বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে দেশটির রাষ্ট্রনৈতিক অবস্থানে বিশাল পরিবর্তন আসে। বছরটি ছিল ১৯৭৫। এই বছরের আগস্টের ১৫ তারিখ এক সেনা অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সম্পর্কে বর্ণনা করতে হলে বলা যায়, ১৯৭৫-এর আগস্ট মাসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পটপরিবর্তন হয়।
আগস্টের ১৫ তারিখে পটপরিবর্তনের নেতৃত্ব দেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। বাংলাদেশের রেডিও থেকে মেজর ডালিম ঘোষণা করেছিলেন, খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে এবং রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছেন। ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বিশাল জনপ্রিয়তার ঐতিহ্যবহনকারী নেতাকে সেনাবাহিনীর একটি অংশ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে হত্যা করলেও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। মনে হয়েছে, সাধারণ মানুষ এ রক্তাক্ত পরিণতিতে অসন্তুষ্ট নয়। ’৭৫-এর পটপরিবর্তনের ফলে দেশের রাজনীতির মোড় পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা অনেক সময় দেখি, নদী তার খাত পরিবর্তন করে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে নদীতে বান ডাকে। যখন নদীর বান ডাকা স্তিমিত হয়ে আসে, তখন নদীর এক পাড় ভাঙে এবং অন্য পাড়ে পলি জমা হয়ে নতুন ভূমি সৃষ্টি হয়। এ কারণেই হয়তো ভাবুক কবি গান রচনা করেছিলেন, নদীর একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে/এই তো নদীর খেলা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের রাজনীতিও নদীর মতোই।