ছাত্রতরুণের হাতে বোনা বায়ান্নো থেকে চব্বিশ

বিডি নিউজ ২৪ আলমগীর খান প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২২:১৭

নকশিকাঁথার মতই অনেক শ্রম, ঘাম, রাতজাগা সংগ্রাম ও শিল্পিত মমতায় গড়া বাংলাদেশের গণমানুষের ইতিহাস। এ ইতিহাস গর্বের ও একান্তই বাংলার। আর এর শিল্পীতুল্য কারিগর বাংলাদেশের ছাত্রতরুণ জনতা। পৃথিবীর আর কোনো জাতির ইতিহাসে ছাত্রতরুণের ভূমিকা এতটা মুখ্য কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখার বিষয়। আজকের লেখাটি কয়েক প্রজন্ম ধরে বোনা সেই নকশি কাঁথারই গল্প— বায়ান্নো থেকে চব্বিশে ছাত্রতরুণের নেতৃত্বে গড়া ইতিহাসের এক বিবর্তনধারা।


বিবর্তনের একটি বৈশ্বিক রূপ রয়েছে। বিবর্তনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পুরনো। এর প্রয়োগ অনেক শাস্ত্রে ও দর্শনে রয়েছে এবং আরও বেশি হওয়া সম্ভব। এ হচ্ছে গতির এক বিমূর্ত রূপ। এগিয়ে যাওয়া, চলমানতা। ধরা যাক বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের কথা। তার আবিষ্কার তারও পূর্ববর্তীদের অর্জন ব্যতীত সম্ভব হতো না। তাই তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, “আমি অন্যদের চেয়ে বেশি দূর দেখেছি কারণ আমি বিরাটকায় মানুষদের কাঁধের ওপর দাঁড়িয়েছি।”


আলবার্ট আইনস্টাইন, চার্লস ডারউইন, কার্ল মার্ক্সসহ সবাই তাই— অন্যান্য বিরাটকায় মানুষদের কাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পেয়েছেন। বর্তমান প্রজন্মকে আবার দেখতে হয় তাদের কাঁধে দাঁড়িয়ে। কারণ এভাবেই জ্ঞান, সমাজ ও অন্য সবই ধীর পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় বিকশিত হতে থাকে।


ইতিহাসও এই নিয়ম মেনেই চলে। ইতিহাসে আন্দোলন-সংগ্রামেরও আছে এক অনিবার্য ধারাবাহিকতা— একটি সুতায় গাঁথা মালার মত। এমন নয় যে, ইতিহাসে সুতা কখনো কাটে না, কাটে বৈকি, কারণ সে তো যন্ত্র নয়। তবু বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখলে ফুটে ওঠে এক অনিবার্য ধরন বা প্যাটার্ন।


বাংলাদেশের মানুষের জীবনসংগ্রামেও আছে তেমনই এক প্যাটার্ন যা ইতিহাসের দীর্ঘ পথচলার দিকে দৃষ্টিপাত করলে স্পষ্ট হয়। তেমনি আছে এদেশের তরুণ ও ছাত্রসমাজের চোখধাঁধানো সব আন্দোলন-সংগ্রামের মাঝেও। বাংলাদেশের ইতিহসের এক বড় অংশ জুড়েই তো তরুণ ও ছাত্ররা— ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত।



১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিভূ হয়ে ওঠে ছাত্ররা। জাতীয় বৈষম্য ও সংকটের বিরহী সুর প্রথম বেজে ওঠে ছাত্রসমাজের মনে, ঝংকার দিয়ে কেঁপে ওঠে দ্রোহের তন্ত্রী। এই ঝংকার শোনা গেছে ভাষা আন্দোলন থেকে সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী অভ্যুত্থান পর্যন্ত। প্রায় শত বছরের এই সাফল্যের গৌরবগাথায় লেখা হয়েছে জানা-অজানা বহু আত্মত্যাগী বীরের নাম। আর পতন হয়েছে ৩ জন শক্তিশালী একনায়কের— ঊনসত্তরে আইয়ূব খান, নব্বইয়ে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও চব্বিশে শেখ হাসিনা।


এই পতনসমূহ তৈরি করেছে পরবর্তী কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্র। যদিও সেসব পরিবর্তন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে পারেনি, অনেকক্ষেত্রেই নতুন সংকট তৈরি করেছে যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এগিয়েছে সার্বিক মুক্তির লক্ষ্য। আইয়ূব খানের পতন নতুন যুগের দরজায় কড়া নাড়ে যা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় পরিণতি পায়। এরশাদের পতন নিয়ে আসে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ। দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতায় তা আবার নতুন স্বৈরতন্ত্র সৃষ্টি করে। হাসিনার পতন আরেক নতুন যুগের কড়া নাড়ছে, যদিও নতুন সংকটের ইঙ্গিতসহ।


বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ছাত্রগণআন্দোলন চলাকালে বিশ্বখ্যাত মার্ক্সবাদী লেখক তারিক আলী সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ সরকারে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সাহসী ছাত্রদের সঙ্গে শতভাগ একাত্মতা জানাচ্ছি। এ অঞ্চলে বাঙালি ছাত্রদের রয়েছে এক সমৃদ্ধ অতীত। তারা তাদের ওপর এক নতুন ভাষা (উর্দু) চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং সেই ১৯৪৮-এ জিন্নাহর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে শহীদ হয়েছে। সে পরিকল্পনা বাতিল হয় ও ঢাকায় রয়েছে সেসব শহীদের স্মৃতিতে তৈরি মিনার। ১৯৬৮-৬৯ সালে এই ছাত্ররা পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রদের সঙ্গে মিলে স্বৈরতান্ত্রিক শাসককে উৎখাত করে। ... আজ স্বৈরতান্ত্রিক গোত্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন সেই ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা। আশা করছি তারা জিতবে।”


১৯৪৮ থেকে ২০২৪ একসূত্রে গাঁথা বাংলাদেশের ছাত্রগণআন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস। শতবছরের এই রাজনৈতিক ঘটনাবলির যোগসূত্র বোঝাটা খুবই জরুরি। আন্দোলন-সংগ্রামগুলো এই বিনিসুতার মালায় গাঁথা একেকটি পুঁতির দানার মত। কিন্তু এই মালার দুই প্রান্ত খোলা। ইতিহাস এমনই এক বহমান নদী যার দুই প্রান্ত কখনো এক হবার নয়, শুধুই চলমানতা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us