গত জুলাই ও আগস্ট মাস দুটি ছিল উত্তাল আন্দোলনের। মানুষ ফুঁসে উঠেছে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। ছাত্রদের বিক্ষোভ শুরু জুলাইয়ের প্রথম তারিখ থেকেই। কোটা সংস্কার আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী হয়ে উঠলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তীব্র আন্দোলনে ভয়ের সংস্কৃতি অতিক্রম করে মানুষের ত্যাগ-আত্মত্যাগে পতন ঘটে জাতির বুকে চেপে থাকা ফ্যাসিবাদী সরকারের। এরপর আমরা কী দেখছি? বিজয়ের আনন্দ ক্রমেই বিষাদে পরিণত হওয়ার উপক্রম। নিচের বর্ণনায় তারই আভাস পাচ্ছি বটে।
এর মধ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজে দুবার বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটেছে; একটিতে একজন ছাত্রের মৃত্যুকে ঘিরে একজন চিকিৎসক অপমানিত ও প্রহৃত হন; অপরটিতে ঢাকার এক মহল্লায় দুপক্ষের সশস্ত্র সংঘর্ষে এক পক্ষের একজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে অপরপক্ষ চাপাতি হাতে ইমার্জেন্সিতে এসে আহত পক্ষের ওপর চড়াও হয়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন, কিন্তু এখন হামলার শিকার হচ্ছেন। এর প্রতিবাদে পরের দিন দেশের সব সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা একযোগে দিনভর কর্মবিরতি পালন করেছেন। পরে কর্মবিরতি স্থগিত করে তারা ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন চার দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য। সমাজে পেশাগত যত সম্পর্ক আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে মানবিক হওয়ার কথা চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক; সেটাতে যখন ভাঙন দেখা দেয় তখন বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, মনুষ্যত্বই বিপদাপন্ন হয়েছে। মনুষ্যত্ব-বিনষ্টকারী পুঁজিবাদী বাস্তবতাটা ভাঙতে হলে সামাজিক বিপ্লবের প্রয়োজন, এই সত্যটা আমরা যেন না ভুলি।
ইতিমধ্যে তো চতুর্দিকে দেখা দিয়েছে একের পর এক দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলনের নতুন তরঙ্গপ্রবাহ। দেখা যাচ্ছে, দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য নানা ধরনের বিক্ষোভ, প্রতিবাদ-সমাবেশ এবং ঘেরাও। দাবিগুলো চাপা ছিল, প্রকাশের পথ পেয়ে মুখর হয়ে উঠেছে। এবং প্রত্যেকটি দাবির ভেতরেই রয়েছে বৈষম্যের খবর। প্যাডেল-চালানো রিকশাওয়ালারা মিছিল করেছেন ব্যাটারি-চালিত রিকশাচালকদের বিরুদ্ধে। দুপক্ষই বঞ্চিত; কিন্তু এক পক্ষ নিজেদের অধিকতর বঞ্চিত মনে করে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।