৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল না

প্রথম আলো মহিউদ্দিন আহমদ প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৪৩

আমাদের এই অঞ্চল হাজার বছরের বেশি ছিল সামন্তপ্রভুদের অধীন। তাঁরা ছিলেন বিদেশি। তাঁরা ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন এ দেশের লোকদের সাহায্য নিয়ে। সামন্তপ্রভুরা ছিলেন ঈশ্বরতুল্য। তাঁদের মহিমান্বিত করে কাব্য করতেন একদল পোষা দরবারি কবি। সেখানে প্রভুদের বন্দনা করে বলা হতো—‘মহামহিম, আপনি না থাকলে চন্দ্র-সূর্য উঠবে না, রাজ্য যাবে রসাতলে।’


তারপর বুড়িগঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে বারবার। রাজ্য হয়েছে রাষ্ট্র। সামন্তপ্রভুর ফরমানের জায়গা নিয়েছে কাগুজে সংবিধান। যেহেতু রাজা-প্রজার সম্পর্কে পরিবর্তন আসেনি, সম্পর্কটা যেহেতু শাসক আর শাসিতের, তাই ‘সংবিধান’কে আমরা ‘শাসনতন্ত্র’ বলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এত পরিবর্তনের পরও রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা রাজার মতোই ঈশ্বরতুল্য থেকে গেছেন। তাঁদের পূজা চলে। তাঁদের নিয়ে লেখা হয় পদাবলি—‘তিনি না জন্মালে এ দেশ হতো না, তিনি না থাকলে ঘোর অন্ধকার’ ইত্যাদি।


রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে দাবা বা পাশা খেলার একটা মিল আছে। ক্ষমতার রাজনীতি একটা পাশার বোর্ড। এখানে কেউ খেলে, কেউ হয় ঘুঁটি। ঘুঁটি চালতে ভুল হলেই রাজার খেলা শেষ। এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। পাশার দান উল্টে গিয়েছিল কোটালের হাতে। দেখা গেল, ঈশ্বরতুল্য রাজা না থাকলেও রাজ্য এক দিনের জন্যও থেমে থাকে না।


১৫ আগস্ট ভোরে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিলেন। যে নির্মম শাসন তিনি চালিয়েছিলেন সাড়ে তিন বছর, তার অবসান হলো নির্মমতার মধ্য দিয়েই। ক্ষমতার চূড়ায় এলেন তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বন্ধু খন্দকার মোশতাক আহমদ। মুজিবের দলে তিনিই ছিলেন শেখ মুজিবের একমাত্র সুহৃদ। সম্পর্ক ছিল তুই-তুমি। বাকি সবাই ছিলেন কর্মী বা অনুগত ভক্ত।



১৫ আগস্টের পালাবদলের পর ইতিহাসের বয়ান পাল্টে গেল। কারও কাছে শেখ মুজিব হয়ে গেলেন জুলিয়াস সিজার আর মোশতাক হলেন ব্রুটাস। আবার কারও কাছে মোশতাক হলেন জিন্দাপীর, অভ্যুত্থানকারীরা হলেন সূর্যসন্তান, আর মুজিব হলেন স্বৈরাচারী।


১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের মূল অনুঘটক ছিল সামরিক বাহিনীর একটি অংশ। এটি সমর্থন করেছিল সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব এবং বাকশাল তথা আওয়ামী লীগ ও তার শরিকেরা ছাড়া আর সব রাজনৈতিক দল। মুজিবের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে নেমেছিল। জনরোষের ভয়ে এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কেউ পথে নামেনি। কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন, কেউ পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন, অন্যরা গেছেন আত্মগোপনে।


অভ্যুত্থানকারীরা সামরিক বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙেছিলেন। এ নিয়ে সামরিক বাহিনীতে অস্বস্তি ছিল। বাহিনীর অনেকেই এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং তাঁরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করতেন। কতিপয় মেজর-ক্যাপ্টেন বঙ্গভবনে বসে ছড়ি ঘোরাবে, এটা তাঁরা সহ্য করতে পারছিলেন না। তা ছাড়া মোশতাক সামরিক আইন জারি করলেও দেশে সামরিক শাসনের আসর পড়েনি। সামরিক আইন প্রশাসক বলে কিছু ছিল না। জাতীয় সংসদ বহাল ছিল। এটা ছিল একটা অদ্ভুত ব্যবস্থা।


ঠিক এই পরিস্থিতিতে ৩ নভেম্বর ভোরে হলো আরেকটি সেনা অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর একটি বিক্ষুব্ধ অংশের সঙ্গে বিমানবাহিনীর একটি অংশও যোগ দিয়েছিল। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পর আগস্ট অভ্যুত্থানের কারিগরেরা একটা সমঝোতার মাধ্যমে দেশ ছেড়ে চলে যান। কোনো রক্তপাত হয়নি।


সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করে নতুন সেনাপ্রধান হলেন খালেদ মোশাররফ। ঢাকায় অবস্থানরত সেনাবাহিনীর ৪৬ ব্রিগেড তখন চালকের আসনে, যাঁদের উপেক্ষা করে কিংবা না জানিয়ে আগস্ট অভ্যুত্থান হয়েছিল। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানকারীরা সরকারের ‘সিভিলিয়ান’ মুখোশটা আর রাখলেন না। জারি হলো পুরোপুরি সেনাশাসন। খন্দকার মোশতাককে হটিয়ে বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক করা হলো। বিলুপ্ত হলো জাতীয় সংসদ। ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনী ক্ষমতার বারান্দায় ঢুকে পড়েছিল। ৩ নভেম্বরের পর তারা ঢুকল একেবারে অন্দরমহলে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us