বোতলের পানি এখন দেশের কোটি কোটি মানুষের ভরসা। বাড়িতে পরিবারের জন্য ব্যবহার ছাড়াও হোটেল-রেস্তোরাঁ, উৎসব, সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান—সর্বত্র ব্যবহৃত হয় বোতলের পানি। দিনে দিনে এই পানি হয়ে উঠেছে দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ভোক্তাস্বার্থের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই নির্ভরশীলতার সুযোগ নিয়ে কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির তুলনায় অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। অনুসন্ধান বলছে, বাজার দখলে রাখতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের বড় মুনাফা দেওয়া চড়া দামের বড় কারণ।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দেশে বোতলে পানির ব্যবহার শুরু হয়। শুরুর দিকে এই পানি কিনে খাওয়া প্রায় বিলাসিতা মনে হলেও গত সাড়ে তিন দশকে জীবনযাপনের প্রায় সাধারণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে এটি। ক্রমেই বেড়েছে বাজার। প্রতিযোগিতা কমিশনের পর্যালোচনা অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে এই পানি বিক্রি হয়েছিল ৫৫ কোটি ২৪ লাখ ৫৯ হাজার লিটারের বেশি। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত (যে পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গেছে) বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি লিটার।
একলাফে বড় মূল্যবৃদ্ধি
শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে আধা লিটার পানির বোতলের দাম একবারে ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা নির্ধারণ করে। গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিযোগিতা কমিশনের তৈরি করা ‘বোতলজাত পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিবিষয়ক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে’ এ তথ্য রয়েছে। এতে কোম্পানিভেদে মুনাফা বেড়ে যায় ৭১ দশমিক ২৩ থেকে ৪২০ শতাংশ পর্যন্ত। অনেক বেড়ে যায় ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতাদের লাভের অংশও। ফলে ৫০০ মিলির এক বোতল পানির উৎপাদন খরচ ৬-৭ টাকা হলেও ক্রেতাকে তা কিনতে হচ্ছে ২০ টাকায়। অনেকের অভিযোগ, ৭-৮টি কোম্পানি বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের মুনাফা অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ডলারের দাম ও কাঁচামালের আমদানি খরচ বৃদ্ধিকে দায়ী করেছিল কোম্পানিগুলো। তবে বিশ্লেষণ করে সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশন দেখতে পায়, সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে নামমাত্র।