উত্তর ভারতীয় উপভাষাও হয়তো তৈরি হয়েছে, কারণ অন্য ভাষার সংস্পর্শে এলে যে কোনো ভাষা অল্প-স্বল্প বদলাতে থাকে।


বাঙালির সংখ্যা তো এখন উইকিপিডিয়ার হিসাব অনুসারে মূলভাষী ২৩.৭ কোটি, আর দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা বলে প্রায় ৪.১ কোটি। বাংলাদেশ ও ভারতে তার সিংহভাগ বাস করলেও এখন সারা বিশ্বেই তারা ছড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ আর ভারতেও বাস করার চরিত্র দু’ধরনের। এক. মূলনিবাসী বা ভূমিপুত্র হিসাবে, যেমন-ভারতে ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরা ও আসামে। বাংলাদেশে বেশিরভাগই ভূমিপুত্রকন্যা। আর দ্বিতীয়ত অভিবাসী হিসাবে। অভিবাসীর অনেকে উদ্বাস্তু ছিলেন, তাদের অনেকে মধ্যপ্রদেশ-ওড়িশার দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে, আন্দামানে, উত্তরাখণ্ডে ও অন্যত্র বসবাস গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের এবং (ভারতের) বাঙালি অভিবাসীরা তো ব্রিটেনে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ও কানাডায়, ইউরোপের অন্যান্য দেশে, মধ্যপ্রাচ্যে, জাপানে, এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছেন, হয়তো কোরিয়া, ফিলিপিনস, মালয়েশিয়া-আরও কত কত দেশে ছড়িয়ে আছেন, সব খবরও আমাদের হাতে নেই। কলকাতায় তৈরি বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াড বলে একটি সংগঠন ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর ১৫৭টি দেশের বাঙালিদের সঙ্গে যোগসূত্র রাখে। এ থেকেই বোঝা যায়, আসল প্রশ্ন হলো, বাঙালিরা পৃথিবীর কোথায় নেই! এর মধ্যে অবৈধ প্রবেশকারীরাও নিশ্চয় আছে, যারা অনিশ্চিত আর আশঙ্কার জীবনযাপন করছে, সুখ ও নিশ্চয়তার স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গে।



আমার এ নিবন্ধে আমি সবার সমস্যার কথা বলার ক্ষমতা রাখি না, সে দুরাশাও পোষণ করি না। কিন্তু ওই ‘অন্তর’ আর ‘বাহির’-এর কথা দুটা। এ বিশ্বব্যাপ্ত বাঙালিরা সবাই যে বাঙালি থাকতে চায় বা পারে, তা না-ও হতে পারে। অবস্থাগতিকে অনেকে অন্য দেশের সংস্কৃতিতে মিশে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু আবার অনেকে বোধহয় এখনো কোনো একটা বাংলার ‘উৎস’ বা ‘কেন্দ্রে’র সঙ্গে জুড়ে থাকতে চায়। যদি খুব ভুল না ভাবি, ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের প্রবাসী বাঙালিরা চায়, কলকাতার সঙ্গে জুড়ে থাকতে, বাংলাদেশের প্রবাসী বাঙালিরা ঢাকার সঙ্গে। বলা যেত পারে এ দুটা, দুই বাংলার মানসিক কেন্দ্র বা রাজধানী। ঐতিহাসিক কারণে কলকাতার গুরুত্ব একটু বেশি, কারণ বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের অনেকটা, ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বেশ কিছু অর্জন, সবটা না হলেও বাংলার পশ্চিম ভাগ সৃষ্টিও বহন করেছে। তার কথা হয়তো পরে আসবে।


কিন্তু বঙ্গভাষী অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে, এ ডিজিটাল যুগেও যেহেতু কলকাতার যোগাযোগ দুর্বল এবং সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে, যে কোনো রাজধানীর মতোই কলকাতা খানিকটা আত্মবৃত্তবদ্ধ, সেহেতু শিলচর, আগরতলা, দিল্লি বা পোর্ট ব্লেয়ার কলকাতার প্রতি অভিমান পোষণ করে যে কলকাতা তাদের যথেষ্ট খবর রাখে না বা স্বীকৃতি দেয় না, কথাটা ভুল নয়। ওই সব অঞ্চলে অনেক লেখক ও কবি এসেছেন, যারা রীতিমতো শক্তিশালী এবং সব বাঙালির কাছে পৌঁছে যাওয়ার যোগ্য, কিন্তু কলকাতার কাগজগুলোর বা প্রকাশকদের অবহেলাতে তারা তাদের প্রার্থিত সম্মান পাননি। আমি জানি না, ঢাকা সম্বন্ধে এমন অভিমান ঢাকার বাইরের জেলা শহরগুলোর আছে কিনা। এটা দেখেছি যে, একুশে বইমেলার আগে বিদেশ থেকে প্রচুর বাংলাদেশি লেখক চলে আসেন এবং ঢাকা থেকে তাদের গ্রন্থ প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। অর্থাৎ তারা জানেন যে, বাংলায় লিখলে বাংলাদেশের পাঠককুল তাদের লক্ষ্য হবেন এবং তাদের প্রকাশনার কেন্দ্র তাই হবে ঢাকা। প্রবাসী, বিশেষ করে ভারতের বাইরেকার পশ্চিমবঙ্গ উৎসের বা অন্য জায়গার বাঙালিদের মধ্যে যেহেতু এমন সৃষ্টির জোয়ার দেখি না, সেহেতু তাদের কলকাতায় এসে বই প্রকাশ করার সেই ঋতুসম্ভব তৎপরতাও ততটা দেখি না। নিশ্চয় কিছুটা আছে, আমি তো সব খবর জানতে পারি না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us